বরকতময় ‘লাইলাতুল কদর’

মাহে রমজানের ২৪ রোজা আজ। আর পবিত্র রমজানের শেষ দশদিন নাজাতের।

এই শেষ দশদিনের বেজোড় রাতে আল্লাহ পাক তার বান্দাকে এমন একটি রাত উপহার দিয়েছেন যা হাজার মাস অপেক্ষা উত্তম। যা ‘লাইলাতুল কদর’ নামে অভিহিত।

এই রাতের মান মর্যাদা, আমল সবকিছুই হাজার মাসের চেয়ে উত্তম। এই রাতের ফজিলত বর্ণনা করতে গিয়ে আল্লাহ পাক পুরো একটি সূরা নাজিল করেছেন।

এমন বরকতময় রাতেই আল্লাহ রাব্বুল আলামীন তাঁর প্রিয় হাবিব (সা.) এর ওপর কোরআন নাজিল করেছেন। এই সন্মানিত রাতকেই বলা হয়েছে লাইলাতুল কদর।

প্রকৃতপক্ষে লাইলাতুল কদর অত্যন্ত বরকতময় রাতের নাম। প্রসিদ্ধ তাফসির গ্রন্থ ‘সাবীর’ ষষ্ঠ খণ্ডে এর ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে, তকদিরের বিষয়াবলীকে নৈকট্যশীল ফেরেশতাদের রেজিস্ট্রারে প্রকাশ করা হয়। এ রাতে আল্লাহ তা’আলা কোরআন মজিদকে লওহে মাহফুজ থেকে প্রথম আসমানে নাজিল করেছেন। তারপর প্রায় ২৩ বছর ধরে ক্রমান্বয়ে তাঁর প্রিয় হাবিব (সা.) এর ওপর তা নাজিল করেন।

বরেণ্য মুফাসসির মুফতি আহমদ ইয়ার খান নঈমী এ রাতকে লাইলাতুল কদর বলার বেশ কয়েকটি কারণ তুলে ধরেন।

এক- এতে এক বছরের ভালমন্দ নির্ধারিত করে ফেরেশতাদের হাতে অর্পন করা হয়। কদর মানে তকদির অথবা কদর মানে সন্মান অর্থাৎ সন্মানিত রাত। দুই- এতে কদর তথা সন্মানিত কোরআন নাজিল হয়েছে। তিন- যে এবাদত এই রাতে করা হয় তাতে মান মর্যাদা রয়েছে। চার- সংকীর্ণতা অর্থাৎ ফেরেশতারা এ রাতে এতো বেশি আসে যে পৃথিবী সংকীর্ণ হয়ে যায়, তথা জায়গা সংকুলান হয় না। এসব কারণে এ রাতকে শবে কদর বলা হয়েছে। (মাওয়াইযে নঈমিয়া, ৬২ পৃষ্ঠা)।

লাইলাতুল কদর বান্দাকে উপহার দেওয়ার কারণ: মাহে রমজানের মতো বরকতময় মাসের শেষ দশদিনের বেজোড় রাতে লাইলাতুল কদর নিহিত। লাইলাতুল কদরের মতো বরকতময় রাত বান্দাকে উপহার দেওয়ার নিশ্চয়ই কারণ রয়েছে।

প্রসিদ্ধ তাফসিরগ্রন্থ ‘আযিযি’তে এর কারণ উল্লেখ করে বলা হয়েছে- পূর্ববর্তী নবীগণের উম্মতগণের দীর্ঘায়ু ছিল। তাই তারা অনেক বেশি এবাদত বন্দেগী করতে পারতেন। আর মহানবীর (সা.) উম্মতগণের আয়ু তাদের তুলনায় অনেক কম। উম্মতের প্রতি তাঁর (সা.) হৃদয়ে স্নেহের ঢেউ উঠলো। আর তিনি কিছুটা ব্যথিত হলেন এই ভেবে যে, আমার উম্মত যদিও খুব বড় বড় এবাদত করে তবুও তো তাদের (আগের নবীদের ‍উম্মতদের) আমলের সমান করতে পারবে না।

রাসুলুল্লাহ (সা.) এর অন্তরের বেদনা দূর করতেই আল্লাহ তা’আলা তার প্রিয় হাবীবকে (সা.) রমজান মাসে লাইলাতুল কদর তথা ভাগ্যের রজনি উপহার দিলেন। এর সুসংবাদ দিয়ে সূরা কদর নাজিল করলেন। (তাফসিরে আযিযি, ৪র্থ খণ্ড, ৪৩৪ পৃষ্ঠা)।

সূরা কদর নাজিলের কারণ বর্ণনা করতে গিয়ে বনী ইসরাইলের উম্মতদের মধ্যে হযরত শামউন (র.) নামক এক মুত্তাকীর লম্বা হায়াত, আমল, জিহাদের দৃষ্টান্ত রয়েছে। তাঁর এবাদত বন্দেগী ও আমলের কথা শুনে সাহাবাগণের মনে কম হায়াতের জন্য কিছুটা পেরেশানি হলো।

তখন তারা রাসুলের (সা.) কাছে আরয করলেন, ‘ইয়া রাসুলুল্লাহ (সা.) হযরত শামউনের মতো এবাদত করতে না পারলে বনী ইসরাইল তো আমলের দিক দিয়ে আমাদের থেকে এগিয়ে যাবে। রাসুলে পাক (সা.) সাহাবাদের কথা শুনে কিছুটা ব্যথিত হলেন। তখনই হযরত জিব্রাইল (আ.) মহানবীর (সা.) দরবারে হাজির হয়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে সূরা কদর পেশ করেন। এই এক রাতের এবাদত হযরত শামউন (র.) এর হাজার মাসের এবাদতের চেয়ে উত্তম বলে পরিগণিত হবে। (তাফসিরে আযিযি, ৪র্থ খণ্ড, ৪৩৪ পৃষ্ঠা)।

মূলত: এবাদত বন্দেগীর পূর্ণতা লাভে ওই একটি রাত মহানবী (সা.) আমাদের জন্য প্রতিপালকের কাছ থেকে উপহার নিয়ে এসেছেন। আমাদের উচিত হাজার মাসের চেয়ে উত্তম এ রাতে এবাদত বন্দেগীতে মশগুল হয়ে থাকা।

লাইলাতুল কদরের ফজিলত সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। হযরত আবু হুরাইরা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (সা.) এরশাদ করেছেন, যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে ও সওয়াব লাভের আশায় সওম পালন করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। যে ব্যক্তি ঈমানের সঙ্গে সওয়াব লাভের আশায় লাইলাতুল কদরে রাত জেগে দাঁড়িয়ে সালাত (নামাজ) আদায় করে, তার পূর্ববর্তী গুনাহ মাফ করে দেওয়া হয়। (সহিহ বুখারী)।

প্রকৃতপক্ষে সাহাবিদের আবেদন-মিনতির কারণে রাসুলুল্লাহ (সা.) এর উসিলায় আল্লাহ পাকের কাছ থেকে আমরা লাইলাতুল কদরের মতো এতবড় বরকতময় একটি রাত পেয়েছি।

তাই আসুন, পবিত্র লাইলাতুল কদরে হেলায় সময় নষ্ট না করে এবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে নিজেকে গুনাহমুক্ত করে পবিত্র করে তুলি।



মন্তব্য চালু নেই