ফরিদপুরের মধুখালীতে একটি হিন্দু পরিবারকে সমাজ থেকে বিছিন্ন রাখার অভিযোগ

ফরিদপুরের মধুখালী উপজেলার বাগাট ইউনিয়নের বন্দর গ্রামে একটি হিন্দু পরিবারকে গুটি কয়েক সমাজের ক্ষমতাধর ব্যক্তি একঘরে করে রেখেছে। একুশ শতাব্দির এই লগ্নে যা শুধু মানবতাকারী অপরাধই নয়, এটা দেশের আইনের প্রতি চরম অনাস্থ। প্রভাবশালী গুটি কয়েক সমাজপতি ঐ পরিবারটিকে মন্দিরে পূজো দিতে বাঁধা দিচ্ছে। শুধু মন্দিরে পূজো দিতে বাঁধাই নয়, গ্রামের কোন অনুষ্ঠানে তাদের যোগ দিতে দিচ্ছেনা ও সরকারী রাস্তা দিয়ে তাদের যাওয়ার পথ ব্যাবহারের উপর বাধা প্রদান করছে এবং যারা তাদের সাথে কথা বলবে তাদের কেও একই পরিনিতি ভোগ করতে হবে বলে হুশিয়ারী উচ্চারন করেছে। এমন নাক্কর জনক ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকায় চরম উত্তেজনা বিরাজ করছে।
অনুসন্ধানে ও এলাকাবাসী সূত্রে জানা যায়, প্রায় ৯ মাস আগে বন্দর গ্রামের বিপুল পোদ্দারের ছেলের সাথে সামান্য মজাকে কেন্দ্র করে বিপ্লব সাহার সাথে বিপুল পোদ্দারের বাক বিতন্ডা হয়। ক্ষমতাধর বিপুল পোদ্দারের পক্ষ নিয়ে গ্রামের মহাদেব সাহা, উত্তম সাহা, অমরেশ সাহা (উলে) সুশান্ত সাহা (ইলূ), মনতোষ সাহাসহ কতিপয় লোকজন নিয়ে বিপ্লব সাহা ও তার কাকা সচিন্দ্র নাথ সাহাকে হুমকি দেয় এবং একঘরে করা হবে জানান। পরের দিন গ্রামের বিপুল পোদ্দারের লোকজন ও গ্রামের সমাজপতি মহাদেব সাহা, কেষ্ট সাহা, মনতোষ সাহা, সুসান্ত সাহা, অমরোশ সাহার উপস্থিতিতে বিপ্লব সাহার পরিবারকে একঘরে কওে ঐ বৈঠকে। গ্রামের ১০০টি পরিবারের মধ্যে তিনটি পরিবার সুভাষ সাহা, দিলিপ সাহা ও মনোতোষ সাহা একঘরে প্রস্তাবের পক্ষে হাত উচু করে সমর্থন জানায়, তাতেই সমাজপতিরা একটি পরিবারকে সামজ থেকে বিছিন্ন করে দেই। শালিশে উপস্থিত একজন জানান, গ্রাম্য সেই শালিশে সমাজপতি অমরেশ সাহার স্ত্রী সুমিতা রানী সাহা তিনি বন্দর সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা, এক জন শিক্ষিত হয়েও হাত তুলে মারতে যান বিপ্লব সাহার কাকা বয়স্ক সচিন্দ্র নাথ সাহাকে যে শালিশে তার থাকার কথা নয়।
এই ঘটনার পর বিপ্লবের বাবার মৃত্যু বার্ষিকীর ভোগ বারোয়াড়ী মন্দিরে দিতে গেলে তা ফিরে দেওয়া হয়। এমনকি বিপ্লবের বাড়ীর পুজা করার পুরহিত ঠাকুরকে পুজা করতে আসা যাওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়। গত মঙ্গলবার বিপ্লব সাহার পরিবার স্থানীয় মদন মহন মন্দিরে ১০ম দোলযাত্রার ভোগরাগ দিতে গেলে মহাদেব সাহা, কেষ্ট সাহা, জীবন সাহা, সুশান্ত সাহা (ইলু), সঞ্জু সাহা সহ ১০/১২ জন গ্রাম্য মাতুব্বর ভোগ নিয়ে মন্দিরে ঢুকতে বাধা দেয়। এ সময় বিপ্লব সাহার পরিবারকে লাঞ্চিত করা হয়। এ ঘটনায় এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। বিপ্লব সাহা জানান, আমার পরিবারের সদস্যদেরকে প্রায় ৯ মাস যাবত একঘরে করে রাখা হয়েছে। আমরা কোন সামাজিক অনুষ্ঠান করতে পারিনা। এমনকি কোন অনুষ্ঠানেও যেতে পারিনা। একটি প্রভাবশালী
সমাজপতিচক্র আমাদেরকে হেয় করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। একাধিকবার মাতুব্বরদের কাছে যেয়েও কোন সমাধান পাইনি। এখন চেষ্টা করছে মিথ্যা নারী ঘটিত মামলা দিয়ে আমাদের ফাসাঁনোর জন্য। গ্রাম্য মাতুব্বর কেষ্ট সাহা বলেন, বিপ্লবের পরিবারকে একঘরে করে রাখা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে গ্রামের বেশীর ভাগ লোকজনই বিপক্ষে রয়েছে এ পরিবারটি ভালো নয়।
এ ব্যাপারে মধুখালী উপজেলা মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি এ্যাডভোকেট আলীমুউজ্জামান খোকন জানান, আমি ঘটনাটি পত্রিকাতে পড়েছি যদি এমন ঘটনা কেউ ঘটিয়ে থাকে তাহলে তা চরম নিন্দিয় এই আধুনিক যুগে। আর আমাদের অবস্থান তাদের বিরুদ্ধে হবে এটা আমি বলতে পারি। এ ব্যাপারে মধুখালী উপজেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সুভাষ রায় বলেন, সামন্য ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ ঘটনা ঘটেছে আমিতো মনে করি এটা ভালো কাজ হয় নাই। আমাদের দেশের যে আইন আছে তাহা পারমিট করে না এমন ব্যাপার। বাগাট ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আঃ রহিম ফকির বলেন, বিষয়টি অমানবিক। আমি কয়েক মাস পূর্বে ঘটনাটি মিমাংসার জন্য চেষ্টা করেছিলাম কিন্ত মাতুব্বরদের কারনে তাহা হয় নাই। (ছবি প্রতীকী)
মন্তব্য চালু নেই