বাংলাদেশের ঐতিহাসিক সিরিজ জয়
সিরিজ জয়ের লক্ষ্য নিয়ে রোববার দ্বিতীয় ওয়ানডেতে পাকিস্তানের মুখোমুখি হয় বাংলাদেশ। মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে টস জিতে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৩৯ রান করে পাকিস্তান। ২৪০ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৩৮.১ ওভারে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় বাংলাদেশ। পাশাপাশি পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজ জিতে ইতিহাস গড়েছে বাংলাদেশ।
ব্যাট হাতে তামিম ইকবাল ১১৬ রানে অপরাজিত থাকে। আর মুশফিকুর রহিম ৬৫ রান করেন।
এদিকে লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে কিছুটা আক্রমণাত্মক ব্যাটিং করতে শুরু করে বাংলাদেশ। ফলটা অবশ্য ভালো হয়নি। দলীয় ২২ রানের মাথায় সাজঘরে ফেরেন ক্রমেই আগ্রাসী হয়ে ওঠা সৌম্য সরকার। জুনায়েদ খানের ওভারে চারের হ্যাটট্রিক করেন তিনি। ওই ওভারে প্রথম তিন বলে তিনটি চার মেরে জুনায়েদের শিকার নেন সৌম্য। বিদায়ের আগে ১১ বলে চারটি চারের সাহায্যে ১৭ রান করেন বাংলাদেশের এই তরুণ ওপেনার। দলীয় ২১৮ রানে ৬৫ রান করে আউট হন মুশফিকুর রহিম।
এরপর দ্বিতীয় উইকেট জুটিতে ঘুরে দাঁড়ায় বাংলাদেশ। তামিম ব্যাট চলে সপাটে। আর তাতে বাংলাদেশের স্কোরশিটে রান যেন লাফাতে থাকে। ৩১ বলে ১২টি চারের মারে ফিফটি পূর্ণ করেন তামিম। এটি তার ওয়ানডে ক্যারিয়ারের ২৭তম ফিফটি, পাকিস্তানের বিপক্ষে পঞ্চম।
তবে বিশ্বকাপে আলো ছড়ানো মাহমুদউল্লাহ রিয়াজ এবারও নামের প্রতি সুবিচার করতে পারলেন না। ২৮ বলে ২টি চারে ১৭ রান করে সাঈদ আজমলের বলে সরাসরি বোল্ড হন মাহমুদউল্লাহ। দলকে বিপদে রেখে নিরাপদ আশ্রয় বেছে নিলেন তিনি!
এর আগে প্রথমে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি পাকিস্তানের। ইনিংসের অষ্টম ও নিজের প্রথম ওভারেই সফরকারী শিবিরে আঘাত হানেন রুবেল হোসেন। সরফরাজ আহমেদকে স্লিপে সৌম্য সরকারের ক্যাচে পরিণত করেন এই পেসার। ১১ বলে ৭ রান করেন সরফরাজ। ইনিংসের পরের ওভারেই মোহাম্মদ হাফিজকে বোল্ড করে সাজঘরের পথ দেখান স্পিনার আরাফাত সানি। প্রথম ম্যাচে ৪ রান করা হাফিজ এদিন ডাক মারেন।
এরপর ইনিংসের ১৬ ও ১৭তম ওভারে জোড়া অাঘাত হানেন সাকিব আল হাসান ও নাসির হোসেন। প্রথমে আজহার আলীকে মুশফিকের গ্লাভসবন্দি করান সাকিব। ৬০ বলে ৫ চারে ৩৬ রান করেন আজহার। আর পরের ওভারে ফাওয়াদ আলমকে বোল্ড করেন নাসির। ৬ বল মোকাবিলা করে ডাক মারেন ফাওয়াদ।
সাকিবের দ্বিতীয় শিকারে পরিণত হন প্রথম ওয়ানডেতে দ্যুতি ছড়ানো মোহাম্মদ রিজওয়ান। ২২ বল মোকাবিলা করে ২টি চারের সাহায্যে ১৩ রান করতে সক্ষম হন রিজওয়ান।
এরপর ব্যক্তিগত ৪৪ রানের মাথায় মাশরাফির বলে কট অ্যান্ড বোল্ড হন হারিস সোহেল। তার ৬১ বলে ৪৪ রানের ইনিংসে ছিল ১টি করে চার ও ছক্কা।
শেষ দিকে এসে বাংলাদেশ কিছুটা খেই হারিয়ে ফেলে। সাকিব-মাশরাফিদের খানিকটা ভোগান ওয়াহাব রিয়াজ ও সাদ নাসিম। ৭ উইকেট জুটিতে ৮৫ রান তুলে পাকিস্তানকে লড়াকু সংগ্রহ এনে দেন তারা।
৯৬ বলে ৬টি চার ও ১টি ছক্কার সাহায্যে ৭৭ রান নিয়ে অপরাজিত ছিলেন নাসিম। অপরপ্রান্তে অপরাজিত থাকা ওয়াহাব রিয়াজ করেছেন ৫১ রান। ৪০ বলে ৫টি চার ও ২টি ছক্কায় ইনিংসটি সাজান তিনি।
বাংলাদেশ দলকে আজ নেতৃত্ব দিচ্ছেন নিয়মিত অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। নিষেধাজ্ঞা থাকায় প্রথম ম্যাচে মাঠে নামা হয়নি মাশরাফির। বাংলাদেশের তৃতীয় ক্রিকেটার হিসেবে ১৫০ ওয়ানডে খেলছেন দেশসেরা এই পেসার। দেশের হয়ে ১৪৭টি এবং ২০০৭ সালে এশিয়া একাদশের পক্ষে দুটি ওয়ানডে খেলেছেন নড়াইল এক্সপ্রেস।
মাশরাফির প্রত্যাবর্তনে একাদশে জায়গা হারিয়েছেন পেসার আবুল হাসান রাজু। দীর্ঘদিন পর জাতীয় দলে ফিরে এসেও প্রথম ম্যাচে নজর কাড়তে পারেনি রাজু। ৫ ওভারে ৪২ রান দিয়ে ছিলেন উইকেটশূন্য।
পাকিস্তান দলের কোনো পরিবর্তন আনা হয়নি। প্রথম ম্যাচের একাদশ নিয়ে মাঠে নেমেছে তারা।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৬ বছর ধরে জয় না পাওয়ার আক্ষেপ ঘুচিয়েছে বাংলাদেশ। গত শুক্রবার প্রথম ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে ৭৯ রানে হারিয়ে তিন ম্যাচ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে রয়েছে টাইগাররা। এবার পাকিস্তানের বিপক্ষে টাইগারদের সিরিজ জয়ের হাতছানি।
বাংলাদেশ দল: মাশরাফি বিন মুর্তজা, সাকিব আল হাসান, তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ, নাসির হোসেন, সাব্বির রহমান, মুশফিকুর রহিম, রুবেল হোসেন, তাসকিন আহমেদ, আরাফাত সানি ।
পাকিস্তান দল: আজহার আলী, ফাওয়াদ আলম, হারিস সোহেল, জুনায়েদ খান, মোহাম্মদ হাফিজ, রাহাত আলী, সাঈদ আজমল, সরফরাজ আহমেদ, ওয়াহাব রিয়াজ, সাদ নাসিম ও মোহাম্মদ রিজওয়ান।
মন্তব্য চালু নেই