বাংলাদেশের রাজনীতিতে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছেন মোদি
লোকসভা নির্বাচনের পর ক্ষমতায় এসে প্রতিবেশী বাংলাদেশের রাজনৈতিক, প্রশাসনিক নেতৃত্বে ও সাধারণ মানুষের মধ্যে ব্যাপক প্রভাব ফেলেছেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার পরিবারের পক্ষ থেকে মোদিকে অভিনন্দন বার্তা পাঠানো হয়।
“আপনার সুযোগ্য ও গতিশীল নেতৃত্বে বাংলাদেশ-ভারত এবং বিএনপি-বিজেপি সম্পর্ক অতীতের চেয়ে আরো জোরালো হবে। সার্কের গুরুত্বপূর্ণ দেশে হিসাবে আপনি এই অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবেন বলে আমি প্রত্যাশা করি।”
নরেন্দ্র মোদিকে এভাবে অভিনন্দন জানিয়েছেন লন্ডনে অবস্থানরত বিএনপি-র চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বড় ছেলে তারেক রহমান।
তিনি আশা প্রকাশ করেন যে, ‘‘নতুন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি অতীতের সম্পর্কের সীমাবদ্ধতাগুলি দূর করে জনগণের প্রত্যাশার প্রতিফলন ঘটাবেন। এতে সংখ্যাধিক্য জনগণের নেতিবাচক মনোভাবের পরিবর্তন ঘটবে। ভারত হয়ে উঠবে বাংলাদেশের সর্বসাধারণের সবচেয়ে ঘনিষ্ঠ বন্ধুরাষ্ট্র। একদেশদর্শী ভূমিকার অবসান হবে।’’
উল্লেখ্য, গত ১৬ মে লোকসভার ভোট গণনার দিন নরেন্দ্র মোদির জয়ের আবাস পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশ থেকে সবার আগে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বার্তা পাঠান খালেদা জিয়া।
নরেন্দ্র মোদির সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে সরকার গঠন বাংলাদেশের রাজনীতিতে যে প্রভাব ফেলেছে, কট্টর ভারত-বিরোধী বলে পরিচিত বিএনপি নেতাদের মোদিকে এই বার্তা পাঠানোই তার প্রমাণ।
বিজেপি মানে হিন্দু সাম্প্রদায়িক দল- এমন ধারণা বাংলাদেশের রাজনীতিতে প্রচলিত থাকলেও, সম্প্রতিক নির্বাচন, প্রধানমন্ত্রীর শপথ গ্রহণের ঐতিহাসিক আয়োজনে সার্ক নেতাদের আমন্ত্রণ ও তাদের সঙ্গে আলোচনা একটা নতুন দরজা খুলে দিয়েছে।
নির্বাচনী প্রচারের সময় অবৈধ বাংলাদেশী ও পাকিস্তানিদের ঠেলে দেমের মাটিতে পাঠিয়ে দেয়ার ঘোষণা উদ্বেগ তৈরি করেছিল বাংলাদেশে। তা সত্ত্বেও দুদেশের রাজনৈতিক ধারার তুলনামূলক বিশ্লেষণ করেছেন বাংলাদেশে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের বক্তব্য, ক্ষমতায় এসে মোদি শপত গ্রহণ করেই সার্ক নেতাদের কাছে বার্তা পৌঁছে দিয়েছেন যে, তিনি দক্ষিণ এশিয়ার একটি শান্তি ও সৌহার্দের পরিবেশ গড়ে তুলতে চান। তামিল নেতারা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হওয়া সত্ত্বেও শ্রীলঙ্কার রাষ্ট্রপতি রাজাপাক্ষেকে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মোদি।
ঢাকার বিশ্লেষকরা বলেছেন যে, নওয়াজ শরিফ ও রাজা পাকশেকে আমন্ত্রণ জানানো –এ দুটিই চিল কঠিন সিধান্ত। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক পড়ান এমন এক অধ্যাপক বলেছেন যে, মোদির আমলে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি স্বাক্ষর ও সীমান্ত সমস্যার সমাধান হবে।
ঘটনা হচ্ছে, ইসলামিক দলগুলির মাথার ছাতা বিএনপি এবং খালেদা জিয়া ও তারেক। তারাই যখন ভারতের দিকে তাকাচ্ছেন তখন তাদের কী বা করার থাকে। জামায়াত তো এখন নিজেদের অস্তিত্ব রক্ষা ও যুদ্ধাপরাধী নেতাদের বাঁচাতেই ব্যস্ত।
তবে মোদি ক্ষমতায় এসে পরিস্কার করেছেন যে, বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার সরকারের সঙ্গে ভারতের দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক আরো জোরদার করা হবে। বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গেই ভারত সরকার ও শাসক দল বিজেপি সম্পর্ক রাখলেও শেখ হাসিনার গুরুত্ব যে মোদির কাছে অপরিসীম তা বুঝিয়ে দিতে তিন সময় নেননি।
বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে খালেদা জিয়ার বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামীকে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে মদত দিয়ে বাংলাদেশে অস্তিরতা সৃষ্টির কোনো পরিকল্পনা যে নরেন্দ্র মোদির নেই তা পরিস্কার করেছে সাউথ ব্লক।
১৯৯৮, ১৯৯৯ –এ বিজেপি ক্ষমতায় এল অটল বিহারী বাজপেয়ী, লালকৃষ্ণ আডবানীরা শেখ হাসিনা সম্পর্কে নেতিবাচক মনোভাব নিয়ে পরোক্ষে খালেদা জিয়ার প্রশাসনকে যেভাবে সাহায্য করেছিলেন,অতীতের সেই ভুলের পুনরাবৃত্তি চান নবা নরেন্দ্র মোদি।
খালেদা জিযার আমলে যেভাবে আসাম, ত্রিপুরাসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলিতে উলফা, এনএলএফটি কখনো এনডিএফবিসহ সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদী জঙ্গিদের মদত দেয়া হয়েছিল বা পাকিস্তানি গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআই বাংলাদেশের সেনা গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএফআই-এর সাহায্যে আসামসহ উত্তর-পূর্বাঞ্চল, পশ্চিমবঙ্গে অস্থিরতা তৈরির চেষ্টা করেছিল সেই ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি করতে চান না নরেন্দ্র মোদি।
এ জন্য সার্কের শীর্ষ বৈঠক শেষে শেখ হাসিনাকে তিস্তার পানি বন্টন ও ছিটমহল বিনিময় চুক্তি বাস্তাবায়নের পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদি ভারত ও বাংলাদেমের সহযোগিতার মধ্যে দুদেশের অভিন্ন শত্রু জঙ্গিদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়েছেন।
বাংলাদেশের কাছে একদা এক চরম হিন্দু সাম্প্রদায়িক নেতা আজ বাস্তব পরিস্থিতিতে কার্য়ত নয়নেরম মনি হয়ে উঠেছেন। সূত্র: দৈনিক যুগশঙ্খ।
মন্তব্য চালু নেই