ফিরে দেখা : পঞ্চম বিশ্বকাপ

বিশ্বকাপ নিয়ে মানুষের উন্মাদনার শেষ নেই। এক একটি বিশ্বকাপের জন্য মানুষকে অপেক্ষায় থাকতে হয় দীর্ঘ চার-চারটি বছর।
বছর ঘুরে আবারও দুয়ারে দাঁড়িয়ে বিশ্বকাপ। ১৪ ফেব্রুয়ারি থেকে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ায় শুরু হতে যাচ্ছে ক্রিকেট বিশ্বকাপের একাদশতম আসর। কিন্তু কেমন ছিল এর আগের ১০টি আসর? সেটা নিয়ে ধারাবাহিক আলোচনা থাকছে রাইজিংবিডিতে। ধারাবাহিক প্রতিবেদনে আজ প্রকাশিত হচ্ছে পঞ্চম বিশ্বকাপের আদ্যোপান্ত।

পঞ্চম বিশ্বকাপে যা কিছু প্রথম :

  • প্রথমবারের মতো বেনসন অ্যান্ড হেজেস এই টুর্নামেন্টের পৃষ্ঠপোষক হয়।
  • প্রথমবারের মতো ৯টি দল অংশ নেয়।
  • প্রথমবারের মতো অংশ নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা।
  • প্রথমবারের মতো রঙিন পোশাক, সাদা বল ও ডে-নাইট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়।
  • প্রথমবারের মতো সেমিফাইনাল ও ফাইনালে ম্যাচ রেফারি রাখা হয়।
  • প্রথমবারের মতো টুর্নামেন্ট সেরার পুরস্কার দেওয়া হয়।
  • প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণকারী দেশগুলো থেকে ১১জন আম্পায়ার নেওয়া হয়।
  • প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয় পাকিস্তান।

পঞ্চম বিশ্বকাপ, ১৯৯২ :
পঞ্চমবারের মতো ১৯৯২ সালে বিশ্বকাপের আয়োজন করে আন্তর্জাতিক ক্রিকেট কাউন্সিল (আইসিসি)। এই বিশ্বকাপে প্রথমবারের মতো নয়টি দেশ অংশ নিয়েছিল। প্রথম দল হিসেবে ১৯৯২ বিশ্বকাপে অংশ নেয় দক্ষিণ আফ্রিকা। ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ মার্চ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় এই বিশ্বকাপ। পঞ্চম বিশ্বকাপের আয়োজক হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। দুটি দেশের ১৮টি ভেন্যুতে রাউন্ড রবিন ও নকআউট পদ্ধতিতে অনুষ্ঠিত হয় এই বিশ্বকাপ। ১৮টি পৃথক ভেন্যুতে সর্বমোট ৩৯টি খেলা অনুষ্ঠিত হয়। তার মধ্যে গ্রুপ পর্বের ৩৬টি, দুটি সেমিফাইনাল এবং একটি ফাইনাল ম্যাচ ছিল।
indexggggggggপ্রথমবারের মতো ‘বেনসন অ্যান্ড হেজেস’ ব্র্যান্ড এই বিশ্বকাপের পৃষ্ঠপোষক হয়। তাই তাদের নামানুসারে বিশ্বকাপের নামকরণ করা হয় ‘বেনসন অ্যান্ড হেজেস বিশ্বকাপ’। এই বিশ্বকাপে ওভার সংখ্যা ছিল ৫০। ফাইনালে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা ঘরে তোলে পাকিস্তান।

খেলার ফরম্যাট :
প্রতিটি ম্যাচের এক ইনিংসে ৫০ ওভার খেলা হয়। উভয় দলের খেলোয়াড়রা রঙিন পোশাক গায়ে দিয়ে মাঠে নামেন। ম্যাচে ব্যবহৃত হয় সাদা বল। এই বিশ্বকাপের বেশিরভাগ ম্যাচ দিনে অনুষ্ঠিত হয়। অবশ্য কিছু ম্যাচ ফ্ল্যাডলাইটের আলোয়ও  (ডে-নাইট) অনুষ্ঠিত হয়।

নয়টি দল রাউন্ড-রবিন লিগ পদ্ধতিতে একে-অপরের মুখোমুখি হয়। পয়েন্টের ভিত্তিতে শীর্ষস্থানধারী চারটি দল সেমিফাইনালে ওঠে। সেখানে নক-আউট পদ্ধতিতে লড়াই করে ফাইনালে ওঠে দুটি দল। ফাইনালের বিজয়ী দল চ্যাম্পিয়ন হওয়ার গৌরব অর্জন করে।

অংশগ্রহণকারী দল :
এই বিশ্বকাপে বিভিন্ন অঞ্চলের নয়টি দল অংশ নেয়। তার মধ্যে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল থেকে ভারত, পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কা। আমেরিকান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন থেকে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। আফ্রিকান ক্রিকেট অ্যাসোসিয়েশন থেকে জিম্বাবুয়ে ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ইস্ট এশিয়া প্যাসিফিক থেকে নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া এবং ইউরোপিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল থেকে ইংল্যান্ড অংশ নেয়।

রাউন্ড রবিন পর্ব :
রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতিতে প্রতিটি দল একে অপরের মুখোমুখি হয়। আটটি ম্যাচের ৭টিতে জিতে ১৪ পয়েন্ট নিয়ে পয়েন্ট টেবিলের শীর্ষে থেকে সেমিফাইনালে ওঠে নিউজিল্যান্ড। ৫টিতে জিতে, ২টিতে হেরে ১ একটিতে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে ১১ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থেকে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে ইংল্যান্ড। ৫টিতে জিতে, তিনটিতে হেরে ১০ পয়েন্ট নিয়ে তৃতীয় স্থানে থেকে সেমিফাইনালের টিকিট পায় দক্ষিণ আফ্রিকা। ৪টি জিতে, ৩টি হেরে ও একটিতে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে চতুর্থ দল হিসেবে পাকিস্তানও সেমিফাইনালে জায়গা করে নেয়।

বাদ পড়ে যায় ভারত, জিম্বাবুয়ে, অস্ট্রেলিয়া, শ্রীলঙ্কা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

সেমিফাইনাল :
রাউন্ড রবিন পর্ব থেকে সেমিফাইনালে ওঠে নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তান, ইংল্যান্ড ও দক্ষিণ আফ্রিকা। ২১ মার্চ প্রথম সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয় পাকিস্তান ও নিউজিল্যান্ড। প্রথমে ব্যাট করে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৬২ রান সংগ্রহ করে নিউজিল্যান্ড। জবাবে ৪৯ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৬৪ রান তুলে প্রথমবারের মতো ফাইনালের টিকিট পায় পাকিস্তান। টুর্নামেন্টের ফেভারিট নিউজিল্যান্ডকে হারানোটা ছিল ১৯৯২ বিশ্বকাপের অন্যতম চমক।

২২ মার্চ অনুষ্ঠিত দ্বিতীয় সেমিফাইনালে ইংল্যান্ড প্রথমে ব্যাট করে ৪৫ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৫২ রান সংগ্রহ করে। জবাবে ৪৩ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৩২ রান করতে সক্ষম হয় দক্ষিণ আফ্রিকা। আফ্রিকাকে ১৯ রানে হারিয়ে ফাইনালের টিকিট পায় ইংল্যান্ড।

ফাইনাল :
২৫ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ন ক্রিকেট গ্রাউন্ডে টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ৫০ ওভারে ৬ উইকেট হারিয়ে ২৪৯ রান সংগ্রহ করে পাকিস্তান। ব্যাট হাতে পাকিস্তানের অধিনায়ক ইমরান খান ৭২ রানের ইনিংস খেলেন। এ ছাড়া জাভেদ মিঁয়াদাদ ৫৮ রান করেন। ৪২ রান করেন ইনজামাম-উল-হক। ইংল্যান্ডের সেরা বোলার ডেরেক প্রিঙ্গল। তিনি ৩টি উইকেট নেন। ১টি করে উইকেট নেন বোথা ও ইলিংওর্থ।
index২৫০ রানের জয়ের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে ৪৯.২ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ২২৭ রানের বেশি করতে পারেনি ইংল্যান্ড। ২২ রানের ব্যবধানে ইংল্যান্ডকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপের শিরোপা জিতে নেয় পাকিস্তান।

বল হাতে পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম ও মুস্তাক আহমেদ ৩টি করে উইকেট নেন। ২টি উইকেট নেন আকিব জাভেদ।

ব্যাট হাতে ৩৩ রান ও বল হাতে ৩ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা নির্বাচিত হন পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম। প্রথমবারের মতো টুর্নামেন্ট সেরা নির্বাচিত হন নিউজিল্যান্ডের মার্টিন ক্রো।

এক নজরে পঞ্চম বিশ্বকাপ:
আয়োজক : নিউজিল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া
তারিখ : ২২ ফেব্রুয়ারি থেকে ২৫ মার্চ, ১৯৯২
টুর্নামেন্ট ফরম্যাট : রাউন্ড রবিন ও নকআউট
অংশগ্রহণকারী দেশ : ৯টি
মোট ম্যাচ : ৩৯টি
চ্যাম্পিয়ন : পাকিস্তান
রানার্স আপ : ইংল্যান্ড
সবচেয়ে বেশি রান : নিউজিল্যান্ডের মার্টিন ক্রো (৪৫৬)
সবচেয়ে বেশি উইকেট : পাকিস্তানের ওয়াসিম আকরাম (১৮)
সিরিজ সেরা : নিউজিল্যান্ডের মার্টিন ক্রো



মন্তব্য চালু নেই