বাঙ্গালী মেয়ের তিন বছর আগের নগ্নতা কি এই চাদরে ঢাকা পড়বে?
[ প্রথম ছবিটি মাশরুম বা ছত্রাক ছবিতে অভিনীত একটি দৃশ্য। সংগত কারনে বিশেষ অংশগুলো কালো করা হয়েছে। ]
‘মনের মানুষ’ খ্যাত কলকাতার বাঙালি নায়িকা পাওলি দাম। বাংলা সিনেমার ইতিহাসে বাঙালি নায়িকা হয়ে প্রথমবার সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে তিনি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়েছিলেন ২০১১ সালের শেষের দিকে। শ্রীলঙ্কার পরিচালক বিমুক্তি জয়াসুন্দরের দ্বিভাষিক ছবি ‘মাশরুম’-এ (ইংরেজি) পুরোপুরি বিবসনা হয়ে দীর্ঘ চার মিনিটে একটি শয্যা-দৃশ্যে অভিনয় করেছিলেন । বিছানায় নগ্ন এই দৃশ্যের শুটিংয়ের সময় নায়িকা পাওলি আপত্তি করেন নি, বরং তিনি এই নগ্নতার পক্ষে যুক্তি দেখিয়েছিলেন সে সময়। ছবিটির বাংলা নাম ছিল `ছত্রাক`।
ভারতীয় চলচ্চিত্রে বাঙালি নারীর লজ্জাবনত ভাবমূর্তি ভেঙে দিয়ে অনায়াসে নিজের শরীরকে ক্যামেরার সামনে মেলে ধরেছেন পাওলি দাম। ‘মাশরুম’ ছবিতে পাওলির নিরাবরণ হয়ে অভিনয় করা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠেছিল কোলকাতার টালিগঞ্জের ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিতে। ছবিতে সহ-অভিনেতা অনুব্রত-এর সঙ্গে প্রায় চার মিনিট তাকে ওরাল সেক্স দৃশ্যে অংশ নিতে হয়েছিল ।
একটা সময় ভারতীয় কিছু ছবিতে ডামি ব্যবহারের মাধ্যমে যৌন-দৃশ্য সংযোজন করা হতো। কিন্তু ‘মাশরুম’ ছবির পরিচালক বিমুক্তি জয়াসুন্দর এখানে কোনো ডামি ব্যবহার করেন নি। বাংলা ও ইংরেজি ভাষায় নির্মিত হয় এ ছবিটি।
‘মাশরুম’ ছবির শয্যা-দৃশ্যে বিবসনা হয়ে অভিনয় করা প্রসঙ্গে তিনি বলেছিলেন, কোনো ডামি নয়। আমি নিজে এই দৃশ্যে অভিনয় করেছি। দৃশ্যটার শুটিং হয়েছিল বোলপুরে। ছবিটি দেখলেই সবাই বুঝবেন, দৃশ্যটা মোটেও আরোপিত নয়। আমার চরিত্রের মেয়েটি কলকাতায় থাকে, তার বয়ফ্রেন্ড থাকে দুবাইয়ে। মেয়েটি তাকে মিস করে এবং শারীরিক তাগিদে ক্রমশ জড়িয়ে পড়ে আর একটি ছেলের সঙ্গে। এমন তো হামেশাই হচ্ছে।
নগ্ন হয়ে অভিনয় করা প্রসঙ্গে পাওলি পাল্টা যুক্তি দেখিয়ে প্রশ্ন তোলেন, যদি বিছানায় যৌনতার সময়ে আমাদের গায়ে কাপড় না-থাকে, তা হলে পর্দায় সেই চরিত্রে অভিনয়ের সময়ে গায়ে কাপড় রাখতে হবে কেন? বিদেশি ছবিতে তো এমন কৃত্রিমতা থাকে না!
জানা গেছে, দৃশ্যটি ক্যামেরাবন্দি করার সময়ে পাওলি-অনুব্রত ছাড়া সেটে ছিলেন শুধু সিনেমাটোগ্রাফার চান্না দেশপ্রিয় এবং পরিচালক বিমুক্তি জয়াসুন্দর। ইউটিউবে দৃশ্যটির অংশবিশেষ দেখে টালিগঞ্জের অনেকেই মন্তব্য নিন্দা জানিয়েছিলেন। টরেন্টের মাধ্যমেও সে দৃশ্য ছড়িয়েছে লক্ষ লক্ষ কপি।
অন্য দিকে পাওলির বক্তব্য ছিল, এই বিশেষ দৃশ্যই বাংলা ছবিকে আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে সাবালক হতে সাহায্য করবে। এ বিষয়ে আক্ষেপ করে পাওলি বলেন, এখনকার বাংলা ছবি আন্তর্জাতিক স্তর থেকে অনেক পিছিয়ে। হলিউডে দেখুন, কেট উইনসলেটদের ক্যামেরার সামনে নগ্ন হতে কোনও সমস্যা হয় না! অথচ বাংলায় বাস্তবসম্মত ভাবনা না-ভেবে শুধু দক্ষিণ ভারতের ছবি কপি করতেই ব্যস্ত সবাই।
ইউটিউবে ‘ছত্রাক’-এর শয্যা-দৃশ্যের ক্লিপিং যাওয়ার পর থেকেই এই নিয়ে কলকাতায় উত্তেজনার পারদ মিনিটে মিনিটে চড়ছে এক সময়। সবাই পাওলি কে নিয়ে ছি ছি করেছে। এ অবস্থায় পাওলির মন্তব্য ছিল, এ রকম একটা দৃশ্য বাংলা ছবিকে দিয়ে যদি আমি কপি-সিনেমা তৈরির প্রবণতা আটকাতে পারি, তা হলে সেটা হবে আমার সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি।
পাওলি পরে বিক্রম ভাটের হিন্দি ছবি হেট স্টোরিতে অভিনয় করেও বেশ সমালোচিত হয়েছিলেন। তবে তিনি সবসময় যেমন সাহসী চরিত্র অভিনয় করেছিলেন, মানুষের প্রয়োজনেও তিনি তার সেই সাহসী ভূমিকা অক্ষুন্ন রেখেছেন। অন্যদের সাহায্য করতে ‘আপন হতে বাহির হয়ে’ শিরোনামের একটি প্রকল্পের হয়ে কাজ করছেন পাওলি। সেই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছে পুরো টলিউড। এ বিষয়েই নিজের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন তিনি।
আনন্দ শুধু একার জন্য নয়। তা ভাগ করে নিতে হয়। এ সত্যটি দারুণভাবে উপলব্ধি করতে পেরেছেন কলকাতার যৌন আবেদনময়ী অভিনেত্রী পাওলি দাম। আর তাই তিনি মনে করেন, ‘শুধু নিজের আনন্দের কথা ভাবলে শেষ পর্যন্ত মেলে শূন্যতা।’ সম্প্রতি এক সাক্ষাতকারে এমন কথাই বলেছেন ভারতের পশ্চিমবঙ্গের এ অভিনেত্রী।
ভারতের জনপ্রিয় বাংলা পত্রিকা এই সময়-কে দেওয়া এক সাক্ষাতকারে তিনি বলেন, ‘পুজো আসছে। সকলের নতুন জামা হচ্ছে। কিন্তু সত্যিই কত দুঃস্থ শিশু আছে, যাদের একটা নতুন জামাও হয় না পুজোয়! এবার পুজোয় একটি এনজিও-র উদ্যোগে এমনই কিছু শিশুর সঙ্গে প্রতিমাদর্শনে থাকব ঠিক করেছি। দুঃস্থ শিশুদের নতুন জামা কিনে দেওয়া হবে, মিষ্টি খাওয়ান হবে শুনে ছোটবেলার কথা মনে পড়ে গেল। তখন বৌবাজারে ফিরিঙ্গী কালীবাড়ির সামনে দেখতাম কত শিশু, ঠিকমতো খেতেই পাচ্ছে না। রাস্তায় বসে রয়েছে। নতুন জামা হওয়া তো দূরের কথা। এদিকে আমিও তখন ছোট। পু্জোয় নতুন জামা পড়ে ঘুরতে বেরোচ্ছি। কিন্তু ওদের দেখে মনটা খারাপ হয়ে যেত। স্কুলে যখন পড়তাম, তখন ঠিক বুঝতে পারতাম না, ওদের জন্য যদি কিছু করতেও চাই, উপায় কী! আমি একা কীভাবে করতে পারি!’
‘কিন্তু যত দিন গিয়েছে বুঝেছি, একা কোনও কিছু করার চেয়ে সকলে মিলে চেষ্টা করলে, ওদের মুখে হাসি ফোটানো সহজ। তাই এই সময় উদ্যোগে এই মুহূর্ত থেকে সামিল হয়ে গেলাম আমিও। আনন্দ কখনওই একা করা যায় না! পুজোর আনন্দ সকলের সঙ্গে ভাগ করে নিতেই হবে। এবার পুজোয় তারই প্রথম ধাপ ‘আপন হতে বাহির হয়ে’- বলেন তিনি।
এখন পাওলি ভক্তরা নিজেরাও কি তার এমন উদ্যোগকে সাধু জানাবেন না। অবশ্যই জানাবে। আবার কেউ কেউ হয়তো এতে উৎসাহিতও হতে পারেন। কারণ ‘সত্য কাজে কে নয় রাজি!’
পাওলির এ কাজে এখন অনেকেই অনুপ্রানিত হচ্ছেন। সকলেই জানাচ্ছেন বাহবা। একদিন যারা তার নিন্দায় ছিলেন পঞ্চমুখ তারা এখন শুভকামনা জানাচ্ছেন তাকে। তবে অনেকেই প্রশ্ন করছেন বাঙ্গালী মেয়ের তিন বছর আগের সেই নগ্নতা কি এই মানবিকতার চাদরে ঢাকা পড়বে?
মন্তব্য চালু নেই