বাংলাদেশের বাছাইপর্ব নিয়ে ভারতীয়রাও বিস্মিত

মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কে হিমাচল প্রদেশে ঢুকতেই ওয়েলকাম মেসেজে সতর্ক করে বললো এখানকার নদীতে যাতে না নামি! নিরাপত্তার কথা বললো, কিন্তু নদীতে নিরাপত্তার কি সমস্যা তা নির্দিষ্ট করে বললো না! নদী মানে এখানে ছোট ছোট পাহাড়ি ঝর্ণা।

আমাদের পার্বত্য চট্টগ্রামের সঙ্গে অনেক মিল আছে এই শহরের। কিন্তু পথেঘাটে যতো লোক দেখবেন সব আমাদের মতো ইন্ডিয়ান লুক বেশি! মঙ্গোলিয়ান লুকের লোকজন রেয়ার! এই ধর্মশালাতেই বুধবার শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ মিশন! প্রতিপক্ষ নেদারল্যান্ডস!

বাংলাদেশ এই সব দলের সঙ্গে খেলে বিশ্বকাপের মূল পর্বে খেলার যোগ্যতা অর্জন করতে হবে! এ নিয়ে মঙ্গলবার এখানকার তরুণ কিছু ছেলেমেয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। এশিয়াকাপে ভারতের বিরুদ্ধে খেলার রানার্সআপ নেদারল্যান্ডস জাতীয় দলের সঙ্গে খেলে বিশ্বকাপের মূলপর্বে খেলতে যাবে, এটি এরাও স্বাভাবিক মানতে পারছেন না।

এখন কিন্তু গোটা ধর্মশালা নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো! বাংলাদেশের খেলা এর কারণ নয়। কারণ ভারত দেশটির চিরশত্রু দেশ পাকিস্তান! বাংলাদেশেরও চিরশত্রু! নিরাপত্তার দুশ্চিন্তায় জিম্বাবুয়ে ছাড়া বিশ্বের আর কোন ক্রিকেট পাকিস্তানে খেলতে যায় না। ভারতও যায় না।

এই টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে পাকিস্তান যেন এর একটা শোধ নিতে চেয়েছে! তাদের পক্ষ হয়েছে ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতি! দিল্লীতে বিজেপি সরকার গদিনশীন হলেও হিমাচল প্রদেশের ক্ষমতায় কংগ্রেস। এই রাজ্যের কংগ্রেসীয় মুখ্যমন্ত্রী নিরাপত্তার কারণে ধর্মশালায় ভারত পাকিস্তান ম্যাচ না করতে বলেছিলেন! তার আশংকা শান্তির রাজ্যে পাকিস্তানের খেলাকে কেন্দ্র করে জঙ্গি হামলা হতে পারে! এখান থেকে পাকিস্তানের সীমানা অনেক কাছে!

কংগ্রেসীয় মুখ্যমন্ত্রীর উদ্বেগের বিষয়টি লুফে নিয়েছে পাকিস্তান! ধর্মশালার নিরাপত্তা দেখতে পাকিস্তান থেকে এসেছে দুই সদস্যের নিরাপত্তা টিম! কিন্তু এই টিমের সফর নিয়েও প্রতিবাদ শুরু হয়েছে ধর্মশালায়! কারণ ধর্মশালার শান্তিপ্রিয় মানুষজন মনে করে তাদের শহর নিরাপদ।

সমস্যা পাকিস্তানের। পাকিস্তান দেশটি নিরাপদ না। মঙ্গলবার পাঠানকোট থেকে সড়কে ধর্মশালা আসার পথে পথে নিরাপত্তার চাদর বিছানো দেখেছি! পথে পথে গাড়ি থামিয়ে নিরাপত্তা তল্লাশী চলছিল। আমার সঙ্গে ফিনল্যান্ডের দুজন পর্যটক ধর্মশালায় আসেন। এই নিরাপত্তা তল্লাশীর কারণ তাদেরকে বললে তারা বেশ অবাকই হন! ধর্মশালায় হোটেল নিয়েছি স্টেডিয়ামের কাছাকাছি এলাকায়। রুমে লাগেজ রেখে হেঁটে হেঁটে চলে যাই স্টেডিয়াম দেখতে। কিন্তু পথে পথে থামচ্ছিল পুলিশ! খেলা দেখতে অস্ট্রেলিয়া থেকে এসেছি শুনে তারা বেশ আহলাদিত হয়ে খাতিরও করেন। কিন্তু পুলিশের বাইরে সাদা পোশাকের যারা পথে পথে আমার সঙ্গে গল্প করেছেন বুঝতে পারি তারাও গোয়েন্দা!

বাংলাদেশের ভোটের আগে আনসার-গ্রাম পুলিশের সদস্যরা যেমন বিছানা বালিশ নিয়ে আসেন, এমন অনেককে দেখেছি রাস্তার পাশে যার যার বিছানা বালিশে ঘুমাচ্ছেন! স্টেডিয়ামে যাবার পথটি গ্রামের মতো সরু। ভাঙ্গাচোরা। এ পথে একাধিক কলেজ-স্কুল। ধর্মশালাটি কাংগ্রা জেলার অধীন। এলাকাটির পাশের রাস্তাতেই স্থানীয় পুলিশের সদর দফতর।

পুলিশের বস যখন গাড়িতে যান, পোপো ভেপু বাজায় তার গাড়ি। অপরূপ ছবির মতো এক শহর এই ধর্মশালা। বুধবার এখানকার হিমাচল প্রদেশ ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় বিকেল সাড়ে তিনটায় শুরু হবে বাংলাদেশ-নেদারল্যান্ডসের খেলা। দূর থেকে মনে হবে পাহাড়ের কোল ঘেঁষে স্টেডিয়াম। কিন্তু পাহাড় অনেক দূরে। এখান থেকে দেখা পাহাড়ের চূড়াটি ধবল বরফ সাদা। এটি হিমালয়ের তিব্বত অংশ। এমনিতে ভারতের পর্যটন সংস্থার বিজ্ঞাপনে হিমাচল প্রদেশকে বলা হয়েছে ‘সিটি অব গড’।

কিন্তু গুগলে সার্চ দিলে আরেক তথ্য পাবেন। এ শহর দালাইলামার! তিব্বতিয় ভিন্নমতাবলম্বী নেতা দালাইলামা ১৯৫৯ সাল থেকে আশ্রয় নিয়ে বাস করছেন এই হিমাচল প্রদেশে। এখানে আছেন তার হাজার হাজার অনুসারী। দালাইলামার হেড কোয়ার্টারও এখানে। দালাইলামার অনুসারীদের সহ হিমাচল প্রদেশের জনসংখ্যা ৫৩ হাজার ২৫২।

তিরিশ বর্গকিলোমিটারেরও কম আয়তনের ছোটখাটো শহর। ব্রিটিশদের আগে কোচরা শাসন করতো এই এলাকা। ব্রিটিশরা এখানে হিমাচল প্রদেশের গ্রীষ্মকালীন রাজধানী করতে চেয়েছিল। কিন্তু এক প্রাকৃতিক দুর্যোগের পর রাজধানী স্থানান্তরিত হয় সিমলায়। এই সিমলা বাংলাদেশে পরিচিত এক নাম।

১৯৭৪ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান, ইন্দিরা গান্ধী, জুলফিকার আলী ভূট্টোর মধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছিল ঐতিহাসিক সিমলা চুক্তি। ওই চুক্তির মাধ্যমে পাকিস্তান প্রতারনামূলক যুদ্ধবন্দীদের তাদের কবজায় নিয়ে নেয়। বলেছিল যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করবে। করেনি। এখন উল্টো এর বিরোধিতা করে চলেছে।

টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ উপলক্ষে সেই সিমলা লাগোয়া ধর্মশালায় এখন বাংলাদেশ দল।



মন্তব্য চালু নেই