ফোন সেক্সের নামে প্রতারণা, দুই ভাই আটক

যুগে যুগে চলে আসা যৌনতা এখন ডিজিটাল যুগে এসে রকম ফের হচ্ছে। শারীরিক যৌন সুখের চেয়েও ভার্চুয়াল কিংবা ফোনে সেক্স করতে কিছু বিকৃত রুচির যৌন পিপাসু পুরুষ অতি মাত্রায় উৎসাহী হয়ে উঠছে।

এই ধরণের পুরুষদের জন্য নতুন ফাঁদ ফেলেছে একটি চক্র। তাদেরকে ফেসবুক কিংবা বিভিন্ন পর্নো ওয়েব সাইটে নির্দিষ্ট মোবাইল নম্বর দিয়ে ফোন সেক্স কিংবা ভিডিও সেক্সের আমন্ত্রণ জানানো হয়। সাথে জুড়ে দেওয়া হয় সুন্দর কোনও কিশোরীর ভুয়া ছবি।

আর সেই ললনার অাহ্বানে সাড়া দিয়ে দেশ-বিদেশ থেকে যৌন পিপাসু কিছু পুরুষ ওই নম্বরে ফোন দিয়েও দিনের পর দিন ফোন সেক্স করে যাচ্ছেন সম্পূর্ণ অন্ধবিশ্বাসের ওপর। বিনিময়ে ওই সব পুরুষদের বিলাতে হচ্ছে শত শত টাকা। নির্দিষ্ট সময়ের জন্য নির্দিষ্ট পরিমাণে টাকা দিয়ে তারা করে যাচ্ছেন ফোনের অপর প্রান্তের পুরুষটির সাথে ফোন সেক্স! এভাবে মিটানোর চেষ্টা করছেন নিজের যৌন ক্ষুধা!

পাঠক ! ভাবছেন, টাকার বিনিময়ে ফেসবুক কিংবা ওয়েব সাইটে সুন্দর ছবিওয়ালা নারী ও কিশোরীর সঙ্গে কথা বলছেন বিকৃত রুচির যৌন পিপাসু পুরুষরা? না! কোন নারী কিংবা কিশোরী নয়। শত শত পুরুষ কমর উদ্দিন (২১) ও নেজাম উদ্দিন (২৩) নামে দুই ভাইয়ের সাথেই এতোদিন ফোন সেক্সের নামে টাকা বিলিয়েছেন!

আর সেটি কিভাবে হয়, তাহলে শুনুন বায়েজিদ থানা পুলিশের হাতে আটক কমর উদ্দিনে কাছ থেকেই। তিনি বলেন, ‘র‌্যাংগস কোম্পানির জে টু মডেলের মোবাইল সেটেই অটোমেটিক সেট করা থাকে মেয়েলি কন্ঠের স্বর। সেই মোবাইল সেট থেকে কথা বললে অপর প্রান্ত থেকে শুনা যাবে মেয়েলি কণ্ঠ। আর এভাবে বিভিন্ন ধরণের যৌন কথাবার্তা বলে তাদের কাছ থেকে ঘণ্টা প্রতি টাকা নেওয়া হয়।’

বিস্তারিত ব্যাখা দিতে গিয়ে কমর উদ্দিন বলেন, ‘ফেসবুকে চামিলি সেন ও রাজসী বড়ুয়া ও ঝুমকা রানী নামে তিনটা ভুয়া আইডি খোলা হয়। সেখানে সুন্দর সুন্দর মেয়েদের ছবি আপলোড করে ফোন ও ভিডিও সেক্স করার জন্য নম্বর দিয়ে আহবান জানানো হয়। এরপর সেখান থেকে নম্বর সংগ্রহ করে অনেকে ফোন সেক্স করেন। বিনিময়ে আমি বিকাশের মাধ্যমে প্রতি কলে পাঁচশ এক হাজার টাকা পায়। অাবার অনেকে কথা বলার পর টাকা দেয়না।’

তাহলে শুনুন কারা এদের কাছে ফোন করে বিকৃত রুচির সেক্স করে? তিনি বলেন, ‘চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে অনেকে ফোন করে। তবে বেশিরভাগ ফোন কলার হচ্ছে প্রবাসী। তারা টাকা দিতে কৃপণতা করেনা। তবে তাদের সঙ্গে একটু রসের রসের সেক্সসুয়াল কথা বলতে হয়। একবার একজন তিন হাজার টাকা পর্যন্ত দিয়েছিল।’

তাহলে যদি শত শত কল আসে এই দুই ভাইয়ে মোবাইলে। তাহলে তারা কতো টাকা ইনকাম করে এই ফোন সেক্স করে? তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, দিনে একজন বা দুই জনের বেশি টাকা দেয়না। আবার অনেকে টাকার কথা বললে ফোন সংযোগ বিছিন্ন করে দেয়। সব মিলিয়ে মাসিক ২০ থেকে ৩০ হাজার টাকা আয় হয় এই ফোন সেক্সের বিনিময়ে।

তবে কী কারণে এই প্রতারণায় এসেছে চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার হাসখামা এলাকার বানিন্দা ব্যাংক সিকিউরিটি নাছির উদ্দিনের দুই ছেলে। এর মধ্য বড় ছেলে নেজাম উদ্দিন মেরিস সিগারেটের বিক্রয় প্রতিনিধির চাকুরীটাও ছেড়ে দিয়েছেন ছোট ভাই কমর উদ্দিনের পাল্লায় পড়ে। কমর উদ্দিন ও তার বড় ভাই নেজাম দুজনেই এমইএস কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাস করেছেন। তবে এখন দুজনেই বেকার হয়ে এই প্রতারণায় নেমেছেন।

কমর উদ্দিন বলেন, ‘আমার বাবা আর মা এবং ছোট ভাইসহ আমরা মোট পাঁচজনের সংসার। বাবা রূপালী ব্যাংকের বোয়ালখালী শাখায় সিকিউরিটি গার্ড হিসেবে চাকুরি করে মাত্র সাত হাজার চারশ টাকা বেতন পান। এরমধ্য আমরা থাকি বায়েজিদের মাঝিরঘোণা এলাকায় ভাড়া বাসায়। পাশাপাশি সংসারের খরচ ও সদ্য বিবাহিত ছোট বোনের শ্বশুর বাড়ির লোকজনের অথিতি অাপ্যায়ণের খরচ মেটানো কষ্ট সাধ্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। বাবা বলেছে ঘরে টাকা দিতে। কিন্তু একদিন এই বুদ্ধিটা (ফোন সেক্স) মাথায় আসার সেটি কাজে লাগালে ভালোই রেসপনস পায়। পরে ধীরে ধীরে অরো তিনটা মোবাইল সেট কিনে ব্যাপক আকারে সেটি করতে থাকি। আমার দেখাদেখিতে বড় ভাইকেও সেই কাজে লাগিয়ে দেয়, ইনকামও বাড়তে থাকে।’

তিনি আরো বলেন, ‘আমাদের যেখানে বর্তমানে বাসা সেখানে নেটওয়ার্ক ডিস্টার্ব হওয়ায় পার্টি ছুটে যাচ্ছিল। সেকারণে আরেফিন নগর এলাকায়েদেড় হাজার টাকা ভাড়ায় একটি ব্যাচেলর রুম নেয়। আর সেখানে থেকেই এই কাজ চালিয়ে যাচ্ছিলাম।’

কমর আরো বলেন, ‘অনেক সময়, অনেকে ফোন সেক্স নয়, ভিডিও সেক্স করতে অফার করে। তখন ধরা খাওয়ার ভয়ে আমরা তার সাথে কোনও বাহানা ধরে সংযোগ বিছিন্ন করে দেই। এছাড়া কেউ দেখা করতে চাইলে তার সাথেও যোগাযোগ বিছিন্ন রাখি।’

এই প্রতারকদের গ্রেপ্তার প্রসঙ্গে বায়েজিদ থানার ওসি মোহাম্মদ মহসীন বলেন, ‘গোপন সংবাদের ভিত্তিতে শুক্রবার সন্ধ্যায় আরেফিন নগর থেকে এই দুই ভাইকে আটক করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা কিভাবে ফোনে সফটওয়্যারের মাধ্যমে মেয়েলি কন্ঠে প্রতারণা করে টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে সেটি স্বীকার করেছে। এখন অভিযোগকারী খোঁজার পাশাপাশি তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। এসময় তাদের ব্যবহৃত পাঁচটি মোবাইল ফোন সেটও জব্দ করা হয়।’

ওসি আরো বলেন, ‘সন্ধ্যার পর থেকে থানায় রাখা তাদের মোবাইল ফোন গুলোতে শত শত পুরুষ কল করে ফোন করতে চাইছে। এদের বেশির ভাগই প্রবাসী মধ্যপ্রাচ্যের।’

এদিকে বায়েজিদ থানায় আটক দুইজনের পিতা নাছির উদ্দিন বলেন, ‘আমি ছেলেদের সংসারে টাকা দিয়ে সহযোগিতা করতে বলেছিলাম কিন্তু তারা এই ধরণের একটি কাজ করে আমি জানিনা।’



মন্তব্য চালু নেই