বঙ্গবন্ধু মরেননি, তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী- ফারুক

জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু সব সময় দুঃখী মানুষের কথা বলতেন। আজকের এই দিনগুলোতে তাকে আমি হৃদয়ভরে স্মরণ করি। ‘বঙ্গবন্ধু’ শব্দটা এলেই আমাকে কথা বলতে হয়। তাকে নিয়ে আমি নিজের সঙ্গে কথা বলি।
তিনি নিপীড়িত মানুষের কাছের লোক ছিলেন। তিনি ক্ষুধার্ত মানুষের কাছের লোক ছিলেন। তিনি এই দেশের কৃষক, কামার, মাঝিসহ প্রতিটি মানুষের কাছের মানুষ ছিলেন। সে কারণেই ‘বঙ্গবন্ধু’ উপাধী দেওয়া হয়েছে। তার সম্পর্কে বলতে গেলে হাজার বছরেও শেষ হবে না।
বাংলাদেশ আজ স্বাধীন। এটা এমনি এমনি হয়নি। অনেক কষ্টের ফলে এ দেশ স্বাধীন হয়েছে। এককথায় যদি বলি- তার জন্মই হয়েছিল এ দেশের কোটি কেটি মানুষের জন্য। গ্রামের প্রতিটি মানুষের দুঃখ, ক্ষুধা তিনি দেখেছেন। শিক্ষা, সংস্কৃতি এগুলো তার রক্তে বহমান ছিল। তার রক্ত কথা বলত। ৭ মার্চে তিনি তার শেষ কথা বলেছিলেন- ‘আমি সংস্কৃতির মুক্তি চাই।’ সবকিছু মিলিয়ে বঙ্গবন্ধু ছিলেন অসাধারণ একজন নেতা। আমাকে জিজ্ঞেস করলে বলব- তিনি অসাধারণ একজন শিল্পী ছিলেন। বঙ্গবন্ধু কখনো মরেননি, তিনি মৃত্যুঞ্জয়ী।
আমি বঙ্গবন্ধুকে খুব কাছ থেকে দেখেছি। তিনি অনেক সময় সোফায় বসে থাকতেন, আমি পাশ থেকে দেখতাম তার পকেটে টাকা দেখা যাচ্ছে। তখন ওই টাকা নেওয়ার জন্য হাতও দিয়েছি। তিনি হাত ধরেও ফেলেছেন। এ রকম ছোট ছোট অনেক ঘটনা রয়েছে। যা জীবন চলার পথে স্মরণ করে দেয় তার সঙ্গে কি রকম সম্পর্ক ছিল। আমি তো তার কাছে সন্তানের মতো ছিলাম। আমার মতো হাজার হাজার ছেলে রয়েছে তার। তারাও তার সান্নিধ্য পেয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর ভালোবাসা পেয়েছেন, আদর পেয়েছেন। তাকে আজ অন্তর দিয়ে স্মরণ করছি। এবং বলব- বঙ্গবন্ধু চিরকাল আমাদের মাঝে আছেন, তিনি চিরকাল আমাদের মাঝে থাকবেন। তার কথা এখনো আমি শুনতে পাই। তিনি বলতেন, ‘তোরাই তো আমার সোনার ছেলে। তোরাই তো এই দেশটাকে সোনার বাংলা তৈরি করবি।’ বঙ্গবন্ধু মরেননি; তাকে হত্যা করতে পেরেছে কিন্তু ওরা তাকে মারতে পারেনি।
স্বাধীনতা যুদ্ধের আগে থেকেই আমি ফিল্মে যুক্ত হই। নিজেকে বাঁচানোর জন্য আমি ফিল্মে যুক্ত হয়েছিলাম। ছয় দফা আন্দোলনের কারণে নানা ধরনের হয়রানিমূলক মামলা হয় আমার বিরুদ্ধে। তখন ছাত্রলীগের ক্ষুদ্র নেতা হিসেবে আমার নামে ৩৭টি মামলা ছিল। এখান থেকে বাঁচার জন্য আমি ফিল্মে যুক্ত হই। আজকের ফারুক হব, এ জন্য ফিল্মে আসিনি।
স্বাধীনতা যুদ্ধের পর যখন বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম, তখন তিনি বলেছিলেন, ‘তুই নাকি রং মেখে ঢং শুরু করেছিস।’ একথা শুনে আমি একটু ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলাম। তখন তিনি বলেছিলেন, ‘আমার কী কোনো অধিকার তোদের প্রতি নেই! আজকে তো স্বাধীন দেশের নাগরিক আমরা। কথার মধ্যে একটু আনন্দও তো করা যায়। তুই যেখানে আছিস সেখানেই থাক। তুই অভিনয় কর। আর্ট কালচার এমন একটি মাধ্যম, যেখান থেকে সবচেয়ে বড় সংগ্রাম করা যায়। সাংস্কৃতিক বিপ্লব করা যায়। আমি যদি কোনো দিন এ দেশের মানুষের সঙ্গে বেঈমানি করি, তুই এখান থেকেই আমার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করবি। বিপ্লব ঘটাবি।’
আবার জাতির পিতা মিটিংয়ে গেলে তার মনোযোগ নেওয়ার জন্য ১০-১৫ জন ছেলে নিয়ে তার সামনে ঘোরাঘুরি করতাম। তিনি এত মজার মানুষ ছিলেন যে, তিনি এসব বুঝতেন। এরপর স্টেজে উঠে তাকে বলতাম, ‘আমারটা দেন’। বলতেন, ‘তোরটা মানে?’ আমি তখন বলতাম, ‘আমার দলেরটা, আমি লোকজন নিয়ে না আসলে এত লোকজন হতো নাকি? তখন তিনি বলতেন, ‘কতজন নিয়ে আসছিস?’ বলতাম, ‘১৮-২০ জন।’
আসলে ৫-৬ জন নিয়ে গিয়েছিলাম। তিনি এটাও বুঝতেন। তিনি বলতেন, ‘আমার তো মনে হয় তোর সঙ্গে ৭-৮ জনের বেশি ছিল না।’ এরপর আস্তে করে তিনি কিছু টাকা দিয়ে দিতেন। তিনি বুঝতেন, আমরা এ টাকাটা দিয়ে কিছু কিনে খাব। তিনি মানুষকে টাকা দিয়ে কিনতেন না, হৃদয় দিয়ে কিনতেন।
উদার মনের মানুষ ছিলেন তিনি। দু-এক কথায় বলে শেষ করা যাবে না। আমার কেন জানি বারবার মনে হয়- আমাদের মতো পাগল যারা তারা কিন্তু পাগল নয়। সত্যের পাগল, সুন্দরের পাগল। সেই সত্য আর সুন্দরের আরেক নাম শেখ মুজিবুর রহমান। তার সেই সুন্দর আমরা দেখতে পাই। আশা করব, এই সুন্দরকে দেখতে দেখতে একদিন শেখ হাসিনা এ দেশের প্রতিটি মানুষের হাত ধরে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলায় নিয়ে যাবেন। এই প্রত্যাশা করছি।
অনুলিখন : রাহাত সাইফুল
মন্তব্য চালু নেই