বহুমূত্র রোগীদের জন্য ডায়াবেটিক আম উদ্ভাবন
আম বাংলাদেশের সর্বাপেক্ষা জনপ্রিয় ফল। স্বাদ, গন্ধ, পুষ্টিমান ও ব্যবহার বৈচিত্র্যের ভিন্নতায় আমকে ‘ফলের রাজা’ বলে অভিহিত করা হয়। আমের ব্যবহার কাঁচা ও পাকা উভয় অবস্থায় কদরণীয়। তবে ফলটি সুস্বাদু, সুমিষ্ট হওয়ায় তা খেতে অনেক সময় অস্বস্তিবোধ করেন বহুমূত্র রোগীরা। এবার ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য উদ্ভাবিত হলো ডায়াবেটিক আম (বাউ আম-৩)।
ডায়াবেটিক আমটি সুস্বাদু, সুমিষ্ট, রঙ, রস, আঁশহীন ও সুগন্ধি মেশানো দৃষ্টিনন্দন এবং আকর্ষণীয়। এই অভিনব জাতটি উদ্ভাবনে সফলতা দেখিয়েছেন বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্মপ্লাজম সেন্টারের পরিচালক ও উদ্যান তত্ত্ব বিভাগের প্রফেসর ড. আব্দুর রহিম।
দীর্ঘ ১৬ বছর ধরে গবেষণা করে তিনি উদ্ভাবন করেছেন ডায়াবেটিক বা বাউ আম-৩। এই আমে গ্লুকোজের মাত্রা স্বাভাবিকের তুলনায় কম বিধায় তা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য বেশ উপকারী। ইতোমধ্যে এ জাতের আমের চারা সারাদেশে সরবরাহ করা শুরু করেছে বাকৃবি জার্মপ্লাজম সেন্টার।
ডায়াবেটিক আম সম্পর্কে উদ্ভাবক ড. রহিম বলেন, এ জাতের আম নিয়মিত ফলধারণকারী ও বামন প্রকৃতির জাত। গাছে প্রতি বছরই দুবার ফুল ও ফল ধরে। জুন মাসের শেষ দিকে এ জাতের পাকা ফল পাওয়া যায়। ফুল আসা থেকে ফল পরিপক্ব হতে পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ মাস সময় লাগে। ফলের আকার মাঝারি ও লম্বাটে প্রকৃতির। ফলে রসের পরিমাণ কম কিন্তু আঁশের পরিমাণ বেশি। চামড়া পাতলা ও খোসা সহজেই ছড়ানো যায়। ফলের গড় ওজন ২৮৯ গ্রাম। প্রতি হেক্টরে ১০-১৫ টন ফলন পাওয়া সম্ভব।
গবেষণায় ডায়াবেটিক বাউ আমের রাসায়নিক বৈশিষ্ট্য দেখা গেছে, এই জাতের ফলের দৈর্ঘ্য-১১.২০ সে.মি., প্রস্থ-৭.৩৭ সে.মি. এবং পুরুত্ব-৬.৪৭ সে.মি। আহারোপযোগী অংশের পরিমাণ মোট ফলের ৭৩.৯৬ শতাংশ। আর্দ্রতা-৮১.৪৪%; শুষ্ক পদার্থ-১৮.৫৬%; পি-এইচ মান-৩.৯৯; ট্রাইটেবল এসিডিটি-০.৪৫%; জারিত চিনি-১০.৬৮%, বিজারিত চিনি-২.৭৯% এবং মোট-১৩.৪৭%; সুগার ও এসিডিটির অনুপাত-২৯.৭৬; টিএসএস-২০.৩৩%।
ড. রহিম আরও বলেন, আমাদের দেশে ডায়াবেটিক রোগীদের সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে। অনেক রোগী বেশি পরিমাণে আম খেতে চাইলেও তা পারেন না। এই আমে অন্যান্য আমের তুলনায় সুগার লেভেল কম হওয়ায় এটা ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য উপকারী। ডায়াবেটিক বাউ আম-৩ ওই সব রোগীদের মন ভরে খাওয়ার সুযোগ করে দেবে। ইতোমধ্যে এ জাতের আমের চারা সারাদেশে সরবরাহ করা শুরু করেছে বাকৃবি জার্মপ্লাজম সেন্টার।
মন্তব্য চালু নেই