‘বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড’ অপার সম্ভাবনাময় দ্বীপটি মানুষের অজানাই থেকে গেল

অপার সম্ভাবনা নিয়ে সমুদ্রবুকে জেগে উঠেছে চর বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড। সুন্দরবনের হিরণ পয়েন্ট, দুবলারচর ও লোনা পানির মাছের খনি সোয়াচ অব নো গ্রাউন্ডের মাঝামাঝি বঙ্গোপসাগরের গভীরে জেগে ওঠা বিশাল ভুখণ্ডই বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড।

মংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ১২০ নটিক্যাল মাইল ও বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন উপকূলের দুবলারচর- হিরণ পয়েন্ট থেকে ১০ নটিক্যাল মাইল দূরে সাগরের গভীরে প্রকৃতির আপন মহিমায় গড়ে ওঠা এ চরকে সাজাতে পারলে এটি হতে পারে দেশের সবচেয়ে বড় পর্যটন কেন্দ্র।

একযুগ আগে বঙ্গপসাগরে মাছ ধরতে যাওয়া জেলেরা খুবই ছোট এ দ্বীপটিকে চিনতেন পুতনির চর হিসেবে। বাগেরহাটের জেলে বহরদাররা এ দ্বীপটির নাম রাখেন বঙ্গবন্ধুর নামে।

২০০৪ সালের ডিসেম্বরে তারা এ দ্বীপটির নাম বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড লিখে একটি সাইবোর্ড টানিয়ে দেন। এরপর থেকে ওই দ্বীপটির নাম হয়ে যায় বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড।

এ উপকূলে মাছ আহরণে থাকা একাধিক জেলের কাছ থেকে জানা গেছে, প্রকৃতির নিয়মে জেগে ওঠা বিশাল আয়তনের এ দ্বীপটি নিয়ে সরকারি কোনো জরিপ হয়নি। তবে জেলেদের দাবি- বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড প্রায় ১০ কিলোমিটার লম্বা ও পূর্ব-পশ্চিমে ৮ কিলোমিটার প্রশস্ত।

বর্ষা মৌসুমেও বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডের অধিকাংশ এলাকায় জোয়ারের পানি ওঠে না। প্রাকৃতিকভাবে জন্মাতে শুরু করেছে সুন্দরি, কেওড়া, গেওয়া, পশুর, গরান, ধন্দুল, বাইন, আমুর, টাইগার ফার্নসহ বিভিন্ন লতাগুল্ম ও অর্কিড।

ইকোট্যুরিস্টদের নিরাপত্তা ও সার্বিক বিষয়ে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডে কোস্টগার্ড ও ট্যুরিস্ট পুলিশের ক্যাম্প স্থাপনের পাশাপাশি মেডিকেল ক্যাম্প, সুপেয় পানির ব্যবস্থা, প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষায় পর্যাপ্ত সাইক্লোন শেল্টার, আধুনকি বার, সুইমিংপুল, শপিং কমপ্লেক্স, হোটেল-মোটেল ও গ্যাংওয়ে নির্মাণ, পর্যটকদের ন্যূনতম এ সুযোগ-সুবিধাটুকু নিশ্চিত করা গেলে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড ইকো ট্যুরিস্টদের জন্য হয়ে উঠবে পর্যটনের গুরুত্বপূর্ণ স্থান।

বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডের চারপাশে সমুদ্রের স্বচ্ছ নীল জল, নানা প্রজাতির পাখির কিচির-মিচির শব্দ, সৈকতে আছড়ে পড়া সমুদ্রের ঢেউ, বাতাসের শো-শো শব্দে মানুষের মনকে প্রকৃতির গভীরে নিয়ে যায়। মাইলের পর মাইল দীর্ঘ এ সমুদ্র সৈকতে বসে দেখা মেলে সূর্যোদয় ও সূর্যাস্তের। প্রায় ৮-১০ কিলোমিটার দীর্ঘ সমুদ্র সৈকতেজুড়ে দেখা মেলে কচ্ছপ, হাজারো লাল রঙের ছোট-ছোট শিলা কাকঁড়া। স্বচ্ছ নীল জলে ঘুরছে বিভিন্ন প্রজাতির ছোট-বড় সামুদ্রিক মাছ, কখনো কখনো দেখা মেলে ডলফিনের।

প্রাকৃতির অপরূপ সৌন্দর্যের লীলাভূমি এ বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ড যে কোনো দেশি-বিদেশি ইকোট্যুরিস্টদের জন্য আর্কষণীয় স্থান। তবে বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের এ উজ্জ্বল সম্ভাবনাময় স্থানের প্রচার-প্রচারণার না থাকায় কোনো দেশি-বিদেশি ইকোট্যুরিস্টদের আনাগোনা নেই।

দেশের সমুদ্র বিজয়ের পর ব্লু ইকোনমির কারণে এ দ্বীপটি শুধু প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের লীলাভূমিই নয়, জলদস্যু দমন, চোরাচালান প্রতিরোধ ও সমুদ্র নিরাপত্তায় রাখবে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। এ লক্ষ্যে কোস্টগার্ড এ দ্বীপে একটি শক্তিশালী বেইজ ক্যাম্প করতে যাচ্ছে।

আর বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডে কোস্টগার্ডের বেইজ ক্যাম্প নির্মাণ হলে ইকোট্যুরিস্টরা (প্রতিবেশ পর্যটক) ঘুরে দেখতে পারবেন বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডের অপরূপ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য।

কোস্টগার্ডের কেবিন ক্রজারে করে মংলা কোস্টগার্ড ঘাঁটি থেকে বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডে যেতে সময় লাগে তিন ঘণ্টা।

মংলা কোস্টগার্ডের পশ্চিম জোনের স্টাফ অফিসার (গোয়েন্দা)লেফট্যানেন্ট এএম রাহাতুজ্জামান বলেন, বঙ্গবন্ধু আইল্যান্ডে ইকোট্যুরিজমের অপার সম্ভাবনাসহ গভীর সমুদ্রে মংলা বন্দরের দেশি-বিদেশি জাহাজের নিরাপত্তা, চোরাচালান প্রতিরোধের পাশাপাশি ট্যুরিস্ট, জেলে-বনজীবীদের নিরাপত্তার কথা মাথায় রেখে এ দ্বীপে কোস্টগার্ডের বেইজ ক্যাম্প নির্মাণ করা হবে। এটি নির্মিত হলে দেশি-বিদেশি জাহাজের নিরাপত্তা মনিটরিং সহজ হবে। রাডারের মাধ্যমে সমুদ্র উপকূলে আমাদের ব্লু ইকোনমি জোনে নিরাপত্তা দেয়া সহজ হবে।



মন্তব্য চালু নেই