সঙ্কট নিরসনে খালেদার ৭ দফা প্রস্তাব

প্রস্তাব না মানলে সর্বাত্মক আন্দোলন

জাতীয় সঙ্কট নিরসনে দেয়া ৭ দফা প্রস্তাব না মানলে সর্বাত্মক আন্দোলনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

তিনি বলেছেন, ‘দেশে আজ যে শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে সে অবস্থার অবসান ঘটানো না গেলে রাষ্ট্র হিসেবে বাংলাদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে পড়বে। এই সঙ্কট উত্তরণে অনতিবিলম্বে একটি সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ, অবাধ, নিরপেক্ষ, ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠানের মাধ্যমে জনগণের সম্মতির ভিত্তিতে সরকার গঠনের কোনো বিকল্প নেই।’

৭ দফা প্রস্তাব তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘প্রস্তাবগুলো মেনে নিয়ে জাতীয় সঙ্কট নিরসনের আহ্বান জানাচ্ছি। এ বিষয়ে আমরা জনমত গঠনের মাধ্যমে জাতীয় ঐক্যমত প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার ঘোষণা করছি এবং ঐক্যবদ্ধভাবে একটি জাতীয় আন্দোলন গড়ে তুলতে সকল গণতান্ত্রিক দল, শক্তি ও ব্যক্তির প্রতি উদাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি।’

খালেদা জিয়ার তার প্রস্তাবে আবারো একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন অনুষ্ঠানের দাবি জানান।

একই সঙ্গে তিনি নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন, জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) প্রয়োজনীয় সংশোধন, নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠ পর্যায় থেকে পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার, ভোটার তালিকার ত্রুটি-বিচ্যুতি দূরীকরণ, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত করা, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পরপরই বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করা, নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরুর আগেই চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান, সব রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি, রাজনৈতিক হয়রানিমূলক মামলা প্রত্যাহার, বন্ধ সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেল খুলে দেয়া এবং মাহমুদুর রহমানসহ আটক সব সাংবাদিককে মুক্তির দাবি জানান।

আলোচনার মাধ্যমে এসব প্রস্তাব বাস্তবায়নের আহ্বান জানিয়ে খালেদা জিয়া বলেন, ‘আর্ন্তজাতিক সম্প্রদায়ও আলোচনার মাধ্যমে একটি সুষ্ঠু অবাধ নির্বাচন অনুষ্ঠানের কথা বলেছে। তাই যত দ্রুত সম্ভব এসব প্রস্তাবনা মেনে নিয়ে নির্বাচনের ব্যবস্থা করতে হবে।’

সঙ্কট নিরসনে খালেদার ৭ দফা প্রস্তাব

চলমান রাজনৈতিক সঙ্কট নিরসনে ৭টি প্রস্তাব দিয়েছেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া।

বুধবার সন্ধ্যায় পূর্ব নির্ধারিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে এ কথা বলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। সন্ধ্যা ৬টা ৩০ মিনিটে গুলশানে চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এ সংবাদ সম্মেলন হয়।

খালেদা জিয়ার প্রস্তাবগুলো হলো-

১. জাতীয় সংসদের নির্বাচন অবশ্যই একটি নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে হবে। যাতে সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করতে পারে এবং সকল পক্ষের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড বা সুযোগের সমতা নিশ্চিত হয়।

২. নির্বাচন ঘোষণার আগেই প্রতিদ্বন্দ্বী সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য নিরপেক্ষ, দক্ষ, যোগ্য ও সৎ ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। যাতে, জনপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) প্রয়োজনীয় সংশোধন করা যায়। নির্বাচন কমিশন সচিবালয় ও মাঠ পর্যায় থেকে পক্ষপাতদুষ্ট কর্মকর্তাদের প্রত্যাহার করা যায়। নির্বাচন সংশ্লিষ্ট কর্তব্যে প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর নিরপেক্ষ ভূমিকা নিশ্চিত করা যায়। সকল পক্ষের কাছে গ্রহণযোগ্য নির্বাচনী আইন ও বিধিমালার সঠিক প্রয়োগ নিশ্চিত করা যায়। এবং ভোটার তালিকার ত্রুটি-বিচ্যুতি দূর করা সম্ভব হয়।

৩. নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে জাতীয় সংসদ ও মন্ত্রিসভা বিলুপ্ত হবে এবং প্রতিদ্বন্দ্বী পক্ষগুলোর সম্মতিক্রমে গঠিত নির্দলীয়-নিরপেক্ষ সরকার দায়িত্ব গ্রহণ করবে।

৪. নির্বাচনের উপযোগী শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি এবং সুষ্ঠু নির্বাচন নিশ্চিত করতে তারিখ ঘোষণার পরপরই বেসামরিক প্রশাসনের সহায়তায় ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দিয়ে সারা দেশে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যদের মোতায়েন করতে হবে।

৫. নির্বাচনী প্রচারাভিযান শুরুর আগেই চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের গ্রেপ্তার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করতে হবে। প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষপাতদুষ্ট ও বিতর্কিত হিসাবে চিহ্নিত সদস্যদের সকল গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে প্রত্যাহার এবং কর্তব্যপালন থেকে বিরত রাখতে হবে।

৬. সকল রাজনৈতিক বন্দীদের মুক্তি দিতে হবে। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলাসমূহ প্রত্যাহার করতে হবে।

৭. বর্তমান সরকারের আমলে বন্ধ করে দেয়া সকল সংবাদপত্র ও স্যাটেলাইট টেলিভিশন চ্যানেল খুলে দিতে হবে। মাহমুদুর রহমানসহ আটক সকল সাংবাদিককে মুক্তি দিতে হবে।

তিনি বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবিত এইসব পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে জাতীয় সঙ্কট নিরসনের আহ্বান জানাচ্ছি।’

এইসব প্রস্তাবের পক্ষে জনমত গঠনের লক্ষ্যে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও উল্লেখ করেন খালেদা জিয়া।

বক্তব্যের শুরুর দিকে খালেদা জিয়া বলেন, গত ৫ জানুয়ারি সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা রক্ষার অজুহাতে এককভাবে নির্বাচন করে আওয়ামী লীগ। সেসময় সমঝোতার মাধ্যমে সব দলের অংশগ্রহণে মধ্যবর্তী নির্বাচন দেয়ার কথা বলেছিল তারা। কিন্তু এখন তারা নিজেদের অঙ্গীকার মানছে না।

ক্ষমতা চিরস্থায়ী করতে সরকার বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলগুলো নিজেদের কব্জায় রাখতেই গণমাধ্যম নীতিমালা করেছে। একইভাবে বিচারবিভাগকে নিয়ন্ত্রণের উদ্দেশ্যে সংবিধান সংশোধন করেছে আওয়ামী লীগ।

তিনি বকশীবাজারে বিএনপির মিছিলে ছাত্রলীগের হামলার অভিযোগ করে বলেন, ‘আমাকে রাজনীতি থেকে মাইনাস করার পরিকল্পনা হচ্ছে। কিন্তু আমাকে মাইনাস করার সিদ্ধান্ত কেবল জনগণই নিতে পারেন।’

তিনি আরো বলেন, জাতীয় সংসদ কার্যত বিরোধী দলশূন্য হয়ে পড়েছে। কোনো বিরোধী দল ৫ জানুয়ারিরর নির্বাচনে অংশ নেয়নি। ৯৫ শতাংশ লোক নির্বাচন বর্জন করেছে।’ ভোটবিহীন নির্বাচনের এ সরকার জবাবদিহিতায় বিশ্বাস করে না বলেও উল্লেখ করেন তিনি।

৫ জানুয়ারি কর্মসূচি ঘোষণা করলেন খালেদা

khaleda01 ৫ জানুয়ারি কর্মসূচি ঘোষণা করলেন খালেদা ৫ জানুয়ারিকে গণতন্ত্র হত্যা দিবস আখ্যা দিয়ে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন খালেদা জিয়া।

বুধবার সন্ধ্যায় গুলশানের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এ কর্মসূচির কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘নির্বাচনকে প্রহসনে পরিণত করে জনগণের ভোটাধিকার হরণের দিন, অর্থাৎ, ৫ জানুয়ারিকে আমরা ইতোমধ্যে ‘গণতন্ত্র হত্যা দিবস’ হিসেবে পালনের আহ্বান জানিয়েছি।’

খালেদা জিয়া বলেন, ‘গণতন্ত্র হত্যার বিরুদ্ধে জনমত গঠনের লক্ষ্যে ওই দিন সারা-দেশে সভা-সমাবেশ ও কালোপতাকা বিক্ষোভ মিছিল অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে ঢাকায় আমরা একটি কেন্দ্রীয় সমাবেশ করতে চেয়েছি। আশা করি আমাদেরকে শান্তিপূর্ণভাবে সমাবেশ করতে দেয়া হবে। আমরা জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন-সংগ্রামের কর্মসূচিকে অগ্রসর করে নিতে চাই। পর্যায়ক্রমে
ধারাবাহিকভাবে কর্মসূচি আসবে। বাধা দিয়ে, আক্রমণ করে জনগণের আন্দোলনকে কেউ কখনও দমাতে পারেনি। এবারও পারবে না ইনশাআল্লাহ।’

অনুমতি না পেলে বিএনপি কী করবে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘আমরা ৫ জানুয়ারি কর্মসূচি পালন করবো। এটা আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার।’

আগামী বছরকে জনগণের বিজয়ের বছর উল্লেখ করে সকলকে এ আন্দোলনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানান খালেদা জিয়া।

তিনি বলেন, ‘এবারের সংগ্রাম কেবল বিএনপি বা ২০ দলের নয়, সকল দেশপ্রেমিক ও গণতান্ত্রিক মানুষের। তাই আমি সকলকেই এ আন্দোলনে অংশ নেয়ার আহ্বান জানাই। আমি মনে করি জনগণের বিজয় আসন্ন। আমি বিশ্বাস করি, আগামী বছর হবে জনগণের বিজয়ের বছর। আল্লাহ আমাদের সহায় হোন।’



মন্তব্য চালু নেই