দেশবাসীকে টাইগারদের ঈদ উপহার

দুর্দান্ত জয়ে সিরিজ বাংলাদেশের

পরপর চারটি ওয়ানডে সিরিজ জয়। ভাবলেও গায়ে শিহরণ জেগে উঠে। কিভাবে, কোন উক্তিতে ‘বাংলাদেশ’কে মূল্যায়ন করবে ক্রিকেট বিশ্ব!

বাংলাদেশ! বাংলাদেশ! বাংলাদেশ! স্লোগানে মুখরিত আজ আমাদের অলিগলি। এই স্লোগান শুনলে এমনিতেই উৎসবে ফেটে পড়ে কোটি বাঙালি। আর উৎসবের উপলক্ষ্যটা যখন ‘ক্রিকেট’ তখন উচ্ছ্বাসটা হয় বাঁধভাঙা। আর বাঁধভাঙা উচ্ছ্বাসের উপলক্ষ্য তৈরী করে দিয়েছে মাশরাফি ও তার দল।
দক্ষিণ আফ্রিকাকে সিরিজ নির্ধারণী অঘোষিত ফাইনাল ম্যাচে নয় উইকেটে হারিয়ে ২-১ ব্যবধানে ওয়ানডে সিরিজ জিতে নিয়েছে বাংলাদেশ। আগের দিন সাকিব বলেছিলেন, ভারত ও পাকিস্তানের থেকেও দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জয় হবে ‘সবচেয়ে’ বড় অর্জন।

সাকিবের কথার সূত্র ধরেই তাহলে বলা যায়, বাংলাদেশের ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় অর্জন দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে এই সিরিজ জয়। এর আগে আরও ১৮টি সিরিজ জিতেছিল বাংলাদেশ। গত ডিসেম্বর থেকে শুরু। জিম্বাবুয়ে হারিয়ে ঘরের মাঠে সিরিজ জয় শুরু বাংলাদেশের। এরপর দুই প্রাক্তন বিশ্বচ্যাম্পিয়ন পাকিস্তান ও ভারতের বিপক্ষে জয়। বাংলাদেশের উন্নতি সবার চোখে পড়ছে। ক্রিকেটপ্রেমি থেকে শুরু করে বিশ্লেষকরাও বলছিল, বাংলাদেশ কতটুকু উন্নতি করেছে তা প্রমাণ করতে হবে দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজে।’

কয়েকদিনের ব্যবধানে পুরো ক্রিকেট বিশ্বের সামনেই নিজেদের প্রমাণ করলো বাংলাদেশ। ওপার বাংলার সবচেয়ে বড় পত্রিকা আনন্দবাজারও আজকে বলেছে,‘চট্টগ্রাম তো বটেই, পুরো বাংলাদেশ, এমনকি উপমহাদেশ তাকিয়ে আছে এই আনন্দ সেলিব্রেট করার জন্যে।’ বলাই যায়, পুরো ক্রিকেট বিশ্বই দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারানোর এই মুহুর্তটাকে উযদাপন করে গেল।

১৭০ রানের টার্গেটে ব্যাটিং করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকার বোলারদের পাড়ার বোলারদের মত পেটালেন তামিম ইকবাল ও সৌম্য সরকার। নিজের মাঠে খেলা বলে তামিম ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। কিন্তু সাগরপাড়ের স্টেডডিয়ামে সব আলো কেড়ে নিয়েছিলেন সৌম্য সরকার।

দুই বাহাতি ব্যাটসম্যান প্রতিযোগিতায় নেমেছিলেন কে কার থেকে বেশি শটস খেলবেন। তাতে অবশ্য সৌম্যই এগিয়ে। কম যাননি তামিমও। ইমরান তাহির, ডুমিনি ও মরকেলদের পিটিয়ে নাস্তানাবুদ করেন দেশসেরা ওপেনার তামিমও।

জয়ের থেকে ১৬ রান দূরে থেকে সৌম্য সরকার ৯০ রানে আউট হন। তামিমের সঙ্গে সৌম্যর ১৫৪ রানের জুটি ভাঙেন স্পিনার তাহির। ৭৫ বলে ১৩ চার ও ১ ছক্বায় সৌম্য ৯০ রান করেন। আর হার্ডহিটার তামিম চার ইনিংস পর হাঁকালেন ক্যারিয়ারের ১৮তম হাফসেঞ্চুরির ইনিংস। ৭৭ বলে ৭ চারে তামিম ৬১ রানের এ ইনিংস সাজান। তার সঙ্গে ৫ রানে অপরাজিত থাকেন লিটন কুমার দাস।

তৃতীয়বারের মত নয় উইকেটে জিতল বাংলাদেশ। এর আগে ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ে ও কেনিয়ার বিপক্ষে সর্বোচ্চ ৯ উইকেটে জিতেছিল টাইগাররা।

শুরুতেই টস হার। কিন্তু পথ হারায়নি বাংলাদেশ। বিস্ময়কর মুস্তাফিজ শুরুতেই প্রোটিয়া শিবিরে আঘাত করেন। মুস্তাফিজের উইকেটে আসা বল ক্রস খেলতে গিয়ে উইকেট হারান কুইন্টন ডি কক। আগেই জানা ছিল স্পিন দিয়ে গুড়িয়ে দেওয়া হবে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিং অর্ডার। সেই মোতাবেক সাকিবকে ইনিংসের ষষ্ঠ ওভারেই আক্রমণে নিয়ে আসেন মাশরাফি।

সাফল্য এনে দিতে সময় নেননি বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার। ফাফ ডুপ্লিসিস সাকিবের বলে সুইপ করতে গিয়ে বল হাওয়ায় ভাসিয়ে দেন। দৌড়ে লেগ আম্পায়ারের কাছাকাছি গিয়ে বল নিজের গ্লাভসে নিতে ভুল করেননি মুশফিক। হাশিম আমলাকে দ্বিতীয় শিকারে পরিণত করেন সাকিব ইনিংসের ১৪তম ওভারে। সাকিবের ঘূর্ণিতে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন আমলা। অবশ্য ১২তম ওভারে সাব্বিরের হাতে জীবন পান প্রোটিয়া অধিনায়ক। আমলাকে ১৫ রানে ফিরিয়ে সাকিব ক্যারিয়ারের দুইশতম উইকেটের স্বাদ নেন। দ্বিতীয় বাংলাদেশি হিসেবে এই মাইলফলক স্পর্শ করেন বাহাতি এই স্পিনার।

বৃষ্টির হানা দেওয়ার অগে মাহমুদউল্লাহ নিজের বোলিংয়ের প্রথম ওভারের প্রথম বলেই ফিরিয়ে দেন রাইলি রুশোকে। ৪ উইকেট হারিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকার রান তখন মাত্র ৫০! বিপর্যয়ে থাকা সফরকারী শিবিরের হাল ধরেন ডেভিড মিলার ও জেডি ডুমিনি। ২৩ ওভার শেষে এই দুই ব্যাটসম্যান দলকে ৭৮ রান পর্যন্ত টেনে নিয়ে যান। এরপর চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে হানা দেয় বেরসিক বৃষ্টি। প্রোটিয়াদের চেপে ধরা বাংলাদেশের স্পিনারদের থামিয়ে দেয় বৃষ্টি।

২ ঘন্টা ৫৫ মিনিট বন্ধ থাকার পর ৪০ ওভার খেলার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। প্রোটিয়ারা আরও ১৭ ওভার ব্যাটিং করার সুযোগ পায়। ৬ উইকেট হাতে রেখে শেষ ১৭ ওভারে ৯০ রান সংগ্রহ করে সফরকারীরা। উইকেট হারায় ৫টি। বৃষ্টির পর টাইগার দলপতি মিলার ও ডুমিনির ৬৩ রানের জুটি ভাঙেন। মিলারকে পয়েন্ট সাব্বিরের হাতে তালুবন্দি করান মাশরাফি। যা তার ক্যারিয়ারের ২০০তম উইকেট।

এরপর স্বাগতিক বোলারদের সামনে আর মাথা উচুঁ করে দাঁড়াতে পারেনি সফরকারীরা। সাকিব লং অনে ফারহান বেহারদিনের উইকেট তুলে নিয়ে ৩৩ রানে ৩ উইকেট নেন। প্রোটিয়া শিবিরের শেষ দুই উইকেট তুলে নেন মুস্তাফিজ ও রুবেল। ইনিংসের শেষ বলে দক্ষিণ আফ্রিকার সেরা ব্যাটসম্যান ডুমিনির (৫১) উইকেট তুলে নেন রুবেল।

সাকিবের তিন উইকেটের পাশাপাশি মুস্তাফিজ ও রুবেল দুটি করে উইকেট নেন। একটি করে উইকেট নেন মাহমুদউল্লাহ ও মাশরাফি। ৪০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে ১৬৮ রান সংগ্রহ করলে ডাক ওয়ার্থ লুইস পদ্ধতিতে ১৭০ রানের টার্গেট পায় বাংলাদেশ। খুব সহজেই সেই লক্ষ্যে পৌঁছে যায় টাইগাররা। ৮৩ বল ও নয় উইকেট হাতে রেখেই জয়ের বন্দরে নোঙর ফেলে বাংলাদেশ।



মন্তব্য চালু নেই