বাড়ছে সেক্সটিং প্রবণতা

ইন্টারনেটের দয়ার সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সকলেরই বেশ স্ট্রং৷ আর এর ফলেই দেশে দেশে ছড়িয়েছে সেক্সটিং৷ বেশিরভাগ উন্নত দেশের অধিকারংশ কিশোর কিশোরীরাই সেক্সটিংয়ে আসক্ত৷ আর এর ফলে তাদের মধ্যে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপণের ইচ্ছেও প্রবল পরিমাণে বেড়ে চলেছে৷ সেক্সটিং বর্তমানে ভাবিয়ে তুলেছে আমেরিকা-ইউরোপের মত দেশগুলিকেও৷ ভয় গড়ে উঠছে অভিভাবক থেকে শুরু করে সমাজবিদদের মনে৷ ইতিমধ্যেই সেক্সটিংয়ের দায়ে এক মহিলাকে কর্মীকে বরখাস্ত করেছে সুইজারল্যান্ড সরকার৷

সেক্সটিং মূলত যৌনতা নির্ভর চ্যাটিং অ্যাপ্লিকেশন৷ সেক্স আর টেক্সটিং মিলিয়েই তৈরি হয়েছে এই নয়া শব্দ৷ এতে যৌন ম্যাসেজের পাশাপাশি নিজেদের অর্ধ বা সম্পূর্ণ নগ্ন ছবিও বিনিময় হয়৷ ইন্টারনেটের বিভিন্ন সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটেই মাধ্যমেই মূলত চলে এই যৌনতা বিনিময়৷ যদিও কয়েকবছর আগে সেক্সটিংয়ের উৎপত্তি কিন্তু এটি বর্তমানে ভয়াবহ রূপ নিয়েছে৷ প্রাপ্তবয়স্কদের পাশাপাশি কিশোররাও এতে জড়িয়েড়ছে৷ এতে বিভিন্ন ঝুঁকির পাশাপাশি কিছু অসাধু লোকেও হাতেও চলে যাচ্ছে অনেকেই নগ্ন ছবি৷ এগুলি পণ্য হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বিভিন্ন পর্নো ওয়েবসাইটেও৷

যুক্তরাজ্যের অল্পবয়স্কদের মধ্যে সেক্সটিংয়ের প্রবণতা ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে৷ এই দেশের প্রধান গবেষণা সংস্থা দ্য ইনস্টিটিউট ফর পাবলিক পলিসি রিসার্চের এক গবেষণায় রিপোর্টে দেখা গেছে, যুক্তরাজ্যের প্রায় ৫০ শতাংশ কিশোর-কিশোরী সেক্সটিংয়ে আসক্ত৷ এই গবেষণায় ১৮ বছরের কম বয়সের কিশোরদের ওপর গবেষণা চালিয়েছে৷ এদের মধ্যে ৮০ শতাংশ জানিয়েছে কোনো না কোনো ভাবে তারা ইন্টারনেট পর্নোগ্রাফির সংস্পর্ষে এসেছেন৷ তারা মনে করেন, তাদের বয়সী প্রায় ৫০ শতাংশই সেক্সটিংয়ে আসক্ত৷

সেক্সটিং নিয়ে রীতিমতো আতঙ্কে ভুগছে সুইজারল্যান্ড পার্লামেন্ট৷ পার্লামেন্টে এক মহিলাকর্মী সম্প্রতি অফিসকক্ষে দাঁড়িয়ে একটি নগ্ন সেলফি ট্যুইটারে পোস্ট করেছেন৷ এতে সকলের মাথায় চিন্তার ভাঁজ৷ ওই মহিলাকে অবিলম্বে তার পদ থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে৷

যুক্তরাজ্যের এক হাসপাতালের নার্স এক রুগীর সঙ্গে সেক্সটিং করেন৷ ঘটনা প্রকাশ্যে এলে সরব হয় দেশের নার্স কাউন্সিল৷ যদিও অভিযুক্ত ঘটনার কথা স্বীকার করে অনুতাপ প্রকাশ করেন৷ তাকে পাঁচ বছরের জন্য সতর্ক করে দেয় কাউন্সিল৷ তাকে বলা হয়, এই সময়ের মধ্যে তার বিরুদ্ধে এই ধরণের অভিযোগ ফের উঠলে তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হবে৷

সেক্সটিং নিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকাও বেশ চিন্তিত৷ গত সপ্তাহে দেশটির ডারবান শহরে অনুষ্ঠিত এক সম্মেলনে শিক্ষাবিদ, সমাজবিজ্ঞানী ও সাংবাদিকরা সেক্সটিংয়ের ভয়াবহতা তুলে ধরেন। এক গবেষণা প্রতিবেদনের সূত্র ধরে বলা হয়, দেশটির অনেক কিশোর-কিশোরী শুধু নিজ দেশের বন্ধুদের মধ্যেই খোলামেলা সেলফি বিনিময় করছে না, দেশের গন্ডি ছাড়িয়ে বিদেশের বন্ধুদের কাছে তা পাঠাচ্ছে। ফেসবুক, ট্যুইটার, ইনস্টাগ্রামসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোকে কাজে লাগিয়ে এটি করছে তারা। এসব বন্ধু বিশ্বস্থতার বিষয়টি যথেষ্ট প্রশ্ন তুলেছে।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন বা এনজিও চাইল্ডলাইন এসএ শিশুদের নিয়ে কাজ করে। দক্ষিণ আফ্রিকার এই এনজিও’র কর্মকর্তা জোয়ান ভ্যান নিকার্ক জানিয়েছেন, ১৮ বছরের কম বয়সের অনেক শিশু সেক্সটিংয়ে জড়িয়ে পড়েছে। এমনকি ১০ বছর বয়সী শিশুও আছে এ তালিকায়। শিশু হলেও এদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। কারণ দেশটিতে শিশু পর্নোগ্রাফি নিষিদ্ধ। সেক্সটিংয়ে যে ছবি বিনিময় হয় তা বাস্তবে শিশু পর্নোগ্রাফি৷ এমনকি নিজের খোলামেলা সেলফি হলেও তা শিশু পর্ণগ্রাফির আওতাতেই পড়ে।

মার্কিন মুলুকের ভার্জিনিয়ায় সেক্সটিংয়ের অপরাধে নিজের মেয়েকে পুলিশের হাতে তুলে দিলেন এক বাবা৷ মেয়েটির বাবা জানিয়েছেন, মোবাইল ফোনে তাদের ১৩ বছর বয়সী মেয়ে কী করছে তা দেখতে তিনি ফোনটি চেক করেন। আর তা করতে গিয়েই দেখতে পান সে তার নগ্ন ছবি ছেলে বন্ধুদের কাছে পাঠিয়েছে। বিনিময়ে তার মোবাইল ফোনেও এসেছে অনেকে ছেলের নগ্ন ছবি। মেয়েটিকে বোঝানোর পরও সেখান থেকে সরে না আসায় তারা পুলিশের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি৷

সেক্সটিং নিয়ে সকলেই সতর্ক হওয়া একান্ত প্রয়োজন৷ আপনার সন্তান কিংবা পরিবারের কোনো সদস্য এই ধরণের আসক্তিতে জড়িয়ে পড়ছে কিনা সে বিষয়ে খেয়াল রাখুন৷ সম্ভব হলে তাদের গোপনীয় তথ্য ঘেঁটে দেখুন৷ কম বয়সী ছেলে-মেয়েদের হাতে নাগালে ইন্টারনেট যত কম আসে ততই মঙ্গল৷ ডেস্কটপ ও ল্যাপটপ ব্যবহার করলে কিছু ওয়েবসাইট ব্লক করে রাখুন৷ এছাড়াও অভিভাবকদেরই তার সন্তানদের ওপর নজর রাখতে হবে৷



মন্তব্য চালু নেই