ফজরের সালাতের জন্য জেগে উঠার আধ্যাত্মিক কৌশল !
আপনার কি কখনও ঘুমাতে যাওয়ার মুহূর্তে এমন অনুভূতি হয়েছে যে, আপনি অবশ্যই ফজরের সালাতের জন্য উঠবেন কিংবা আগে থেকেই আপনি জানতেন সেদিন বেশি ঘুমাবেন? আপনার জীবনে হয়তো এমন অনেক দিন আছে যেগুলোতে আপনি প্রকৃতপক্ষেই বেশি ঘুমাতে চান। যার জন্য আপনি আগে থেকেই ‘অতিরিক্ত ঘুমানোর’ পরিকল্পনা করেন। তারপরও আপনি জেগে উঠেছেন, আর তখনই শুরু হয় আধুনিক শয়তানের কৌশল , “আর মাত্র পাঁচ মিনিট…”
আমরা কি সত্যিই আল্লাহর ইবাদত করতে চাই? “অবশ্যই!” তাহলে আল্লাহর সাহায্যও চাই? “হুম!” আবার ফজরের সালাতের জন্যও জেগে উঠতে চাই? “জ্বী, ভাই!” কিন্তু তারপরও আমরা পারি না কেন? কারণ, আমাদের চাওয়ায় আন্তরিকতার অভাব।
‘আপনি অবশ্যই ঘুম থেকে জেগে উঠবেন’ আপনার এ ধরনের গভীর মানসিকতার কথা, আর অন্য দৃশ্যপটটি বর্ণনা করে ‘আপনি ঘুম থেকে উঠতে পারবেন না’ এ ধরনের মানসিকতার কথা। কারণ, আপনার অন্তর এটা চায় না, আর আপনিও শয়তানের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে সকালে ঘুম থেকে জেগে উঠার চ্যালেঞ্জটি গ্রহণ করার জন্য প্রস্তুত নন। নিচে আমি কিছু কৌশলের কথা বর্ণনা করছি যেগুলো আপনাকে সফলতা অর্জনে সাহায্য করবে ইনশা আল্লাহ্।
আধ্যাত্মিক কৌশল
১. আল্লাহকে চেনাঃ এটা ফজরের সালাতের জন্য জেগে উঠার চাবিকাঠি এবং এক নম্বর কৌশল। আপনি যদি জানেন আপনি কার ইবাদত করছেন, আর এ-ও জানেন যে, তিনি চান আপনি প্রতিদিন ভোরে ঘুম থেকে উঠে তাঁর ইবাদত করুন, তাহলে আপনি জেগে উঠবেনই! ‘আল্লাহ’ কে- এ ব্যাপারে আমাদের জ্ঞানের কমতিই আমাদেরকে দৃশ্যপট-২ এর দিকে ধাবিত করে। তাই আপনার প্রভুকে জানুন, আর এটাই আপনার চাবিকাঠি।
২. আন্তরিকতাঃ ফজরের সালাতের জন্য জেগে উঠার ব্যাপারে আন্তরিক হোন। নিজেকে শুধু এটুকু বলবেন না যে, ‘যদি আমি ফজরের ওয়াক্তে উঠতে পারি তবে ভালো হবে’, বরং আন্তরিকতার সাথে বলুন, ‘আমি ফজরের ওয়াক্তে জেগে উঠবোই ইনশা আল্লাহ!’
৩. ঘুমাতে যাওয়ার আগে ওযু করাঃ
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বারা ইবনে আযেব রা.-কে বলেছিলেন―
যখন তুমি বিছানায় যাবে তখন নামাযের ওযুর মত ওযু করবে। [মুসলিম : ৪৮৮৪]
৪. বিতিরের সালাত ও দু’আঃ বিতিরের সালাত আদায় না করে ঘুমাবেন না, আর বিতিরের সালাত আদায়ের সময় আল্লাহর কাছে অনুনয়-বিনয় করুন যাতে তিনি আপনাকে ঘুম থেকে জেগে উঠতে সাহায্য করেন।
৫. সামান্য কুর’আন তিলাওয়াত করুনঃ মহা গ্রন্থ আল-কুর’আনের মাধ্যমে দিনের সমাপ্তি অবশ্যই আপনার মনোযোগকে ফজরের সালাতের জন্য জেগে উঠার দিকে নিবন্ধিত করবে। মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘুমাতে যাওয়ার আগে সূরা আল-সাজদাহ ও সূরা আল-মূলক (৩২ ও ৬৭ নম্বর সূরা) তিলাওয়াত করার পরামর্শ দিতেন।
৬. ঘুমাতে যাওয়ার আগে আল্লাহকে স্মরণ করুনঃ এটা আমার বর্ণনাকৃত প্রথম পয়েন্টেরই অংশ। আর এখানেই আপনি আপনার সকল অনুনয়-বিনয় আল্লাহর কাছে জানাবেন। প্রথম প্রথম দু’আগুলো পড়ার জন্য আপনি ছাপিয়ে নিতে পারেন কিংবা দু’আর বই ব্যবহার করতে পারেন। কিন্তু এক বা দু’ সপ্তাহের মধ্যেই দু’আগুলো আপনার মুখস্থ হয়ে যাবে ইনশা আল্লাহ। আর ঠিক ঘুমিয়ে পড়ার আগেই সেগুলো নিয়মিত পড়বেন।
৭. ফজরের সালাত আদায়কারীদের জন্য ঘোষণাকৃত পুরস্কারগুলোর কথা স্মরণ করুনঃ মুনাফিকের হাত থেকে বেঁচে থাকা, শেষ বিচারের দিন আলোকিত হওয়া, সারাদিন আল্লাহর নিরাপত্তায় থাকা, জীবন থেকে অলসতা কেটে যাওয়া, কর্মঠ হওয়া- এই পুরস্কারগুলোর কথা স্মরণ করুন, ইনশা আল্লাহ আপনি জেগে উঠতে পারবেন।
মন্তব্য চালু নেই