বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম সিরিজ সেরা পাইলটের জন্মদিন আজ
একটি সিরিজে খুব এক্সট্রা অর্ডিনারি কিছু না করলে পরাজিত দল থেকে কাউকে ম্যান অব দি ম্যাচ অথবা ম্যান অব দি সিরিজের পুরষ্কার দেওয়া হয়না। ম্যান অব দি সিরিজের পুরষ্কার পাওয়া এমনিতেই খুব কঠিন কাজ।
২০০০ সালের বাংলাদেশ দলের কথা চিন্তা করলে সেটা অসম্ভবের পর্যায়েই পড়ে। বাংলাদেশের পক্ষে এখন পর্যন্ত ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশি ম্যান অব দি সিরিজের পুরষ্কার পেয়েছেন সাকিব আল হাসান, পাঁচ বার।
কারো কি মনে আছে বাংলাদেশের পক্ষে প্রথম ম্যান অব দি সিরিজ হয়েছেন কোন খেলোয়াড়? স্মৃতি প্রতারণা না করলে খেলোয়াড়টা খালেদ মাসুদ পাইলট। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ২০০২ সালের সিরিজ শ্রীলঙ্কার মাটিতেই। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে বাংলাদেশের পারফর্মেন্স সবসময়েই খারাপ। সেই সিরিজটাও ভালো কাটেনি। তবে এর মাঝেও মাসুদ ব্যতিক্রম ছিলেন।
সিরিজের প্রথম ম্যাচেই ৮৬ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর তুষার ইমরানকে নিয়ে ৯০ রানের জুটি করেন। ১৭৬ রানে তুষারও তাকে ছেড়ে চলে যায়। শেষ পর্যন্ত ২২৬ রান পর্যন্ত করতে পারে বাংলাদেশ, এর মাঝে পাইলট করেন ৫৪ রান। ম্যাচটা শ্রীলঙ্কা জিতে ৫ উইকেটে।
দ্বিতীয় ম্যাচে আরো জগন্য অবস্থা। মাত্র ৭৬ রানে অল আউট হয়ে যায় বাংলাদেশ। পাইলট দলীয় সর্বোচ্চ ১৫ রান করে শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হন। মাত্র ১৫ ওভারেই ২ উইকেট হারিয়ে জিতে যায় শ্রীলঙ্কা।
সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে আগে শ্রীলঙ্কা ব্যাট করে। ২৫৮ রানের লক্ষ্যে নেমে ২০০ রানে অল আউট হয় বাংলাদেশ। পাইলট করেন ৩৭ রান। সিরিজের প্রাপ্তি ছিল অধিনায়ক পাইলটের ম্যান অব দি সিরিজের পুরষ্কার পাওয়া। যতদূর মনে পড়ে সেটাই একজন বাংলাদেশি হিসেবে প্রথম ম্যান অব দি সিরিজ।এরপর আরো কতজন কত কিছু হবে, কিন্তু প্রথম তো একজনই থাকবেন।
সিরিজের একটা ম্যাচেও নিজের দল জয় পায়নি। ব্যাক্তিগতভাবে একটা ম্যাচেও ম্যান অব দি ম্যাচ হননি। সিরিজের সর্বোচ্চ রান কিংবা উইকেটও পাননি। এর পরেও ম্যান অব দি সিরিজ পাওয়ায় ভুমিকা রেখেছিল অধিনায়কত্ব আর লড়াকু মানসিকতা। এভাবে আর কেউ ম্যান অব দি সিরিজের পুরষ্কার পেয়েছে বলে জানা নেই।
একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যাটসম্যানরা ধারাবাহিকভাবে ফ্লপ করতো আর পাইলট লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যনদের নিয়ে দলকে লড়াই করার একটা পুজি এনে দিত।
পাইলট দলের জন্য অন্তঃপ্রান। দলের একমাত্র উইকেট কিপার ছিলেন তিনি। তার কোন প্রতিদন্ধিই ছিল না সেই সময়। অথচ শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে একটা টেষ্ট সিরিজে নিজে না খেলে মুশফিকুর রহিমকে খেলার সুযোগ দেন।
মুশফিক সেই ম্যাচে ৮০ রানের একটা ইনিংস খেলেন। পরবর্তীতে পাইলটকে জিজ্ঞেস করা হলে উনি বলেছিলেন,‘আমার কাছে মনে হয়েছিল আমার বদলে মুশফিক ম্যাচটাতে ভালো খেলবে’।
এরকম চিন্তা কি কেউ করে এই যুগে? এটা তো গেল খেলোয়াড় পাইলটের কথা। বাংলাদেশের উন্নতির যে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়েছিল ১৯৯৭ সালের আই সিসি ট্রফিতে সেখানেও বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি ব্যাটিং গড় (৯২) তার। সেমিফাইনালের ম্যাচে ৭০ রানের একটা ইনিংস খেলে ম্যান অব দি ম্যাচ হন। এছাড়া ফাইনালে ৭ বলে অপরাজিত ১৫ রানের একটা ঝড়ো ইনিংস খেলেন যা কিনা শেষ বলে বাংলাদেশকে জয় পেতে সাহায্য করে।
পাইলট, আমরা ভুলিনি আপনার অবদানের কথা। আজ আপনার জন্মদিন। আমরা যারা আপনার খেলা দেখেছি তারা জানি আপনি কি করেছিলেন দেশের ক্রিকেটের জন্য। জন্মদিনে আপনার জন্য শুভ কামনা।
মন্তব্য চালু নেই