বাণিজ্য ঘাটতি বাড়ছে
অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে পণ্য ও সেবা বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ বেড়েছে, যার প্রভাব পড়েছে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে।
জুলাই-নভেম্বর সময়ে পণ্য বাণিজ্যে সামগ্রিক ঘাটতির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৩৮৮ কোটি ডলার। এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে প্রায় ২৩ শতাংশ বেশি।
এই পাঁচ মাসে সেবা বাণিজ্যে ঘাটতি বেড়েছে ৩৩ শতাংশের বেশি। বাংলাদেশ ব্যাংক বুধবার বৈদেশিক লেনদেনের হালনাগাদ এই তথ্য প্রকাশ করেছে।
অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলছেন, পদ্মা সেতু, মেট্রোরেলসহ বড় প্রকল্পের কাজ শুরু হওয়ায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি বেড়ে গেছে। এ কারণেই বাণিজ্য ঘাটতি বেড়েছে।
তবে বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের দাম কম থাকায় সামগ্রিক আমদানি খরচ ‘স্বস্তিদায়ক’ পর্যায়ে রয়েছে বলেই তার মত।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে বাণিজ্য ঘাটতির পরিমাণ ছিল ৩১৫ কোটি ৮০ লাখ (৩.১৫ বিলিয়ন) ডলার।
আর চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে সব মিলিয়ে এক হাজার ৭২২ কোটি ৬০ লাখ (১৭.২২ বিলিয়ন) ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, যা গত অর্থবছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি।
অন্যদিকে জুলাই-নভেম্বর সময়ে বিভিন্ন পণ্য রপ্তানি থেকে বাংলাদেশ এক হাজার ৩৩৪ কোটি ৬০ লাখ (১৩.৩৪ বিলিয়ন) ডলার আয় করেছে, যা গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৬ দশমিক ১৫ শতাংশ বেশি।
এ হিসাবে সামগ্রিক পণ্য বাণজ্যে ঘাটতি দাঁড়াচ্ছে ৩৮৮ কোটি ডলার।
অন্যদিকে ২০১৫-১৬ অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে সেবা বাণিজ্যে ঘাটতির পরিমাণ ছিল ১০৯ কোটি ৩০ লাখ ডলার। চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে তা বেড়ে ১৪৬ কোটি ডলার হয়েছে।
মূলত বিমা, ভ্রমণ ইত্যাদি খাতের আয়-ব্যয় হিসাব করে সেবা খাতের বাণিজ্য ঘাটতি পরিমাপ করা হয়।
বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাবের ভারসাম্যে (ব্যালেন্স অব পেমেন্ট) বেশ কিছু দিন ধরে বড় উদ্বৃত্ত থাকলেও সেপ্টেম্বর শেষে তা ঘাটতিতে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি ২০১৬-১৭ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বৈদেশিক লেনদেনের চলতি হিসাব ভারসাম্যে ৭২ কোটি ৬০ লাখ ডলারের ঘাটতি (ঋণাত্মক) দেখা দিয়েছে।
গত অর্থবছরের একই সময়ে উদ্বৃত্ত ছিল ১৩৩ কোটি ৬০ লাখ ডলার। আর বাংলাদেশ ৩৭০ কোটি ৬০ লাখ (৩.৭ বিলিয়ন) ডলারের বড় উদ্বৃত্ত নিয়ে ২০১৫-১৬ অর্থবছর শেষ করেছিল।
নিয়মিত আমদানি-রপ্তানিসহ অন্যান্য আয়-ব্যয় চলতি হিসাবের অন্তর্ভুক্ত। এই হিসাবে উদ্বৃত্ত থাকার অর্থ হল, নিয়মিত লেনদেনে দেশকে কোনো ঋণ করতে হচ্ছে না। আর ঘাটতি থাকলে সরকারকে ঋণ নিয়ে তা পূরণ করতে হয়।
বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক জায়েদ বখত বলেন, বিশ্ববাজারে জ্বালানি তেল ও খাদ্যপণ্যের দাম কম থাকায় গত দুই-আড়াই বছরে আমদানি খাতেও ব্যয় কম ছিল।
“সে কারণে লেনদেন ভারসাম্যে বড় উদ্বৃত্ত ছিল। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে আমদানি ব্যয় বেশ বাড়ায় ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঘাটতি দেখা যাচ্ছে।”
আমদানি ব্যয় বাড়ার কারণ বিশ্লেষণ করতে গিয়ে উত্তরা ব্যাংকের চেয়ারম্যান জায়েদ বখত বলেন, “কয়েকটি বড় প্রকল্পের কাজ চলায় প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম আমদানি বেড়েছে। সেই সঙ্গে শিল্পের কাঁচামাল আর মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানিও বাড়ছে।”
বর্তমান পরিস্থিতিতে ‘বিচলিত হওয়ার কিছু নেই’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, “শিল্পের জন্য প্রয়োজনীয় ক্যাপিটাল মেশিনারিজ ও কাঁচামাল আমদানি বাড়া মানে দেশে বিনিয়োগ বাড়া, অর্থনীতিতে গতি সঞ্চার হওয়া। সেটাই হচ্ছে।”
বাংলাদেশ ব্যাংকের হাতে ৩২ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিদেশি মুদ্রার রিজার্ভ থাকায় আমদানি ব্যয় বাড়লেও সমস্যা হবে না বলে মনে করছেন জায়েদ বখত।
এফডিআই বেড়েছে ১০ শতাংশ
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে ৭১ কোটি ৯০ লাখ ডলারের সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ (নিট) দেশে এসেছে। এই অংক গত বছরের একই সময়ের চেয়ে ৯ দশমিক ৬ শতাংশ বেশি।
গত অর্থবছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে নিট বিদেশি বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৬৫ কোটি ৬০ লাখ ডলার।
এ অর্থবছর প্রথম পাঁচ মাসে মাসে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে ১১ কোটি ৮০ লাখ ডলারের নিট বিদেশি বিনিয়োগ এসেছে, যা গত বছরের একই সময়ে ৩০ লাখ ডলার ঋণাত্মক ছিল।
অর্থাৎ গত বছরের জুলাই-নভেম্বর সময়ে বাংলাদেশের পুঁজিবাজারে যে পরিমাণ বিদেশি বিনিয়োগ এসেছিল তার চেয়ে ৩০ লাখ ডলার বেশি চলে গিয়েছিল।
বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে মোট যে সরাসরি বিদেশি বিনিয়োগ আসে তা থেকে বিনিয়োগকারী প্রতিষ্ঠান মুনাফার অর্থ দেশে নিয়ে যাওয়ার পর যেটা অবশিষ্ট থাকে সেটাকেই নিট এফডিআই বলা হয়ে থাকে।
মন্তব্য চালু নেই