ফুড ভিলেজে ভাসমান যাত্রীদের খাওয়ানো হচ্ছে নিম্নমানের পঁচা-বাসী খাবার

সিরাজুল ইসলাম শিশির, সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:- বাংলাদেশ সরকার যখন শিশুশ্রম বন্ধ করে তাদের প্রাথমিক শিক্ষা শতভাগ নিশ্চিত করার জন্য কঠোর আইন প্রণয়নসহ নানা পদক্ষেপ গ্রহণ করছে, ঠিক তখনও কতিপয় স্বার্থান্বেষী মানুষ নিজেদের স্বার্থ হাসিলের জন্য নানা অজুহাতে শিশু-কিশোরদের নানা কাজে, এমনকি ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত করে তাদের শিক্ষা গ্রহণ থেকে বঞ্চিত করছে। এমনই এক নজির স্থাপন করেছে সিরাজগঞ্জ শহরের অদুরে হাটিকুমরুল (সিরাজগঞ্জ রোড) নামক স্থানে অবস্থিত ফুড ভিলেজ নামক একটি অভিজাত হাইওয়ে রেস্টুরেন্ট। সম্প্রতি হাইওয়ে রেস্টুরেন্টটি শিশু শ্রমিকের অভয়াশ্রমে পরিণত হয়েছে।
সরেজমিন ঢাকা-হাটিকুমরুল মহাসড়কের পাশে অবস্থিত ফুড ভিলেজ হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে গিয়ে দেখা গেছে, সেখানে কয়েকটি ইউনিটে প্রায় শতাধিক শিশু-কিশোর (যাদের বয়স ৮ থেকে ১৬ এর মধ্যে) শ্রমিক হিসেবে কাজ করছে। এসব শিশুরা খাবার পরিবেশন, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা এবং গ্যাসের চুলায় রান্নাবান্নার মত ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত রয়েছে।
এসব শিশুদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, নাম মাত্র খুবই সামান্য বেতনে এদেরকে চাকুরী দেয়া হয়েছে। যে বয়সে এদের স্কুলে যাওয়ার কথা, বন্ধুদের সাথে খেলাধুলা করার কথা, সেই বয়সে এরা কর্মজীবনে প্রবেশ করেছে। এক্ষেত্রে চাকুরী প্রদাণকারী প্রতিষ্ঠান কোন প্রকার শিশুশ্রম আইন অনুসরণ করেনি এবং আইনানুযায়ী শ্রমবিভাজন ও বেতন বিভাজনও করেনি।
এপ্রসঙ্গে ওই সব শিশু-কিশোরদের সাথে কথা বললে নাম প্রকাশ না করার শর্তে তাদের অনেকেই জানিয়েছে-কাজে ভুলত্রুটি হলে তাদেরকে প্রহার করতে দ্বিধা করেনা কর্তৃপক্ষ। কেন তারা কাজ করতে এসেছে (?)-এমন প্রশ্নের উত্তরে তাদের অনেকেই জানিয়েছে-কারো কারো বাবা-মা খরচ চালাতে পারেনা, তাই কাজ করতে এসেছে। আবার কেউ কেউ জানিয়েছে-তাদের পিতা মাতার বিয়োগ অথবা বিবাহ বিচ্ছেদের কারণে তারা নিরুপায় হয়ে কাজে এসেছে।
হোটেলে কর্মরত শরীফ (১৩), নাজমুল (১২), আশিক (১৩), সুমন (১৩) এবং সাব্বির (১২) জানায়, তাদের অভিভাবকরা জোর করে বাড়তি আয়ের আশায় তাদেরকে এই হোটেল এন্ড রেস্টুরেন্টে কাজে পাঠিয়েছে। অপরদিকে এইসব শিশুদের বেতন স্বল্প হওয়ায় রেস্টুরেন্ট মালিক এদেরকে জোর করে কাজে লাগিয়ে দিয়েছে। ফলে এরা প্রকৃত শিক্ষা অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। পাশাপাশি বাড়ছে শিশুশ্েরমর তিক্ত অভিজ্ঞতা।
এ প্রসঙ্গে ওই হোটেলের ম্যানেজারসহ কর্তৃপক্ষের অন্যান্যদের সাথে কথা বলার চেষ্টা করলে তারা কেউই বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি। অভিযোগ রয়েছে-বিএনপির সাবেক একজন প্রভাবশালী এমপির মালিকানাধীণ এই হোটেলটি শুধূ শিশুশ্রমই নয়, এখানে পঁচা-বাসী ও নি¤œমানের অস্বাস্থ্যকর খাবার পরিবেশন করে ভ্রমণরত শতশত যাত্রীদেরকে নানা ভাবে জিম্মি করে হাতিয়ে নিচ্ছে লক্ষ লক্ষ টাকা। পাশাপাশি ভ্যাট-ট্যাক্সের অজুহাতে প্রতিটি খাদ্য মেনুতে অতিরিক্ত টাকা আদায় করলেও ভ্যাট ট্যাক্স ফাঁকিতেও এদের জুড়ি নেই।
দেশ ট্রাভেল্স-এর একজন যাত্রী ওই হোটেলে খাবার খেয়ে অভিযোগ করে বলেন-খাবারের মান ছিল অত্যণÍ নিমানের। পাশাপাশি অন্যান্য স্থানের চেয়ে এখানে সবকিছুর দাম বেশি রাখা হয়। উদাহরণ স্বরুপ তিনি বলেন-ঢাকার নামীদামী হোটেল গুলোতে এক কাপ চা’র দাম ৫-১০ টাকা। অথচ, এই রেস্টুরেন্টে এক কাপ চা’র দামই ধরা হয়েছে ১৫ টাকা।
সচেতন মহল বিষয়গুলো নজরদারীর জন্য জেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন। তারা শিশুদের উদ্ধার করে স্কুলে পাঠানোর পদক্ষেপ গ্রহণ করার আবেদন জানিয়েছেন।
মন্তব্য চালু নেই