বাংলাদেশ পরিস্থিতিতে বিশ্ব উদ্বিগ্ন
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিতে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়। এ দেশে গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার সুযোগ ক্রমান্বয়ে কমে আসা, দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়া সহিংসতা ও অস্থিরতা, ব্যাপক হতাহতের ঘটনা এবং সম্পদের ক্ষয়ক্ষতিতে তারা অসন্তোষ প্রকাশ করেছে। বিশেষ করে বিএনপি চেয়ারপারসনের আন্তর্জাতিক বিষয়ক উপদেষ্টা সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী রিয়াজ রহমানের ওপর গুলিবর্ষণ এবং রংপুরে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপে আগুনে পুড়ে যাত্রী মারা যাওয়ার ঘটনায় পশ্চিমা কূটনীতিকেরা তাদের উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন।
মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ) ও ইউরোপীয় দেশগুলোর মিশন প্রতিনিধিদের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আয়োজিত ব্রিফিংয়ে উপস্থিত বিদেশী কূটনীতিকেরা উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা ব্যক্ত করেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দফতর ও ব্রিটিশ হাইকমিশন পৃথকভাবে তাদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছে। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির বিতর্কিত নির্বাচন ও নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সহিংসতার পর এই প্রথমবারের মতো পশ্চিমা কূটনীতিকেরা প্রকাশ্যে সমন্বিতভাবে তাদের উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার কথা জানালেন।
গত ৫ জানুয়ারির পর থেকে বিএনপির অনির্দিষ্টকালের অবরোধকে কেন্দ্র করে দেশে উদ্ভুত পরিস্থিতিতে সরকারের অবস্থান তুলে ধরতে বিদেশী কূটনীতিকদের জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন করে। ধারাবাহিক ব্রিফিংয়ের প্রথম দিন ইউরোপীয় কূটনীতিকদের কাছে সরকারের অবস্থান তুলে ধরা হয়। এতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর বক্তব্যের পর ইউরোপীয় রাষ্ট্রদূতেরা বাংলাদেশের পরিস্থিতিতে তাদের উদ্বেগের কথা তুলে ধরেন। কূটনীতিকেরা দেশে চলমান সহিংসতা ও অস্থিরতার পরিপ্রেক্ষিতে বেশ কিছু মৃত্যু ও হতাহতের ঘটনা এবং সম্পদের ক্ষতিতে তাদের উৎকণ্ঠার কথা জানান। এর মধ্যে মঙ্গলবার রিয়াজ রহমানের ওপর আক্রমণ ও গতকাল বুধবার রংপুরে যাত্রীবাহী বাসে পেট্রলবোমা নিক্ষেপের ঘটনাও রয়েছে।
ব্রিফিংয়ে ইউরোপীয় কূটনীতিকেরা বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক অধিকার চর্চার সুযোগ ক্রমান্বয়ে কমে আসছে বলে তাদের উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলেন, শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষার অজুহাতে সমাবেশ, চলাচল ও মত প্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্ষুণ করা যাবে না।
ইউরোপীয় কূটনীতিকেরা বাংলাদেশে গণতন্ত্র শক্তিশালী করার স্বার্থে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে সহিংসতা থেকে বিরত থেকে প্রকৃত সংলাপে বসার আহ্বান জানান।
মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর
অন্য দিকে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের উপমুখপাত্র মারি হার্ফ এক বিবৃতিতে বলেছেন, সাবেক পররাষ্ট্র সচিব রিয়াজ রহমানের ওপর হামলায় যুক্তরাষ্ট্র স্তম্ভিত ও মর্মাহত। আমরা তার দ্রুত আরোগ্য কামনা করছি। তিনি বলেন, বাংলাদেশে এমন গর্হিত ও কাপুরুষোচিত কাজের কোনো যৌক্তিকতা নেই। রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে সহিংসতার আমরা নিন্দা জানাই। এ ঘটনার তদন্ত করে জড়িতদের খুঁজে বের করে জবাবদিহিতার আওতায় আনার জন্য আমরা বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
সব পক্ষকে সহিংসতা পরিহার করার আহ্বান জানিয়ে হার্ফ বলেন, আমরা সব দলকে সংযত আচরণ করতে এবং সহিংসতা ও ভীতি প্রদর্শন থেকে বিরত থাকতে আহ্বান জানাই। একই সাথে জনগণের স্বাধীনভাবে শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক মত প্রকাশের অধিকার নিশ্চিত করতে আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।
মার্কিন দূতাবাস
এ ছাড়া ঢাকার মার্কিন দূতাবাস থেকে দেয়া এক বিবৃতিতে দেশব্যাপী হতাহতের ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করা হয়। এতে বলা হয়, আমরা ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোর প্রতি গভীর সমবেদনা জানাচ্ছি। যুক্তরাষ্ট্র সব পক্ষের সহিংসতাকেই নিন্দা জানায়।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার
ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন অপর এক বিবৃতিতে রিয়াজ রহমানের ওপর আক্রমণের ঘটনায় নিন্দা এবং রংপুরে যাত্রীবাহী বাসে আক্রমণের ফলে প্রাণহানি ও আহত হওয়ার ঘটনায় গভীরভাবে দুঃখ প্রকাশ করেন। তিনি ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ ও তাদের পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।
গিবসন বলেন, এসব অপরাধের যথাযথ তদন্ত এবং দায়ীদের বিচারের আওতায় আনার জন্য আমি বাংলাদেশ সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। যুক্তরাজ্য সব পক্ষকে সংযত থাকা, পরিমিতিবোধের চর্চা করা, আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা এবং সহিংসতা ও স্বাভাবিক জীবনযাত্রায় বিঘ সৃষ্টির পুনরাবৃত্তি থেকে নিষ্কৃতি পেতে সংলাপে বসার আহ্বান জানাচ্ছে।
মন্তব্য চালু নেই