বছরজুড়ে বিশ্ব তোলপাড় করা হলিউডের যত বিতর্কিত কাণ্ড
চলচ্চিত্র, টেলিভিশন এবং অন্যান্য ক্ষেত্রে হলিউডের বাস্তব প্রভাব অনস্বীকার্য। একইভাবে এখানকার কেলেঙ্কারি ও বিতর্কও মানুষকে ভীষণভাবে প্রভাবিত করে। জনি ডেপ থেকে রায়ান লোকটে, নেইট পারকার, রজার অ্যাইলিসের মতো তারকাদের ব্যক্তি জীবন প্রভাবিত করেছে তাদের ক্যারিয়ারকেও, প্রভাবিত হয়েছে চলচ্চিত্র শিল্প এবং ভক্তরা। তাই এবার ফিরে দেখা যাক, হলিউডে ২০১৬ সালের সবচেয়ে বড় কেলেঙ্কারি ও বিতর্কগুলো ছিল কোনগুলো-
জনি ডেপের বিরুদ্ধে পারিবারিক সহিংসতার অভিযোগ: বেশ কিছুদিন ধরে জনি ডেপ একের পর এক ফ্লপ ছবির গ্যাড়াকলে রয়েছেন। যার সর্বশেষ নিদর্শন চলতি বছরে মুক্তি পাওয়া ‘অ্যালিস থ্রো দ্য লুকিং গ্লাস’। কিন্তু তার জীবনে এটাই একমাত্র সমস্যা নয়। ২০১৬ সালে জনিডেপ খবরের শিরোনাম হয়েছেন তার ব্যক্তিগত জীবনের জন্য।
চলতি বছরের মে মাস থেকে জনি ডেপ-অ্যাম্বার হার্ডের সম্পর্কের টানাপোড়েন বাড়তে থাকে। এরপর ডেপের বিরুদ্ধে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনের অভিযোগ এনে বিবাহ বিচ্ছেদের জন্য আবেদন করেন হলিউড তারকা অ্যাম্বার। মাত্র ১৮ মাসের বিবাহিত জীবনে ইতি ঘটে। অ্যাম্বারের আইনজীবী তার মুখে আঘাত চিহ্নসহ ছবিও প্রকাশ করেন।
বিবাহ বিচ্ছেদে সম্মত হলেও আদালতে জনি ডেপ তার বিরুদ্ধে অ্যাম্বারের হার্ডের করা অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। চলতি বছরের আগস্টে অ্যাম্বারকে ৭০ লাখ ডলার দেওয়ার বিনিময়ে বিবাহ বিচ্ছেদ সম্পন্ন হয়। অ্যাম্বার ওই পুরো অর্থ আমেরিকান সিভিল লিবারটিজ ইউনিয়ন এবং চিলড্রেনস হসপিটাল অব লস অ্যাঙ্গেলেসকে দান করেন।
তবে জানা গেছে, ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান’ সিরিজের পরের ছবি ‘পাইরেটস অব দ্য ক্যারিবিয়ান: ডেড মেন টেল নো টেইলস’-এ ‘ক্যাপ্টেন জ্যাক স্পারো’ চরিত্রে অভিনয় করছেন। তিনি ‘ফ্যান্টাস্টিক বিস্টস হোয়্যার টু ফাইন্ড দেম’ ছবির পরবর্তী সিকুয়্যালেও অভিনয় করছেন বলে জানা গেছে। অপরদিকে, ‘অ্যাকুয়াম্যান’ ছবিতে ‘মিরা’ চরিত্রে অভিনয়ের ডাক পেয়েছেন অ্যাম্বার। তবে জনি ডেপ ফ্লপের গণ্ডি পেরোতে পারেন কিনা, এটাই দেখার বিষয়।
ব্রাঞ্জোলিনার বিচ্ছেদ ও বিতর্ক: হলিউডের আলোচিত জুটি ব্র্যাড পিট ও অ্যাঞ্জেলিনা জোলি চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে বিবাহ বিচ্ছেদের ঘোষণা দেন। নিজেদের মধ্যকার ‘বিদ্বেষপূর্ণ মতপার্থক্যের’ কথা উল্লেখ করে অ্যাঞ্জেলিনা চলতি বছরের ১৯ সেপ্টেম্বর পিটের সঙ্গে বিবাহবিচ্ছেদের আবেদন করেন। তার দাবি, ‘পরিবারের মঙ্গলের জন্যই’ তিনি এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
পিটের বিরুদ্ধে অ্যাঞ্জেলিনা অভিযোগ করেন, তিনি বাজেভাবে বকাবকি করেন এবং ওই পরিবারের ব্যক্তিগত বিমানে এক ঝগড়ায় তিনি বড় ছেলে ম্যাডক্সের ওপর হাত তুলেছিলেন। তবে মার্কিন কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এফবিআই ওই ঘটনার তদন্তের পর পিটকে ছাড়পত্র দিয়েছে। লস অ্যাঞ্জেলেসের ডিপার্টমেন্ট অব চিলড্রেন অ্যান্ড ফ্যামিলি সার্ভিসও ব্রাডের বিরুদ্ধে পারিবারিক কলহের অভিযোগে তদন্ত করেছে এবং ব্র্যাডকে সেখান থেকেও ছাড়পত্র দেওয়া হয়। তাদের ছয় সন্তান জোলির হেফাজতে থাকলেও পিটকে তাদের সঙ্গে অনুমতি সাপেক্ষে সময় কাটানোর সুযোগ দেন পারিবারিক আদালত। পারিবারিক কলহ ব্র্যাডের ক্যারিয়ারেও ছাপ ফেলেছে বলে মনে করা হচ্ছে। বিবাহ বিচ্ছেদের পর তার প্রথম ছবি ‘অ্যালাইড’ বক্স অফিসে তেমন কোন ছাপ ফেলতে পারেনি।
ওয়েস্ট ও কার্দাশিয়ানের বিপরীতে সুইফট: মার্কিন র্যাপার কেনি ওয়েস্টের ‘ফেমাস’ ভিডিও শুরু থেকেই জড়িয়েছিল বিতর্কে। প্রথমেই টেইলর সুইফটসহ তারকাদের নগ্ন ছবি দিয়ে ভিডিও প্রকাশ করেন তিনি। কেনি ও কিমের দাবি, এই গান সম্পর্কে সবকিছুই জানতেন টেইলর সুইফট। তবে সুইফটের দাবি, তারা মিথ্যাচার করছেন।
স্বামী ওয়েস্টের সঙ্গে সুইফটের কথোপকথন গোপনে রেকর্ড করে সেটির একাধিক ভিডিও সোশ্যাল মিডিয়াতে পোস্ট করেছেন কিম। কিমের পোস্ট করা একাধিক ভিডিওর একটিতে টেইলরকে বলতে শোনা যাচ্ছে, ‘তুমি আমাকে সম্মান দেখিয়ে এই গান সম্পর্কে আমাকে জানিয়েছো, এ কারণে আমি সত্যিই আনন্দিত।’
সেখানে টেইলর আরও বলেন, তিনি আগামী গ্র্যামির রেড কার্পেটে এই গান সম্পর্কে কথা বলবেন। ভিডিও পোস্ট করে সেখানে তিনি দাবি করেন, এই বিতর্কিত গানের লিরিক ও ভিডিও সম্পর্কে অবগত ছিলেন সুইফট। তা সত্ত্বেও অকারণে তার স্বামীকে হেনস্থা করেছিলেন এই গায়িকা।
তবে সুইফটের দাবি, যে গান তিনিই শোনেননি, সেই গানের অনুমোদন কী করে দেবেন! কিমের ভিডিওটি প্রকাশ করার এক ঘণ্টা পর সুইফট তার মন্তব্য প্রকাশ করেন। তিনি জানান, এই গান সম্পর্কে জানা থাকলে তিনি কখনোই তার নাম জড়ানোর অনুমোদন দিতেন না।
অস্কারে শ্বেতাঙ্গদের আধিপত্য: বৈচিত্র্যময়তা হলিউডের দীর্ঘদিনের ইস্যু। কিন্তু ২০১৬ সালের অস্কার মনোনয়ন তালিকা ঘোষণা করার পর বির্তকটি নতুন মাত্রা পায়। মনোনয়ন তালিকায় কোনও অশ্বেতাঙ্গ ছিলেন না। এতে শুরু হয় তুমুল সমালোচনা। অনেক বড় বড় তারকাই সমালোচনায় যোগ দেন। স্পাইক লি ও জাদা পিংকেট স্মিথের মতো তারকারা অস্কার অনুষ্ঠান বয়কট করেন। অ্যাকাডেমিও বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চায়নি। পুরস্কার প্রদান অনুষ্ঠানে উপস্থাপকের দায়িত্ব দেওয়া হয় কৃষ্ণাঙ্গ ক্রিস রককে। এছাড়া অস্কার প্রদান অনুষ্ঠানের সময় বর্ণবৈষম্যের অভিযোগের বিষয়ে একটি লিখিত বিবৃতিও দেয় অ্যাকাডেমি।
হোয়াইটওয়াশ: হলিউডে হোয়াইটওয়াশ বলতে সাধারণত ঐতিহাসিক কৃষ্ণাঙ্গ চরিত্রে শ্বেতাঙ্গদের দিয়ে অভিনয় করানোকে বুঝানো হয়। চলতি বছর এ ধরনের বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটে। সবচেয়ে বেশি বিতর্কের শীর্ষে ছিল ডক্টর স্ট্রেঞ্জ। মার্বেল প্রোডাকশনের ছবিতে এনসিয়েন্ট ওয়ান হিসেবে টিলডা সুইনটনকে নির্বাচিত করায়। এনসিয়েন্ট ওয়ান মূল কমিকে ছিলেন একজন তিব্বতি নাগরিক। দ্য গোস্ট ইন দ্য শেল ছবিতেও সমালোচনায় পড়েন স্কারলেট জোহানসন। সমালোচনা ছিল দ্য গ্রেট ওয়াল ছবিতে ম্যাট ডেমনের অভিনয়ও। এ ছবিতে চীনে শ্বেতাঙ্গ উদ্ধারকারী হিসেবে ম্যাটকে উপস্থাপন করা হয়েছে।
ট্রাম্প বনাম হলিউড: সত্যিকার অর্থে ‘দ্য অ্যাপ্রেন্টিস’ অনুষ্ঠানের সাবেক উপস্থাপক ট্রাম্পের যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হওয়াটাই একটি আশ্চর্য ঘটনা। কিন্তু বিনোদনশিল্পের সঙ্গে জড়িতদের সমালোচনা ছিল অপ্রত্যাশিত। প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার আগে ফক্স নিউজের কেলির সঙ্গে ট্রাম্পের বিরোধ নিয়ে যথেষ্ট লেখালেখি হয়েছে। নির্বাচনি প্রচারণার সময় কেলিকে ট্রাম্পের একটি মন্তব্যের পর বিরোধটি চূড়ান্ত রূপে পৌঁছায়। এছাড়া ট্রাম্প স্যাটারডে নাইট অনুষ্ঠান নিয়েও আগ্রহী হয়ে ওঠেন। এনবিসি টিভির এ অনুষ্ঠানটি এক সময় উপস্থাপনা করেছেন ট্রাম্প। ২০১৫ সালে তা পুনরায় শুরু হওয়ার পর ট্রাম্প এর সমালোচনা শুরু করেন। সূত্র: ভ্যারাইটি
মন্তব্য চালু নেই