বহুল আলোচিত গ্রীন টি এর উপকারিতা নিয়ে ৩০টি অজানা তথ্য
গ্রীন টি’র সাথে আমরা সবাই মোটামুটি পরিচিত। তবে একে অন্য সব সাধারণ পানীয়ের কাতারে ফেললে আপনি ভুল করবেন। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে যে, নিয়মিত গ্রীন টি পান বার্ধক্যের ছাপকে ঘুচিয়ে ত্বকের জৌলুস ফিরিয়ে আনে এবং ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমায়। এছাড়াও গ্রীন টি তে রয়েছে আরো অসংখ্য গুনাগুণ। এমনকি গ্রীন টি তে থাকা এই উপকারী গুণ গুলোর জন্য এখন বিখ্যাত বিউটি ব্র্যান্ড গুলো তাদের পণ্যে গ্রীন টির উপাদান সংযোজন করছে।
প্রায় ৪০০০ বছর ধরে গ্রীন টি বা সবুজ চা, চায়নাতে ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এটি কিছু কিছু ক্ষেত্রে রোগ প্রতিরোধ করে আবার কিছু কিছু ক্ষেত্রে সরাসরি ঔষধ হিসেবে কাজ করে রোগ নিরাময় করে। বর্তমানে গ্রীন টির অনেক গুন ই এশিয়ান এবং পশ্চিমা দুই অঞ্চলের বিজ্ঞানীদের দ্বারাই সায়েন্টিফিক রিসার্চ দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে। গ্রীন টির রয়েছে ৩০ টি গুন-
1. গ্রীন টি ক্যান্সারের চিকিতসা ও প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। গ্রীন টিতে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট ভিটামিন সি এর চাইতে ১০০ গুন ও ভিটামিন ই এর চাইতে ২৪ গুন ভালো। এটি বিশেষ ভাবে ত্বকের ও খাদ্যনালীর ক্যান্সারের চিকিতসা ও প্রতিরোধে ব্যবহৃত হয়। এছাড়াও এটি ত্বকে বলিরেখা পরাকে রোধ করে।
2. গ্রীন টিতে থাকা এন্টি অক্সিডেন্ট শরীরে নিয়মিত তৈরী হওয়া ফ্রি র্যা।ডিকেল গুলো সরিয়ে নেয়। এই ফ্রি র্যা ডিকেল গুলো ডিনএনএ ড্যামেজ করে বার্ধক্য আনয়ন করে ও ত্বকে বলিরেখা ফেলে দেয়। সুতরাং নিয়মিত গ্রীন টি গ্রহণে বার্ধক্যের লক্ষন দেরীতে আসে ও ত্বক অনেকদিন সুন্দর থাকে।
3. গ্রীন টি স্মৃতি শক্তির উন্নতি ঘটায়। যদিও স্মৃতি বিনষ্টকারী রোগ আলঝেইমার্স এর কোন চিকিতসা নেই, কিন্তু এটি আলঝেইমার্স এর জন্য দায়ী এসিটাইলকোলিন এর মাত্রে নিয়ন্ত্রন করে অবস্থার কিছুটা উন্নয়ন ঘটাতে পারে।
4. গ্রীন টির এন্টি অক্সিডেন্ট ব্রেন এর কোষ ড্যামেজ এর ফলে সৃষ্ট পারকিনসন ডিজিজ প্রতিরোধ করতে পারে। নিয়মিত গ্রহণে ইতঃমধ্যে পারকিনসন হয়ে যাওয়া রোগীর অবস্থারও উন্নতি ঘটায়।
5. গ্রীন টি শরীরে খারাপ কোলেস্টেরল (LDL) এর মাত্রা কমায়। ফলে ভালো কোলেস্টেরল (HDL) এর অনুপাত বৃদ্ধি পায়।
6. এটি কোলেস্টেরল কমিয়ে হার্টের অসুখ ও হার্ট এটাক প্রতিরোধ করে। এমনকি হার্ট এটাকের পরের কোষগুলোর দ্রুত মরে যাওয়া প্রতিরোধ ও দ্রুত নিরাময় নিশ্চিত করে।
7. এনজিওটেনসিন নামক যে উপাদানটি হাই প্রেশারের জন্য দায়ী, গ্রীন টি তা নিয়ন্ত্রন করে প্রেশার নিয়ন্ত্রনে রাখে।
8. গ্রীন টি মেটাবলিসম বাড়িয়ে ফ্যাট বার্নে সহায়তা করা। অর্থাৎ ওজন কমায়। একদিনে গ্রীন টি ৭০ ক্যালরি বার্নে সহায়তা করে যা প্রায় ২০ মিনিট হাটার সমান ক্যালরি।
9. গ্রীন টি ফ্যাট সেল গুলোতে গ্লুকোস ঢোকা বন্ধ করে দেয়। সুতরাং কারো যদি খাদ্যাভাস ও লাইফস্টাইল হেলদি হয় ও নিয়মিত গ্রীন টি গ্রহণ করে, তবে মেদ বৃদ্ধি হবেনা।
10. গ্রীন টি মেটাবলিসম বাড়িয়ে রক্তে আকস্মিক গ্লুকোস বেড়ে যাওয়া নিয়ন্ত্রন করে। এর ফলে ডায়বেটিস রোগীদের অবস্থার উন্নতি ঘটে।
11. গ্রীন টির একটি এমাইনো এসিড স্ট্রেস ম্যানেজমেন্ট এ ভূমিকা রাখে।
12. এটি লিভার ফেইলিওর এর রোগীর লিভার ট্রান্সপ্লান্টেশন এর পরের জটিলতা রোধ করে। তাছাড়া ফ্রি র্যা ডিকেল ধ্বংস করে ফ্যাটি লিভার এর রোগীর লিভারের উন্নতি ঘটায়।
13. গ্রীন টি তে থাকে ক্যাটেচিন ফুড পয়জনিং এর জন্য দায়ী ব্যকটেরিয়া ধ্বংস করে এবং এই ব্যাকটেরিয়া হতে জাত টক্সিন কে নষ্ট করে দেয়।
14. গ্রীন টি দাতের প্লাক সৃষ্টিকারী ব্যক্টেরিয়া কে মেরে দাতের ক্ষয়রোধ করে। এছাড়াও এটি মুখে দুর্গন্ধ সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়ে গুলোকেও মেরে ফেলে।
15. গ্রীন টি তে থাকে ফ্লুওরাইড যা হাড়কে শক্ত করে। নিয়মিত গ্রহণে এটি হাড়ের ঘনত্ব বৃদ্ধি করে।
16. গ্রীন টি rheumatoid arthritis এর চিকিতসায় ব্যবহৃত হয়। এটি জয়েন্ট এর cartilage ক্ষয়কারী এনজাইম কে রোধ করে জয়েন্টের ব্যথা প্রতিরোধ করে।
17. গ্রীন টি multiple sclerosis এর চিকিতসায় ব্যবহৃত হয়।
18. গ্রীন টির পলিফেনল ও ফ্ল্যাভোনয়েড রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে এবং সাধারণ ভাইরাল ও ব্যকটেরিয়াল ডিজিজ গুলো প্রতিরোধ করে।
19. গ্রীন টির ভিটামিন সি সর্দি কাশি প্রতিরোধ করে।
20. গ্রীন টির epigallocatechin-3-gallate (EGCG) এলার্জি নিরাময়ে সহায়তা করে।
21. গ্রীন টির থিওফাইলিন শ্বাসতন্ত্রের মাসল কে রিল্যাক্স করে এজমার অবস্থার উন্নতি ঘটায়।
22. প্রাচীন চীনে কানের ইনফেকশন এর চিকিতসায় গ্রীন টি দিয়ে তুলো ভিজিয়ে কান পরিষ্কার করা হতো।
23. হার্পিস এর চিকিতসায় যে ক্রীম (ইন্টারফেরন) ব্যবহৃত হয়, গ্রীন টি তার কার্যক্ষমতা বৃদ্ধি করে। এর জন্য আগে স্থানটি গ্রীন টি দিয়ে ধুয়ে এরপর ক্রীম লাগাতে হবে।
24. জাপানের একটি গবেষনায় দেখা গিয়েছে যে গ্রীন টির epigallocatechin-3-gallate (EGCG), সুস্থ্য কোষের সঙ্গে HIV এর সংযোজন ব্যহত করে। ফলে AIDS এর মাত্রা নিয়ন্ত্রিত হয়।
25. এছাড়াও গ্রীন টি এনার্জি ও স্ট্যামিনা বাড়ায়
26. হজমে সহায়তা করে
27. পানিশূন্যতা রোধ করে
28. নিয়মিত গ্রহণে ব্রন প্রতিরোধ করে
29. রক্ত জমাট বেধে স্ট্রোক হওয়াকে রোধ করে
30. এতে থাকা কিছু ভিটামিন ক্ষতস্থানের অস্বাভাবিক রক্তজমাট বাধা কে প্রতিরোধ করে
গ্রীন টির রহস্যের মূল উপাদান হলো epigallocatechin gallate (EGCG) নামক বিশেষ একধরণের পলিফেনল যা অত্যন্ত শক্তিশালী এন্টিঅক্সিডেন্ট।
“ফ্রেঞ্চ প্যারাডক্স” নামে পরিচিত একটি ঐতিহাসিক প্রশ্ন ছিলো যে অপেক্ষাকৃত ফ্যাটি খাবার খাওয়া সত্বেও কেন ফ্রান্সের মানুষ দের আমেরিকার তুলনায় কম হার্ট এটাক হয়? বিজ্ঞানীরা অনেক খুজে অবশেষে বের করলেন যে এর জন্য দায়ী হলো ফরাসীদের প্রচুর রেড ওয়াইন পানের অভ্যাস। রেড ওয়াইন এ থাকে প্রচুর resveratrol নামের একধরণের পলিফেনল যা ফ্যাটি ডায়েট এবং ধূমপানের নেতিবাচক প্রভাবকে কমায়। পরবর্তীতে ১৯৯৭ সালে University of Kansas এর বিজ্ঞানীরা প্রমান পান যে গ্রীন টি তে থাকা epigallocatechin gallate (EGCG) নামক পলিফেনল resveratrol এর দ্বিগুন শক্তিশালী। এটিই ব্যাখ্যা করে যে শতকরা ৭৫% ধুমপায়ী নিয়েও জাপানে হার্ট এটাক এত কম কেন হয়। গ্রীন টি যে বিশেষ প্রক্রিয়ায় তৈরী হয় তাতে EGCG এর পরিমাণ অক্ষুন্ন থাকে কিন্তু ব্ল্যাক টি তে তা প্রক্রিয়াকরনের সময় নষ্ট হয়ে যায়।
এখন কথা হলো গ্রীন টি এর থেকে পুরোপুরি উপকারে পেতে দিনে কয় কাপ খাওয়া উচিত। যদিও এ নিয়ে নানা মতভেদ আছে, কিন্তু বেশীরভাগ বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে দিনে ৪/৫ কাপ গ্রীন টি পান করা উচিত। এর বেশী খেলে কিছুটা ঘুমের সমস্যা হতে পারে। প্রেগনেন্ট মহিলারা ডাক্তার এর পরামর্শ নিয়ে খাবেন। আর গ্রীন টি বানানোর সঠিক নিয়ম হলো, ২-৪ গ্রাম ওজনের টি ব্যাগ কে চুলা থেকে ফুটিয়ে নামানো গরম পানিতে তিন মিনিট ভিজিয়ে রেখে পান করতে হবে।
মন্তব্য চালু নেই