প্রেমে অন্ধ হয়ে স্ত্রীকে গুলি করে হত্যা করলো স্বামী

“আমিই গুলি চালিয়ে খুন করেছি৷” রাতভর দীর্ঘ জেরার পর পশ্চিমবঙ্গের নদিয়ার কল্যাণীর আইনের ছাত্রী মৌমিতা বিশ্বাসকে খুনের কথা স্বীকার করল সাবেক স্বামী নিখিল সেন৷

বৃহস্পতিবার রাতে কল্যাণীতে এক্সপ্রেসওয়ের সংযোগরক্ষাকারী রাস্তায় বেসরকারি বিএড কলেজের সামনে খুন হন মৌমিতা৷ খুনের ঘটনার পরই তদন্তে নেমে মৌমিতার সাবেক প্রেমিক সুরজিত্‍ দাস ওরফে বাসু ও তার সাবেক স্বামী নিখিল সেনকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে পুলিশ৷

প্রথমে খুনের কথা স্বীকার করতে না চাইলেও রাতভর দীর্ঘ পুলিশি জেরায় ভেঙে পড়ে নিখিল৷ ভোররাতের দিকে সে খুনের কথা স্বীকার করে নিয়ে বলে, “ভালবেসেছি ওকে৷ অন্য কারও সঙ্গে ওকে দেখতে পারবো না৷ তাই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দিয়েছি আমি! আমি নিজেই গুলি চালিয়ে খুন করেছি৷”

কিন্তু নিজের ভালবাসার মানুষকে কেন খুন? সত্যিই কি মৌমিতার ভালবাসায় অন্ধ ছিল নিখিল? না কি নেপথ্যে রয়েছে অন্য কিছু? মৌমিতার বাবা পুলিশকর্মী৷ স্বচ্ছল পরিবার৷ অভাব কী তা জানতেন না মৌমিতা৷ যা চেয়েছেন তাই পেয়েছেন৷

ছোটবেলা থেকে কোনও আবদারই অপূর্ণ থাকেনি৷ দামী পোশাক৷ আয়েশ-আরাম৷ সবই ছিল৷ সম্পর্কের ক্ষেত্রটাও তেমনই হবে ভেবেছিলেন৷ উচ্ছ্বল যৌবন, সুন্দরী৷ যা চাই, তাইই পাব৷

এই মনোভাব নিয়েই জেট গতিতে জীবনের উড়ান ভরেছিলেন মৌমিতা৷ একটি সম্পর্কে আবদ্ধ থাকতে চাননি কোনওদিনই৷ ফেসবুকে পরিচয় হওয়া প্রথম প্রেমিক সুরজিৎকে ক’দিনের মধ্যেই ভুলে যাওয়া৷ কিছুদিন ভাব-ভালবাসার পর সুরজিৎকে ছেড়ে নিখিলের প্রেমে পড়া৷ এরপর নিখিলের সঙ্গে বিয়ে৷ আবার সাত মাসের মধ্যেই বিয়ে ভেঙেও যাওয়া৷ বিয়ের পর আবার অন্য যুবক৷ এইই ছিল মৌমিতার জীবন৷

কিন্তু নিখিল? নিখিল সত্যিই ভালবসেছিল মৌমিতাকে৷ বিয়ে ভেঙে যাওয়ার পরও ভুলতে পারেনি মৌমিতাকে৷ দু’জনের মধ্যে বিবাহবিচ্ছেদের মামলা চলা সত্ত্বেও মৌমিতার সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করত৷ নিখিলের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করে অন্য যুবকদের সঙ্গে আনাগোনা বাড়ালেও নিখিলের সঙ্গে কিন্তু হোয়াটসঅ্যাপে যোগাযোগ রেখেছিল মৌমিতা৷ অবশেষে সেটাই কাল হল৷

গোটা ঘটনার সত্যতা স্বীকার করেছে নিখিল৷ সে পুলিশকে জানিয়েছে, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় এক যুবকের সঙ্গে সিনেমা দেখতে যান মৌমিতা৷ তার আগে নিখিলকেও দেখা করতে বলেছিল মৌমিতা৷ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় কল্যানী গিয়ে নিখিল দেখে নতুন এক যুবকের সঙ্গে সিনেমা হল থেকে বেরোচ্ছেন মৌমিতা৷ ওই যুবক চলে যাওয়ার পর নিখিলের সঙ্গে দেখা করে মৌমিতা৷ দু’জনের মধ্যে কথা হয়৷ এরপর কল্যাণী থেকে নিখিলের বাইকে চেপে টিটাগড় আসে তারা৷ একটি হোটেলে খাওয়াদাওয়াও করে৷

এরপরই দু’জনের মধ্যে বচসা শুরু হয়৷ নিখিলকে রাস্তায় দাঁড় করিয়ে অন্য যুবককে ফোন করে মৌমিতা৷ বলে কলেজের দিকে যাব৷ তারপর কল্যাণীর দিকে চলে যায় সে৷ এই ঘটনাই মেনে নিতে পারেনি নিখিল৷ বিএড কলেজের সামনে মৌমিতাকে গুলি করে৷

খুনের জন্য ব্যবহৃত অস্ত্রটি নিখিল এক জেলফেরত আসামির কাছ থেকে পেয়েছে বলে সূত্রের খবর৷ নদিয়ার পুলিশ সুপার শিসরাম ঝাঝোরিয়া জানিয়েছেন, খুনের কথা স্বীকার করার পর শনিবার নিখিলকে আদালতে তুলে হেফাজতে চাওয়া হবে৷ ৩০২ ধারায় খুনের মামলা রুজু করা হবে৷ সংবাদ প্রতিদিন



মন্তব্য চালু নেই