প্রস্তুত সৈকত শহরের চার শতাধিক হোটেল-মোটেল
ঈদুল আযহাতেও টানা ৯ দিনের ছুটির ফাঁদে পড়েছে দেশ। সরকারি চাকুরেদের পরিবারে কুরবানি ঈদের আনন্দের মাত্রা বাড়িয়েছে এ টানা ছুটি। সপ্তাহের মাঝামাঝি দিনে ঈদক্ষণ পড়ায় বলতে গেলে ছুটি শুরু হচ্ছে গত শুক্রবার থেকে।
ত্যাগের মহিমায় আত্মনিয়োগে পছন্দসই পশু ক্রয়ে অংশ নিতে পারছেন অনেক চাকুরে। একারণে শুধু মাংস ভক্ষণ-বন্টন নয় পরিজন নিয়ে আনন্দ ভ্রমণের পরিকল্পনাও এটেছেন অনেকে।
ভোগান্তি এড়াতে ইতোমধ্যে অনেক সচেতন ভ্রমণপিপাসু নিরাপদ অবকাশ যাপনে বুকিং দিয়েছেন হোটেল-মোটেল-কটেজ কক্ষ। এতে পর্যটন ব্যবসা চাঙ্গা হওয়ার ইঙ্গিত পাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে টানা ৯ দিনের ছুটি কাটানোর সুযোগ আসলেও পর্যটন সেবাই হাতে থাকছে মাত্র ৪টা দিন।
এরপরও বৃষ্টি রোদের লোকচুরির এ ঈদ সময়ের হাত ধরেই চলতি অর্থ বছরের পর্যটন মৌসুম যাত্রা হতে পারে বলে মনে করছেন পর্যটন সংশ্লিষ্টরা।
কক্সবাজারের তারকা হোটেল ওশান প্যারাডাইসের বিপণন বিভাগের প্রধান ব্যবস্থাপক সৈয়দ খায়রুল আনাম আল ওসমানী বলেন, যান্ত্রিক জীবনে থাকা মানুষগুলো সুযোগ পেলেই ভ্রমণের চক আঁকেন। কুরবানির ঈদেও টানা ছুটির সুযোগ আসায় অনেকে ইতোমধ্যে হোটেলের ৮০ শতাংশ রুম আগাম বুকিং দিয়ে রেখেছেন। ১৪ থেকে ১৭ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বাড়ির বাইরে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও ১৫ ও ১৬ সেপ্টেম্বর সৈতকপারের সকল হোটেল পূর্ণ বুকিং থাকবে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আশা করা যায় এ ছুটি দিয়েই চলতি পর্যটন মৌসুমের যাত্রা হবে।
কক্সবাজার ট্যুরস অপারেটর অ্যাসোসিয়েশনের (টুয়াক) সভাপতি রেজাউল করিমের মতে, শরতের বৃষ্টি অতিভদ্র। এই আছে এই নেই। আকাশে মেঘ-রুদ্দুর লুকোচুরি খেলা থাকলে বিশ্বের দীর্ঘতম সৈকতের চিত্র আরো মোহনীয় হয়ে উঠে। এ কারণে পর্যটকে টৈ টম্বুর হতে পারে বালিয়াড়ি। এছাড়া পর্যটকের উপর নির্ভর করে সেন্টমার্টিনগামী জাহাজও ছাড়ার জন্য প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সবকিছু অনুকূলে থাকলে কুরবানি ঈদ দিয়েই চলতি অর্থবছরের পর্যটন মৌসুম শুরু করবো আমরা এমনটি আশা করা যায়।
সরেজমিনে দেখা গেছে, প্রতি বছরের মতো এবারো ঈদ অতিথি বরণে হোটেল-মোটেলগুলো সাজানো হচ্ছে। সবকিছুতেই যেন বাড়তি মনোযোগ। অনেকে পরির্তন করছে পুরনো জিনিসপত্র। দেয়ালের পুরনো আস্তর তুলে লাগানো হচ্ছে প্লাস্টিক পেইন্ট বা ডিসটেমপার।
পর্যটক যাই আসুক সব পর্যটন স্পটগুলোতে কঠোর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রস্তুতি শুরু করেছে ট্যুরিস্ট পুলিশ। নিরাপত্তা জোরদারে স্পটে স্পটে লাগানো হচ্ছে সর্তকতামূলক সংকেত ও সাইনবোর্ড।
হোটেল মালিকদের মতে, সৈকত শহরে হোটেল মোটেল রয়েছে চার শতাধিক। এসব হোটেলে দৈনিক প্রায় এক লক্ষ পর্যটকের রাত যাপনের ব্যবস্থা রয়েছে। কিছু কিছু হোটেল আগে ভাগে বুকিং দিলেও একটু বাড়তি সুবিধার আশায় অনেকে এখন বুকিং নিয়ে কথা বলছেন না।
আবহাওয়া যাই থাক পর্যটন ব্যবসা চাঙ্গা হবে এমনটি বিশ্বাস হোটেল ও গেস্ট হাউজ মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেমের।
হোটেল সী-নাইট গেস্ট হাউজের ব্যবস্থাপক মো. শফিকুল ইসলাম জানান, অতীতে প্রতি ঈদের ছুটিতে পর্যটকের ভিড় বেড়েছে কক্সবাজারে। এবারও এমনটি হতে পারে।
হোটেল-মোটেল ওনার্স এসোসিয়েশনের সহ-সভাপতি এম এন করিম বলেন, পর্যটকরা আমাদের লক্ষী। তাদের সেবা দিতেই মুখিয়ে থাকি আমরা। এবারও ব্যতিক্রম নয়। তবে, হোটেল মোটেল দিয়ে সরকার যে পরিমাণ রাজস্ব আয় করে সেভাবে রাস্তা-ঘাট ও অবকাঠামোগত উন্নয়ন নেই। তাই কাদা ও ভঙ্গুর সড়ক-উপসড়ক দিয়ে চলাচলে ভ্রমণ পিপাসুদের ভোগান্তি পেতে হচ্ছে।
জেলা সদরের বাইরেও হিমছড়ি, দরিয়ানগর, ইনানী, সেন্টমার্টিন, মহেশখালী, বঙ্গবন্ধু সাফারি পার্কসহ জেলার সব পর্যটন স্পটগুলোকে ইজারাদারেরা সাজাচ্ছেন নতুন করে।
কক্সবাজার ট্যুরিস্ট পুলিশের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার রায়হান কাজেমি জানান, নিয়ম মতো আগত পর্যটকদের নিরাপত্তা নিশ্চিত ও অপরাধ দমন করতে জেলা পুলিশের সহযোগিতায় কয়েকটি ভাগে সাজানো হচ্ছে ট্যুরিস্ট পুলিশকে। পাশাপাশি সম্ভাব্য বিপদাপন্নদের উদ্ধারকারি লাইফগার্ডদের প্রশিক্ষণ আরো জোরদার করা হয়েছে। এছাড়াও টেকনাফ ও ইনানীতে ট্যুরিস্ট পুলিশের নতুন ক্যাম্প খোলা হয়েছে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
কক্সবাজার উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান লে. কর্নেল (অব.) ফোরকান আহমদ বলেন, বিশ্বপর্যটনের একটি সম্ভাবনাময় স্থান কক্সবাজার। একে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর স্বপ্ন অনেক। অগোছালো এ কক্সবাজারকে সাজাতে প্রধানমন্ত্রী সম্প্রতি আমাকে দায়িত্ব দিয়েছেন। সকলের সহযোগিতায় ক্রমান্বয়ে বিদ্যমান সকল অসামঞ্জস্য দূর করা হবে।
মন্তব্য চালু নেই