প্রেম করে বিয়ে করার এই পরিণাম!

নাম সারিয়া রহমান রুমি। বয়স ২৫ বছর। সাত বছর আগে প্রেম করে বিয়ে করেন নিজ এলাকার ছেলে খন্দকার গোলাম মহিউদ্দিনকে। তখন অনেক ভালো ছেলে হিসেবে পরিচিতি ছিল মহিউদ্দিনের। কোল আলোকিত করে সোয়াদ নামের একটি ছেলেসন্তানও আসে তাদের। ভালোই চলছিল রুমির সংসার। পড়াশোনাও চালিয়ে যাচ্ছেন। ইডেনে সাইকোলজিতে মাস্টার্স এবং খিলগাঁও ‘ল’ কলেজে আইন বিষয়ে পড়ছেন। তারা থাকেন খিলগাঁও তিলপাপাড়া এলাকায়।

কিছুদিন আগে স্বামী মহিউদ্দিন মাদকাসক্ত হয়ে পড়েন। মাদকের টাকা জোগাতে না পেরে প্রায়ই রুমিকে মারধর করেন। ছোট একটি ব্যবসা ছিল, সেটাও নেশার টাকার জন্য শেষ করে ফেলেন। গত সাত মাস থেকে নেশার টাকার জন্য বাবার বাসা থেকে টাকা এনে দিতে বলতেন।

প্রেম করে বিয়ে করেছেন, তাই রুমি বারবার বাবার কাছে টাকা চাইতে অপরাগতা প্রকাশ করেছেন। বিনিময়ে পেয়েছেন নির্যাতন আর গালমন্দ।

মহিউদ্দিন কোনো কাজ করতেন না। রুমি অনেক কষ্টে বাচ্চাদের প্রাইভেট পড়িয়ে ছেলেসন্তান নিয়ে সংসার চালাতেন। তার পরও তিনি স্বামীকে ছেড়ে যেতে চাননি।

গত সোমবার রাতে নেশার টাকা জোগান দিতে না পারায় রুমিকে ঘরে আটকে রেখে প্রচণ্ড মারধর করেন মহিউদ্দিন। সারা রাত তাকে কিছু খেতে দেননি। বাচ্চাকে ফুফুর বাসায় পাঠিয়ে দিয়ে মহিউদ্দিন রাতভর রুমির ওপর চালান অমানষিক নির্যাতন।

গত রাত পর্যন্ত দুই দিন ধরে রুমিকে সিগারেটের আগুন দিয়ে পুরো শরীর পুড়িয়ে দিয়েছেন মহিউদ্দিন। শরীরের এমন কোনো জায়গা নেই, যেখানে সিগারেটের পোড়া দাগ নেই। তা ছাড়া মারধর করার ফলে রুমির হাত-পা ও শরীরের অন্যান্য অংশ ফুলে গেছে।

গতকাল মঙ্গলবার গভীর রাতে রুমি কৌশলে পালিয়ে বাবার বাসায় যান। সেখানে রাত কাটানোর পর বৃহস্পতিবার সকালে গুরুতর আহত অবস্থায় ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয় তাকে। হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে রুমি নির্যাতনের ঘটনা বর্ণনা করেন।

রুমি বলেন, ‘মহিউদ্দিনের বোন খুকুমণিও বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে তাকে গালিগালাজ ও মারধর করতেন।’

এ ঘটনা শোনার পর এলাকাবাসী মহিউদ্দিনকে ধরে রিহাব নামে একটি মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে হস্তান্তর করেছে। আর এ বিষয়ে এখনো কোনো আইনি পদক্ষেপ নেওয়া না হলেও পুলিশকে অবহিত করা হবে বলে জানান রুমি।

এদিকে রুমির চাচা আজিজুল ইসলাম জানান, রুমি ভালোবেসে বিয়ে করেছেন মহিউদ্দিনকে। দিনকাল ভালোই যাচ্ছিল তাদের। মহিউদ্দিন মাদকাসক্ত হওয়ায় রুমির সংসার এলোমেলো হয়ে গেল। প্রেম করে বিয়ে করায় সমস্ত দুঃখ-কষ্ট নীরবে সহ্য করে যেতেন রুমি। নিজের পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করেছেন।

এভাবে মানুষ মানুষকে নির্যাতন করতে পারে, তা জানা ছিল না আজিজুলের। রুমির নির্যাতনের ক্ষত দেখে আজিজুল নিজেই কান্নায় ভেঙে পড়েন।

এ ব্যাপারে খিলগাঁও থানার এসআই আজিজুল ইসলাম জানান, রুমির মায়ের দেওয়া একটি অভিযোগ পাওয়া গেছে। ঘটনাটি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। কিন্তু মহিউদ্দিন মাদকাসক্ত হওয়ায় গ্রেফতার করা হবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।



মন্তব্য চালু নেই