বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে মমতার কাছে যাবেন পাখি
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের টেলিভিশন তারকা মধুমিতা চক্রবর্তী একাধিক বাংলাদেশি সংবাদমাধ্যমের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের অনুরোধ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে যাবেন বলে জানিয়েছেন। শুক্রবার কলকাতা পুলিশের হেড কোয়ার্টার লালবাজারে বাংলাদেশের তিনটি অনলাইন পত্রিকার বিরুদ্ধে অভিযোগের পর এই কথা জানান তিনি। উল্লেখ্য,একটি জনপ্রিয় টিভি সিরিয়ালে অভিনয়ের সুবাদে মধুমিতা পাখি নামে সমধিক পরিচিত।
সম্প্রতি বাংলাদেশের একাধিক ওয়েবসাইটে তাঁর নামে অপসাংবাদিকতা এবং বিকৃত ছবি প্রকাশের অভিযোগ জানান অভিনেত্রী মধুমিতা। এরপর শুক্রবার ভারতীয় সময় সকাল সাড়ে ১০টা নাগাদ স্বামী সৌরভ চক্রবর্তীকে নিয়ে লালবাজারে যান তিনি। সেখানে কলকাতা পুলিশের যুগ্ম কমিশনার সুপ্রতিম সরকার এবং গোয়েন্দা প্রধান বিশাল গর্গের সঙ্গে দেখা করেন।
এরপর সাইবার ক্রাইম থানায় অভিযুক্ত ওয়েবসাইট তিনটির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ করেন পাখি। তাঁর দাবি, ওয়েবসাইটগুলোতে তাঁর বেশ কিছু ছবির বিকৃত উপস্থাপন করে তাঁর নামে অপসাংবাদিকতা করা হয়েছে।
এর আগে গত সোমবার কয়েকটি বাংলাদেশি ওয়েবসাইটের বিরুদ্ধে তাঁর সম্পর্কে ভুয়া দেহব্যবসার খবরও প্রকাশকে কেন্দ্র করে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছিলেন মধুমিতা। শুক্রবার লালবাজার থেকে বেরিয়ে মধুমিতা বলেন, যা যা সংবাদবিকৃতি দেখতে পেয়েছি এবং অভিযুক্ত ওয়েবসাইটের খবর সবই লিখিতভাবে পুলিশকে জানিয়েছি। ওরা পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।
আর মধুমিতার স্বামী সৌরভ বলেন, ‘পুলিশ আমাদের বিষয়গুলো মনযোগ সহকারে শুনেছে এবং পদক্ষেপ নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে। তবে বেশ কিছুদিন ধরেই মধুমিতার ছবি বিকৃত (মর্ফ) করা হচ্ছিল। কিন্তু বাড়তে বাড়তে তা চরম পর্যায়ে চলে যায়। বাংলাদেশের তিনটি ওয়েবপোর্টাল ওর সম্পর্কে ভুয়া তথ্য দিয়েছিল। এই ধরনের ঘটনা এখনই বন্ধ হওয়া উচিত বলে মনে করি।’
লালবাজার পুলিশ সূত্রে খবর, অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত শুরু করতে চলেছে লালবাজার সাইবার ক্রাইম সেলের গোয়েন্দারা। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক লালবাজার পুলিশের এক মূখপাত্র জানান, এই অভিযোগটি জমা দেওয়া হয়েছে সাইবার ক্রাইম বিভাগে। এই রাজ্যে কারা এই ধরনের লিংক পড়ে এবং সোশ্যাল মিডিয়ায় সেগুলিকে প্রচার করে সেই বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হবে। কিন্তু বাংলাদেশের যে সাইট এটা করেছে তাদের বিরুদ্ধে কলকাতা পুলিশের পক্ষে সরাসরি কিছুই করার নেই। তবে এই বিষয়ে বাংলাদেশ পুলিশকে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে জানানোর কথা ভাবা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন লালবাজারের ওই কর্মকর্তা।
এদিকে লালবাজার থেকে বের হবার পরই মধুমিতা এবং তাঁর স্বামী সৌরভ চক্রবর্তীকে প্রশ্ন করা হয়েছিল, এ বিষয়ে তাঁরা মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়ের দ্বারস্থ হবেন কি না। সাংবাদিকরা এই সময়ে জানান, কিছুদিন আগেই দেখা গিয়েছিল যে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অভিযোগের ভিত্তিতে বিধাননগরের এক পুর-কমিশনারকে মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে গ্রেপ্তার করা হয়। এর উত্তরে পাখি এবং সৌরভ বলেন, ‘এই বিষয়ে সুবিচারের জন্য মুখ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি। এছাড়া আইনজীবীর পরামর্শ করে আমরা প্রয়োজনে মাননীয় মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গেও কথা বলার চেষ্টা করব। ’
বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গের টেলি দুনিয়ায় অন্যতম জনপ্রিয় অভিনেত্রীদের মধ্যে একজন মধুমিতা চক্রবর্তী। সেই মধুমিতা সংবাদমাধ্যমের কাছে বলেছেন, ‘এই ঘটনায় স্বভাবতই আমার মানসিক অবস্থা অত্যন্ত খারাপ।’
যারা খবরের সত্যতা যাচাই না করে পরিবেশন করলো তাদের তীব্র নিন্দা করে বলেন, ‘আমি জানি না কী করণে আমাকে নিয়ে এই ধরনের ঘটনা ঘটানো হয়েছে। কেন করেছে তাও বুঝতে পারছি না। তা ছাড়া আমি তো ডাকসাইটে কোনো হিরোইনের রোলও করি না। কেন এমন করা হলো বুঝতে পারছি না। আজ যে মিথ্যে রটনা আমাকে নিয়ে ঘটল কাল তো সেটা অন্য কোনো অভিনেত্রীদের সঙ্গেও ঘটতে পারে। যারা এমন কাজ করল তারা কি ধরা পড়বে না?’ এরই মধ্যে বাংলাদেশের একটি টেলিফিল্মে কাজ করেছেন বলেও জানান মধুমিতা।
তবে এই বিষয়ে বাংলাদেশের সব সংবাদমাধ্যমের দিকে আঙুল তোলাও যে ঠিক নয় তাও জানান তিনি। মধুমিতা বলেন, ‘এর আগেও আমাকে নিয়ে দু’একটা ফেক নিউজের কথা আমার কানে এসেছিল। কিন্তু আমি জানতাম অনেক অভিনেত্রীকে নিয়ে এমন অনেক মিথ্যা ছাপা হয়, যা সচরাচর মানুষ বিশ্বাস করেন না। কিন্তু এবারে যেটা ঘটেছে সেটা ভয়ঙ্কর। যার প্রতিবাদে এবারে পুলিশের দ্বারস্থ হতে বাধ্য হয়েছি আমি।’
মন্তব্য চালু নেই