বাংলাদেশে আবারো ১/১১ পূণারাবৃত্তি ঘটতে পারে

বাংলাদেশের রাজনৈতিক অচল অবস্থা দূর করতে অতিশীঘ্রই দুই প্রধান রাজনৈতিক জোটকে আলোচনায় বসতে হবে না হলে আবারো সেই ১/১১ ঘটেতে পারে। আর এজন্য আমেরিকাকেই মুখ্য ভুমিকা পালন করতে হবে বলে মনে করছেন, মার্কিন কংগ্রেসের এশিয়া ও প্যাসিফিক সাব-কমিটির বৈদেশিক কমিটিতে ‘অস্থিভঙ্গ বাংলাদেশ রাজনৈতিক ও ধর্মীয় উগ্রতা’ শীর্ষক আলোচনায় অংশ গ্রহনকরী বিশ্লেষরা।

৩০শে এপ্রিলের এ শুনানিতে সভাপতিত্ব করেন সাব-কমিটির রিপাবলিকান চেয়ারম্যান ম্যাট স্যালমন। এতে অংশ নেন লিসা কার্টিজ, প্রফেসর আলী রিয়াজ, জেই কানসারা, স্টিভেন ডি. ফ্লেশলি ও আলিসা অ্যারিস।

শুনানিতে অংশগ্রহণকারী ৫ জন বিশেষজ্ঞ আলোচক বাংলাদেশের সংকট নিরসনে নির্দিষ্টভাবে যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখার পক্ষে সুপারিশ ব্যক্ত করেছেন। তারা সংকট মেটাতে অবিলম্বে নতুন সাধারণ নির্বাচন চেয়েছেন।

তাদের কথায় আওয়ামী লীগকে টিকিয়ে রাখলে ভারতের স্বার্থ বেশি রক্ষা পাবে মর্মে দিল্লি বর্তমান ধারণায় অদূরদর্শিতার ছাপ রয়েছে। তাদের আলোচনায় জামায়াত ও ছাত্রশিবিরকে বাংলাদেশ ও মার্কিন সরকারের দ্বারা সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে নিষিদ্ধ করার সুপারিশও এসেছে। তারা বলেছে, মিডিয়ার উপর ক্রাকডাউন চলছে।

তারা সতর্ক করেছেন যে, অচলাবস্থা দীর্ঘ হতে পারে আবার সহিংসতা তীব্রতর হলে ২০০৭ সালের মতো আরেকটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটতে পারে। এর মধ্যে বাস্তবে যেটিই ঘটুক আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এছাড়া, সহিংসতার কোন কিনারা না হলে বাংলাদেশ উগ্র ধর্মীয় সহিংসতা ও জঙ্গিবাদের শিকার হতে পারে।

এই শুনানির একটি সংক্ষিপ্তসার নিচে তুলে ধরা হলো।

লিসাকার্টিজ

সিনিয়র রিসার্চ ফেলো, এশিয়া স্টাডিজ সেন্টার, দি হেরিটেজ ফাউন্ডেশন, ওয়াশিংটন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধী দলকে রাজনৈতিক অচলাবস্থার নিরসন ও সংলাপের টেবিলে বসতে উৎসাহিত করতে যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই অধিকতর সক্রিয় ভূমিকা পালন করতে হবে। আরও রাজনৈতিক অস্থিরতা যাতে না ঘটে সেজন্য যুক্তরাষ্ট্রকে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোকে নিরুৎসাহিত করতে হবে।

কারণ এর ফলে সহিংস রাজনৈতিক গোষ্ঠী গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নস্যাৎ করতে পারে।‘প্রলম্বিত রাজনৈতিক অচলাবস্থা কিংবা রাজপথের সহিংসতা তীব্রতর হলে ২০০৭ সালের মতো আরেকটি সামরিক অভ্যুত্থান ঘটতে পারে। এবং এই দুটোর যে কোনটি ঘটলে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি উভয়ে দুর্ভোগ পোহাবে।

আরএসবএড়াতেহলেযুক্তরাষ্ট্রকেযাকরতেহবে:

প্রথমত, সমমনা গণতান্ত্রিক দেশগুলোর সঙ্গে কাজ করতে হবে যাতে তারা আওয়ামী লীগ ও বিএনপিকে রাজনৈতিক উত্তেজনা প্রশমনে আলোচনার টেবিলে বসানোর উদ্যোগ নেয়। একটি শান্তিপূর্ণ গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া পুনরুজ্জীবনে বিএনপি নেতাদের সঙ্গে একটি খাঁটি সংলাপ শুরু করতে শেখ হাসিনাকে রাজি করানোর লক্ষ্যে অন্য দেশগুলো যেমন: যুক্তরাজ্য, কানাডা, অস্ট্রেলিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানকে সঙ্গে নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রকে একটি নিরপেক্ষ ভূমিকা পালন করতে হবে।

একই সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রকে কাজ করতে হবে ভারতের সঙ্গে যৌথ উদ্যোগ নিতে, যদিও নয়া দিল্লি এরই মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে বিরোধীদের সঙ্গে সমঝোতায় বসতে প্রভাব খাটানোর ইচ্ছা থেকে দূরে রয়েছে বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে। ভারতের নেতারা দৃশ্যত তাদের স্বার্থের হিসাব কষছেন যে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলেই তাদের লাভ বেশি হবে।

আর সে কারণেই বিএনপির জন্য একটি জায়গা করে দিতে শেখ হাসিনাকে চাপ দেয়ার ব্যাপারে দিল্লি শিথিল মনোভাব দেখিয়ে চলছে। তবে দিল্লির এ অবস্থান অদূরদর্শী হতে পারে। যদি শেখ হাসিনা তার ক্রমবর্ধমান একনায়কোচিত শাসনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক কোন বাধার মুখোমুখি না হন বা সামান্যই বাধা আসে, তাহলে বাংলাদেশী রাজনীতির সহিংসতা আরও বৃদ্ধি পাবে এবং এতে ইসলামপন্থি কট্টর গ্রুপগুলোর দ্বারা নতুন নিয়োগ সহজ হবে।

দ্বিতীয়ত, বিরোধী দল যে সহিংস কৌশল নিয়েছে এবং বিরোধী দলকে জায়গা করে দিতে সরকারের যে ব্যর্থতা- এ দুই বিষয়েই আরও উচ্চকণ্ঠে সমালোচনা করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রকে ক্রমশ চাপ দিতে হবে যে, হয় তারা বিরোধী দলের শত শত নেতাকর্মীকে জেল থেকে ছেড়ে দেবে অন্যথায় আইনের যথা প্রক্রিয়া অনুসরণ করে তাদের বিচার ত্বরান্বিত করতে হবে।

যারা নিরীহ পথচারী বিশেষ করে পেট্রলবোমা মেরে যারা হত্যা করেছে, তাদের অবিলম্বে বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রকে অবশ্যই নিখোঁজ থাকা সালাউদ্দিনের বিষয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করতে হবে, যাতে তিনি তার পরিবারের মাঝে অবিলম্বে ফিরে আসতে পারেন।

তৃতীয়ত, বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ রাজনীতি ও গণতন্ত্রের জন্য সুশীল সমাজের মধ্যে সংলাপকে উৎসাহিত করতে হবে, যাতে জড়িত থাকবে উঠতি প্রজন্ম। এর লক্ষ্য হবে স্থানীয় গ্রুপগুলোকে অহিংস রাজনীতির বিষয়ে আগ্রহান্বিত করে তোলা। এ সংলাপে জামায়াতের তরুণ কর্মীদের আকৃষ্ট করতে হবে যারা দলের সহিংস কর্মসূচিকে দৃঢ়তার সঙ্গে বিরোধীতা করে দল সংস্কারে ব্রতী হবে।

চতুর্থত, বাংলাদেশে মার্কিন ব্যবসা ও বিনিয়োগের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করতে হবে। যার ফলে রাজনৈতিক স্থিতির ব্যাপারে শেখ হাসিনাকে রাজি করাতে প্রণোদনা দেয়া যায়।

মিডিয়া রিপোর্ট মতে ৭ হাজার বিরোধীদলীয় কর্মীকে অন্তরীণ ও প্রায় ২০ জন বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সম্মুখীন হয়েছেন।

২০০৭ সালে সামরিক কবাহিনী যেভাবে হস্তক্ষেপ করেছিল, সেভাবে এখনও পর্যন্ত তারা হস্তক্ষেপ করে রাজনৈতিক অচলাবস্থার অবসান ঘটাবে বলে মনে হচ্ছে না। কিন্তু যদি লক্ষণীয়ভাবে পরিস্থিতির অবনতি ঘটে তাহলে অবস্থার পরিবর্তন ঘটতে পারে। শেখ হাসিনা কথিত মতে সামরিক বাহিনীকে অর্থনীতিতে বৃহত্তর ভূমিকা রাখতে গিয়ে রাজনীতিতে তাদের জড়িত হওয়ার সম্ভাবনা কমিয়ে দিয়েছেন।

সামরিক বাহিনীর রাজনীতি থেকে দূরে থাকার আরেকটি কারণ হলো ২০০৭ ও ২০০৮ সালে তারা ক্ষমতায় থাকাকালে দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়েছিল বলে অভিযোগ রয়েছে।

২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর এশিয়া ফাউন্ডেশনের এক সমীক্ষায় দেখা যায় ৭৭ ভাগ মানুষ কেয়ারটেকার সরকারের অধীনে নির্বাচন চায়।

গত ফেব্রুয়ারিতে ৩৭ জন বিচারবহির্ভূত হত্যার সম্মুখীন হয়। এর বেশির ভাগ ঘটেছে পুলিশ হেফাজতে। আরেকটি সংগঠনের বরাতে তিনি বলেন, ৫ই জানুয়ারি থেকে ৮ই ফেব্রুয়ারির মধ্যে ৩২ জন নিহত হয়, এর মধ্যে ২২ জন মারা যান ক্রসফায়ারে।

নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা থেকে জামায়াতের ওপর নিষেধাজ্ঞা চলছে। একাত্তরের স্বাধীনতাযুদ্ধে পাকিস্তানিদের পক্ষ অবলম্বনের কারণে তাদের নেতাদের অনেকের ফাঁসি হয়েছে, কেউ মৃত্যুদণ্ড পেয়েছেন।আগের সরকারগুলো যুদ্ধাপরাধের বিচার এড়িয়ে গেছে কারণ তারা এর অনুমান অযোগ্য প্রতিক্রিয়া হওয়ার ভয়ে ছিলেন।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এ বিচার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে যে, শেখ হাসিনা একে তার রাজনৈতিক প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে ব্যবহার করছেন কিনা। শহুরে তরুণ মধ্যবিত্তসহ দেশের একটি বড় অংশ এ বিচারকে সমর্থন করছে। ২০১৩ সালের আগস্টে হাইকোর্ট জামায়াতের নিবন্ধনকে অবৈধ ঘোষণা করে।

২০১৩ সালের নভেম্বরে নির্বাচন কমিশনার শাহনেওয়াজ ঘোষণা দেন, জামায়াত জাতীয় নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। আন্তর্জাতিক মানকবাধিকার সংগঠনগুলো কামারুজ্জামানের মৃত্যুদণ্ড রদ চেয়েছিল এই যুক্তিতে যে যেভাবে বিচার হয়েছে তা আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে পারেনি।

গ্রাম এলাকায় জামায়াতের ছোট সমর্থন ভিত্তি আছে। ৪ থেকে ৫ ভাগ ভোট পায় তারা ২০০৮ সালের নির্বাচনে। ছাত্র শিবিরের জঙ্গিত্বের বদনাম আছে, তারা প্রতিপক্ষের সঙ্গে সহিংস বিরোধে লিপ্ত হয়ে থাকে। বাংলাদেশের ধর্মীয় সংখ্যালঘুর ওপর হামলার সঙ্গেও তারা জড়িত।

রাজনৈতিক ডামাডোল ও চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ অব্যাহতভাবে ইসলামী জঙ্গিত্বের হুমকির মুখে রয়েছে। এমনটাও অনুমেয়, উগ্রপন্থিরা রাজনৈতিক অস্থিরতার সুযোগ নিয়ে নিজেদের এজেন্ডা বাস্তবায়নে উদ্যোগী হতে পারে।

ব্লগার অভিজিৎ ও ওয়াশিকুরের হত্যাকাণ্ড ইঙ্গিতবহ। আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের উত্থান ইংগিত দিচ্ছে, আল কায়েদা ইতিমধ্যেই বাংলাদেশের অস্থির রাজনীতির সুযোগ নিতে শুরু করেছে কিনা।

শেখ হাসিনা সাফল্যের সঙ্গে জেএমবিকে ভোঁতা করেছে। আইন প্রয়োগকারী ও গোয়েন্দা সংস্থাগুলো সক্রিয়তার সঙ্গে জঙ্গিদের গ্রেপ্তার ও তাদের সন্ত্রাসী তৎপরতাকে নস্যাৎ করে দিচ্ছে।

জামায়াতের সহিংস অতীত বিবেচনায় তাকে নিষিদ্ধ করার উদ্যোগ সমর্থনযোগ্য। কিন্তু তাদের বিবেচনায় নেয়া উচিত যে, শান্তিপূর্ণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়ার সুযোগ সীমিত করে দেয়ার সুযোগ কাজে লাগিয়ে পুনরায় সহিংস কাজে জড়িত হতে তারা নিজদের ঐক্যবদ্ধ হতে পারে। তখন সমস্যা আরও নিকৃষ্ট হতে পারে।

দেশটির রাপ্তানির ৭৫ ভাগের হিস্যা পোশাক খাতে এবং সেটি আঘাত পেতে শুরু করেছে। অস্থিরতা ও অনিশ্চয়তার কারণে গার্মেন্টস ক্রেতারা ইন্দোনেশিয়ার মতো দেশে তাদের ফরমায়েশ আদেশ স্থানান্তর করছে। বিশ্বব্যাংক বলেছে, অবরোধকালীন অস্থিরতা ২.২ বিলিয়ন ডলার খেয়ে ফেলছে যা জিডিপির ১ ভাগ।

তবে বাংলাদেশ আগামী দশকে মধ্য আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার পথে আছে। ২০২০ সালের মধ্যে দেশটি খাদ্যে স্বয়ম্ভর হবে। দেশটির সাফল্য যখন প্রশংসনীয় তখন এটাও দেখার বিষয়, জনসংখ্যার ৩০ ভাগ এখনও দারিদ্র্যসীমার নিচে, যার মধ্যে অর্থনৈতিক অগ্রগতিতে ভূমিকা পালনকারী গার্মেন্ট কর্মীরাও রয়েছে।

আলীরীয়াজ

প্রফেসর ও বিভাগীয় প্রধান, সরকার ও রাজনীতি বিভাগ, ইলিনয় স্টেট ইউনিভার্সিটি

এরশাদকে ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনে অংশ নিতে বাধ্য করা হয়েছিল। বিএনপি তার সাংগঠনিক দুর্বলতা ও জামায়াত নির্ভরতার কারণে ওই নির্বাচন ঠেকাতে পারেনি। সংসদ কার্যত একটি একদলীয় প্রতিষ্ঠানে পরিণত হয়েছে। গত বছর ৫ ধাপে উপজেলা নির্বাচন হয়। এর প্রথম দুধাপে সরকার বড় হস্তক্ষেপ করেনি।

২১২টি উপজেলার মধ্যে বিএনপি ৯৩, আওয়ামী লীগ ৭৮ ও জামায়াত সমর্থকরা ২১টিতে জয়লাভ করে। এরপরে ব্যাপক কারচুপি ঘটলে ২৪৫ আসনের মধ্যে বিএনপি ৬৫, আওয়ামী লীগ ১৪৫ ও জামায়াত সমর্থকরা ১৫টিতে জয় পায়।

পেট্রলবোমা হামলার জন্য সরকার ও বিএনপি পরস্পরকে দায়ী করেছে। তবে কয়েকটি ঘটনায় ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা জড়িত থাকার অভিযোগ স্বীকৃত হয়। কিন্তু বেশির ভাগই এটা বিএনপি ও জামায়াত কর্মীরা করেছে। বিএনপির অবরোধের কৌশল জনগণের কাছে আবেদন হারিয়েছে।

মানবাধিকার সংগঠনগুলোর মতে, অন্তত ১৫ হাজার ব্যক্তি যাদের বেশির ভাগই বিরোধীদলীয় কর্মীকে গ্রেপ্তার করা হয়। গত তিন বছরে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুম নাগরিক নিরাপত্তায় বিরাট হুমকি সৃষ্টি করেছে। ২০১০ থেকে নাটকীয়ভাবে গুম বেড়েছে। আসকের মতে, গত জানুয়ারি থেকে মার্চের মধ্যে ২৫ জন গুম হয়েছেন।

এ বিষয়ে ভাল দালিলিক প্রমাণ থাকলেও সরকার অব্যাহতভাবে এর দায় অস্বীকার করে চলেছে। প্রধানমন্ত্রী, অ্যাটর্নি জেনারেলসহ উচ্চপদস্থরা দেখামাত্র গুলির নির্দেশকে দায়মুক্তি দেয়ার ইঙ্গিতপূর্ণ মন্তব্য প্রকাশ্য করেছেন।

বাংলাদেশে সহিংসতা সব সময় ছিল। কিন্তু গত দেড় বছরে তা নতুন করে একটি নিকৃষ্ট মাত্রা পেয়েছে। কোন রাজনৈতিক সংস্রব নেই এমন ব্যক্তিও হামলার স্বীকার হয়েছেন।

সংখ্যালঘুদের রক্ষায় রাষ্ট্র দুঃখজনকভাবে ব্যর্থ হয়েছে। গত এক বছরে একনায়কসুলভ শাসনের সঙ্গে তুলনীয় একটি শাসনব্যবস্থা কায়েম হয়ে গেছে, যেখানে বাকস্বাধীনতা ক্রমেই সংকুচিত হয়ে পড়েছে। বিএনপি তার দাবি আদায়ে নিজেই সহিংসতায় অংশ নিচ্ছে বা উৎসাহিত করছে।

সরকার সমর্থকরা মালয়েশিয়ার মতো শাসনের পক্ষে আস্থা ব্যক্ত করছেন, যে দেশটিতে বহু বছর একনায়কসুলভ শাসন চলেছে, বিরোধী দলের জন্য কোন জায়গা ছিল না, কিন্তু প্রবৃদ্ধি অর্জন ঘটেছে।

সিটি নির্বাচন একটা আশাবাদ সৃষ্টি করেছিল। কিন্তু মিডিয়া ও পর্যবেক্ষকদের রিপোর্ট মতে তা প্রহসনে পরিণত হয়।

৫টিসুপারিশ

১. শাসনের জন্য একটি ন্যায্য ম্যান্ডেন্ট লাভ করা।

২. মৌলিক অধিকারের ক্ষয় বন্ধ করতে হবে। গণতান্ত্রিক সাংবিধানিক দলগুলোর জন্য গণতান্ত্রিক জায়গা তৈরি করতে হবে।

৩. অজবাবদিহিমূলক ব্যবস্থা ও বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের মতো রাষ্ট্রীয় কঠোরতা বন্ধ করতে হবে।

৪. বিরোধী দলসহ সব রাজনৈতিক দল বিশেষ করে বিরোধী দলকে রাজনৈতিক লক্ষ্য হাসিলে সহিংসতার আশ্রয় নেয়ার বিষয়ে দ্ব্যার্থহীন ভাষায় নিন্দা জানাতে হবে।

৫. ভোটাধিকারসহ যত ধরনের মৌলিক অধিকার সংরক্ষণকারী প্রতিষ্ঠান আছে তাদের শক্তিশালী করতে হবে।

সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের আগ পর্যন্ত থাকা সুযোগ যদিও আরও সীমিত হয়ে পড়েছে, তবুও একটি অংশগ্রহণমূলক জাতীয় নির্বাচন অনুষ্ঠানের উপায় খুঁজে বের করার জন্য সব দল ও সিভিল সোসাইটি নিয়ে সংলাপ শুরু করতে হবে।

বর্তমানে বিরোধী দলের পিছুহটা এবং ক্ষমতাসীন দলের ‘সাফল্য’ যা প্রকারন্তরে একটি ডি ফ্যাক্টো একদলীয় রাষ্ট্র গড়ে তুলছে। সামনে আবারও সহিংসতা নতুন করে শুরু হওয়ার আশঙ্কা থাকছে।



মন্তব্য চালু নেই