বাংলাদেশে শিশুদের মারধর করা হয় কেন?

শিশুদের মারধর করা অনেকটা সামাজিক রীতিরই অংশ বাংলাদেশ ও দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে। পরিবারের আত্মীয় স্বজন, মুরব্বি এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে সাধারণত: শিশুদের মারধর করা হয়ে থাকে।কথা না শুনলে বা পড়তে না বসলে দু এক ঘা বসিয়ে দেওয়া বাংলাদেশে খুবই স্বাভাবিক চিত্র। শিশুকে বকুনি বা মারধর কেন বাংলাদেশের সমাজে স্বাভাবিক হিসেবে মেনে নেওয়া?

সমাজবিজ্ঞানী মাহবুবা নাসরিন বলছেন, ‘শিশুদের শাসন না করলে তারা মানুষ হবে না বাংলাদেশের সমাজে বহুদিন ধরে এমন একটা সংস্কৃতি প্রচলিত রয়েছে। স্কুলেও এটা চলে। পরিবার মনে করে এটা তার ভালোর জন্যেই করা হচ্ছে বা তাকে শাসন করা পরিবারের অধিকার। বাংলাদেশে শিশুর মনস্তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা একেবারেই নেই।’

পারিবারিক শাসন হিসেবে মারধর বা বকাঝকা শিশুর ওপর কি প্রভাব ফেলে?

শিশুদের মনোরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. নিয়াজ মোহাম্মদ খান বলছেন, এর প্রভাব তাৎক্ষণিক বোঝা না গেলেও দীর্ঘ মেয়াদি প্রভাব রয়েছে। তিনি বলেন, ‘অনেক সময় শিশুর ক্ষমতা বা সংগতির তুলনায় তার কাছে পরিবারের চাওয়া অনেক বেশি থাকে। পরিবার তখন তাকে বকাঝকা করে, তাকে বলতে থাকে তোমাকে দিয়ে কিচ্ছু হবে না বা তাকে দরকারে মারধরও করে। পরিবার ভাবে তাতে হয়ত শিশুটি তার লক্ষ অর্জন করতে পারবে। কিন্তু শিশু কতদূর পারবে তার সক্ষমতা যাচাই করা হয়না।’

তিনি বলছেন, ‘এতে শিশু বাড়তি চাপ অনুভব করে এবং মানসিকভাবে বিষাদগ্রস্ত হয়ে পড়ে। তার নিজের প্রতি আত্মবিশ্বাস কমে যেতে থাকে। শিশু নিজেই মনে করতে থাকে বাবা মা যেহেতু বলছে অতএব আমি কোনো কিছুর জন্য ভালো না। শিশুরা এমনকি নেশা বা নানা অপরাধে জড়িয়ে পরে।’

তিনি আরো বলেন, ‘অনেক সমস্যা নিয়ে শিশুরা তাদের কাছে আসে যার উৎস পরিবারেই।’

তার মতে, শিশুর সক্ষমতা যাচাই এবং সে অনুযায়ী তার ভালো ফল বা ভালোভাবে বেড়ে ওঠার জন্য যে ধৈর্য দরকার হয় বাংলাদেশে অনেক বাবা মায়েরই সেটা নেই।

সম্প্রতি বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো এবং জাতিসংঘের শিশু বিষয়ক সংস্থা, ইউনিসেফের শহরাঞ্চলে শিশুদের অবস্থা নিয়ে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যাচ্ছে শহরাঞ্চলে ১ থেকে ১৪ বছর বয়সী শিশুদের ৮২ শতাংশের বেশি পরিবারে নানা ধরনের শাসনের শিকার।

এর মধ্যে বকা থেকে শুরু করে রয়েছে মারধর পর্যন্ত। ৫৫ শতাংশ শিশুকে শারীরিক মারধর দিয়ে শাসন করা হয়। এর মধ্যে প্রায় ১৮ শতাংশ শিশুই মারাত্মক শারীরিক নির্যাতনের শিকার।

প্রকাশিত এই জরিপে আরো দেখা যাচ্ছে, বস্তিবাসী শিশুরা তুলনামূলক বেশি শারীরিক শাস্তির মুখোমুখি হলেও বস্তির বাইরের শিশুদের মধ্যেও এই সংখ্যা প্রায় কাছাকাছি।

সূত্র: বিবিসি বাংলা



মন্তব্য চালু নেই