প্রেমিকের মৃত্যুর খবর শুনে আত্মহত্যা করার কথা ভেবেছিলেন আমান্দা
আগামী শুক্রবার তাঁদের বিয়ে হওয়ার কথা ছিল। তোড়জোড় শুরু হয়ে গিয়েছিল জোরকদমে। কিন্তু ভাগ্যের পরিহাসে গত রবিবার হবু স্বামী দ্যানার আসুসাও ব্রাস-এর শেষকৃত্যে যোগ দিতে হল আমান্দা মাশাদো-কে।
কলম্বিয়ার পাহাড়ে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত ১৯জন সাপেকোয়েন্স ফুটবলারের অন্যতম ছিলেন দ্যানার। প্রেমিকা আমান্দা’র জীবনও তছনছ হয়ে গিয়েছে মুহূর্তের মধ্যে। দুই পরিবারেই সম্ভাব্য উৎসবের মঞ্চে এখন চিরবিষণ্ণতার সুর।
সাতবছর ধরে দ্যানারের সঙ্গে সম্পর্ক ছিল আমান্দা’র। আচমকা ঝড়ে এলোমেলো হয়ে গিয়েছে ব্রাজিলীয় তরুণীর জীবন। শোকে মূহ্যমান আমান্দা। ‘‘খবরটা শোনামাত্র আমার হৃদস্পন্দন থেমে গিয়েছিল। মনে হয়েছিল পৃথিবীটা যেন ধ্বংস হয়ে গিয়েছে। আমিও প্রবলভাবে ওর সঙ্গে মরে যেতে চেয়েছিলাম। আত্মহত্যা করতে চেয়েছিলাম। ওকে ছাড়া বাঁচার কোনও ইচ্ছা ছিল না আমার,’’ চোখের জল মুছতে মুছতে বলেছেন আমান্দা।
সাপেকোয়েন্সের স্ট্রাইকার অভিশপ্ত বিমানে ওঠার আগে এসএমএস পাঠিয়েছিলেন প্রেমিকার মোবাইল ফোনে। আমান্দা দুঃস্বপ্নেও ভাবতে পারেননি, সেটাই তাঁকে পাঠানো দ্যানারের শেষ এসএমএস হবে। আমান্দা বলেছেন, ‘‘বিমানে ওঠার আগে শেষবারের মতো আমাকে এসএমএস পাঠিয়েছিল। কিন্তু আমি সেটা খেয়াল করিনি। তাই জবাবও দেওয়া হয়নি। ওকে বিদায় জানানোর সুযোগটাও পেলাম না। সেটাই এখন আমাকে সবচেয়ে বেশি যন্ত্রণা দিচ্ছে।’’
দুর্ঘটনার পর থেকে অন্যান্য নিহত ফুটবলারদের পরিবারের সঙ্গে থেকে নিজের মনকে শান্ত করতে চেয়েছেন আমান্দা। তাঁদের বাড়িতেই সময় কাটিয়েছেন। দ্যানারের স্মৃতি বিজড়িত অ্যাপার্টমেন্টে ফিরতে পারেননি। দেশ ছাড়ার পর দ্যানার তাঁর জন্য যে উপহার কিনে পাঠিয়েছিলেন, সেই বাক্সও খোলেননি শোকার্ত আমান্দা।
কফিনবন্দি দেহগুলো ব্রাজিলে ফেরার পর আমান্দা নিজের শহর পোর্তো আলেগ্রি-তে গিয়েছিলেন ছয় ঘণ্টা গাড়ি চালিয়ে। পাহাড়ি রাস্তায় পাড়ি দিয়েছিলেন প্রতিকূল আবহাওয়ার মধ্যেই। বিমান ধরলে হয়তো অনেক তাড়াতাড়ি গন্তব্যে পৌঁছে যাওয়া যেত। কিন্তু বিমান দুর্ঘটনার আতঙ্ক কাটিয়ে উঠতে না পারায় সড়কপথই বেছে নিয়েছিলেন আমান্দা।
তাঁদের বিয়ের আংটি তৈরি হয়ে গিয়েছিল। নিজের আংটি আঙুলে পরে আছেন আমান্দা। আর দ্যানারের আংটি’টি গলার চেনে লকেটের মতো করে ঝুলিয়ে রেখেছেন। দু’জনের দুই বছরের পুত্রসন্তান বার্নার্দো। তার জন্যই এখন বাঁচতে চান আমান্দা। বলেছেন, ‘‘বার্নার্দো’কে দেখতে ওর বাবা’র মতো। সম্পূর্ণ একরকম। ও-ই আমার জীবনে দ্যানারের স্মৃতি। বড় হলে ওকে বলব যে, ওর বাবা অসাধারণ ছিল।-এবেলা
মন্তব্য চালু নেই