বরিশালে মহাজোটে মহাকোন্দল কৌশলে মাঠ গোছাচ্ছে বিএনপি
ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাকর্মীদের অবমূল্যায়ন করে সদ্য যোগদান করা হাইব্রিড নেতাদের প্রাধান্য দেয়ায় নগরীসহ বরিশালের দশ উপজেলার তৃণমূল পর্যায় আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন ক্ষমতাসীন দল মহাজোটে তীব্র কোন্দল দেখা দিয়েছে। এ সুযোগে কেন্দ্রের নির্দেশে কৌশলে দলকে সংগঠিত করতে মাঠ গোছাচ্ছে বিএনপি।
আ’লীগ দলীয় সূত্রমতে, গত উপজেলা পরিষদের নির্বাচনে আ’লীগ ও মহাজোটের শরিক দলের আলাদা প্রার্থী হওয়ার পর থেকেই এখানে কোন্দল দেখা দিয়েছে। পরবর্তীতে যা হামলা ও মামলায় রূপ নেয়। আ’লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা অভিযোগ করেন, পর পর দু’বার দল ক্ষমতায় থাকার পরেও দলের সকল প্রকার সুযোগ সুবিধা ভোগ করছেন বিএনপি-জামায়াত থেকে সদ্য আ’লীগে যোগদান করা হাইব্রিড নেতারা।
তারা আরও জানান, দলের বর্তমান নেতৃত্বস্থানীয়দের কাছেই অবমূল্যায়ন হতে হচ্ছে ২০০১ সালের নির্বাচন পরবর্তী সময়কার আ’লীগের নির্যাতিত নেতাকর্মীদের। দলের ওইসব সুবিধাভোগী কতিপয় নেতৃত্বদানকারীদের হাত ধরে সদ্য আ’লীগে যোগদান করা হাইব্রিড নেতাদের প্রাধান্য দিয়ে কোনঠাসা করে রাখা হয়েছে প্রকৃত নেতাকর্মীদের।
এমনকি শক্তি প্রদর্শনের জন্য ইতোমধ্যে হাইব্রিড নেতাদের হাতে বরিশালে জীবন দিতে হয়েছে ছাত্রলীগের দু’ আদর্শবান কর্মীকে। হত্যার উদ্দেশ্যে হামলা চালিয়ে গুরুতর জখম করা হয়েছে দু’যুবলীগ নেতাকে। তাদের (হাইব্রিড) আ’লীগ কর্মীদের হাত থেকে রেহাই পায়নি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি পর্যন্ত। প্রকাশ্য দিবালোকে একটি সরকারি প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ব্যাপক ভাংচুরের সময় এ ছবি দুটিও ভাংচুর করা হয়। একইভাবে হামলা ও মামলা দিয়ে দমন করা হচ্ছে মহাজোটের শরিক দল ও মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম শক্তি বাংলাদেশের ওয়াকার্স পার্টির নেতাকর্মীদেরও।
সূত্রে আরও জানা গেছে, হাইব্রিড নেতাদের দিয়ে নেতৃত্ব টিকিয়ে রাখতে কতিপয় পৌর মেয়র ও দলের পদ পদবীধারিরা নিজ দলে অভ্যন্তরীন কোন্দল ও শরিক দলের সাথে বিরোধ সৃষ্টির কারণে সরকারের নানামুখী উন্নয়নের প্রচার-প্রচারনা বরিশালে অনেকটাই ভেস্তে যাচ্ছে। অথচ সদ্যযোগদান করা হাইব্রিড নেতারা মুখে আ’লীগের কথা বললেও তারা দলের মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টি করে কৌশলে বিএনপি-জামায়াতের সিনিয়র নেতাদের সাথে যোগাযোগ অব্যাহত রেখে তাদের লক্ষ্য পূরণ করে যাচ্ছে।
এরমধ্যে শুধু উজিরপুর উপজেলাতেই গত ৬ মাসে প্রায় ৫শতাধিক বিএনপির পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ ক্যাডারদের আওয়ামীলীগে যোগ দেওয়ানো হয়েছে,যারা কোনদিনও নৌকায় ভোট দেবে না বা আদর্শগত ভাবে আওয়ামীলীগ করবেনা। তারা শুধুমাত্র বর্তমান সময়কে নিজেদের অনুকুলে রেখে আওয়ামীলীগের তকমা লাগিয়ে গোপনে বিএপিকে শক্তিশালী করাই তাদের মুল এজেন্ডা। ১৯৯৬ সালেও বিএপির ক্যাডাররা নিজেদের বাঁচাতে আওয়ামীলীগে যোগ দিয়ে নৌকার প্রকৃত ভোটারদের চিহ্নিত করে (বিশেষ করে সংখ্যালঘু) দখল,জুলুম,নির্যাতন নিপিরন করেছিলো এবং ২০০১ সালের ১লা অক্টোবরের নির্বাচনের রাতেই ওইসকল ভন্ড যোগদানকারী আওয়ামীলীগাররা রাতারাতি ভোল পাল্টে বিএনপির পূর্বের ক্যাডার হিসাবে আত্ম প্রকাশ করে (হিন্দু সম্প্রদায় সহ) উজিরপুরের তৎকালিন আওয়ামীলীগের ত্যাগী ও পরিশ্রমি নেতাদেরকে বাড়ি বাড়ি গিয়ে খুঁজে খুঁজে শাররিক ও মানষিক ভাবে নির্যাতন নিপিরন করেছিল,যা আজকের আওয়ামীলীগ নেতাদের কোনমতেই ভুলে যাওয়ার কথা নয় এবং এটাও সকলের মনে আছে যে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত আগৈলঝাড়া ও উজিরপুর উপজেলার বিল অঞ্চলের হিন্দুদের মা,বোনদের সম্ভ্রম বাঁচাতে পৈত্রিক ভিটে বাড়ি ফেলে রাতের আঁধারে পালিয়ে যেতে হয়েছিলো। হাইব্রিড ওই সব ক্যাডারদের অত্যাচারে হাজার হাজার নৌকা মার্কার ভোটাররা পঙ্গুত্ব বরন করে কোনমতে জীবন নিয়ে বেঁচে আছে ।
এ অবস্থায় যুগযুগ ধরে যারা নৌকা মার্কার নিবেদিত আম জনতা (যারা কোন পদে নেই ,শুধু নৌকায় ভোট দেয় আর মনেপ্রানে আওয়ামীলীগকে ভালোবাসে) তারা অবশ্যই প্রশ্ন করতে পারে আওয়ামীলীগ নেতারা এত ঘটা করে বিএনপির পলাতক ও প্রায় ভাগারে পর্যবসিত হওয়া ক্যাডারদের ডেকে এনে আওয়ামীলীগে যোগ দেওয়ালেই কি তারা আওয়ামীলীগার হয়ে যাবে.?
অন্যদিকে নব্য আওয়ামী বিএনপিরা (বিএনপি থেকে আ’লীগে যোগদানকৃত) অনেকেই আবার আওয়ামী লীগের ব্যানারে আগামী পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে মেয়র,কাউন্সিলর,চেয়ারম্যন,মেম্বর পদে প্রার্থী হতে জোড় তৎপরতাও শুরু করেছেন। আ’লীগের তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীরা হাইব্রিড দমনে আগামী পৌর ও ইউনিয়ন নির্বাচনে পরিবর্তনের পক্ষে অবস্থান নিয়ে ইতোমধ্যে মাঠে কাজও শুরু করেছেন।
রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, দলের নিতিনির্ধারকরা তৃণমূল পর্যায়ের নেতাকর্মীদের যৌক্তিক দাবিগুলো মূল্যায়িত না করলে আগামী পৌর ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনেই আ’লীগকে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতির মুখোমুখী হতে হবে। এ ব্যাপারে জেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও বরিশাল-২ আসনের সংসদ সদস্য এ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন, এতো বড় দলে খুঁটিনাটি কিছু ভুল থাকতেই পারে। খুব শীঘ্রই তা সংশোধন করা হবে,তবে সুবিধা বাদিদের কোন মতেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না ।
সূত্রে আরও জানা গেছে, বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার নির্দেশে জেলা শহরসহ প্রতিটি উপজেলায় দলকে সংগঠিত করতে প্রাণপন কাজ করে যাচ্ছেন কেন্দ্রীয় নেতা ও মহানগর বিএনপির সভাপতি এ্যাডভোকেট মজিবর রহমান সরোয়ার।
এছাড়াও প্রতিটি উপজেলায় প্রকাশ্যেই দল গোছাতে কাজ করে যাচ্ছেন স্ব-স্ব এলাকার সিনিয়র নেতৃবৃন্দরা। ঈদ-উল আযহার পূর্ববতী সময় থেকে অদ্যাবধি গৌরনদী উপজেলা বিএনপির সভাপতি ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সোবাহান ও পৌর বিএনপির সভাপতি আশির দশকের কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা এস.এম মনির-উজ জামান মনির নেতাকর্মীদের সাথে ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময়ের নামে প্রতিনিধি সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন প্রক্রিয়া ইতোমধ্যে শেষ করেছেন।
বিগত ওয়ান ইলেভেনের সময়ও এখানকার বিএনপির নেতাকর্মীদের সংগঠিত করে রেখেছিলেন আশির দশকের ওই কেন্দ্রীয় ছাত্রনেতা।
একইভাবে আগৈলঝাড়ায় এস.এম আফজাল হোসেন, মুলাদীতে আব্দুস সাত্তার খানসহ জেলার বাকেরগঞ্জ, বাবুগঞ্জ, হিজলা, মেহেন্দীগঞ্জ, বানারীপাড়া, উজিরপুর ও বরিশাল সদর উপজেলায় ইতোমধ্যে দলকে সংগঠিত করা হয়েছে। এখন শুধু কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া চলছে। দলের দুর্দীনে নেতাকর্মীদের দ্বারে দ্বারে গিয়ে যারা দলকে সংগঠিত করেছেন, তাদেরকেই জেলা, মহানগর, উপজেলা ও পৌর শাখার গুরুত্বপূর্ণ পদে অসীন রাখার জন্য বিএনপির তৃণমূল পর্যায়ের অসংখ্য নেতাকর্মীরা বিএনপির চেয়ারপার্সনের কাছে জোরদাবি করেছেন।
মন্তব্য চালু নেই