প্রশ্ন উঠেছে ডালমিয়ার মৃত্যু নিয়ে
বঙ্গ ক্রিকেটপ্রেমীদের প্রিয় জগমোহন ডালমিয়া আর নেই। রোববার রাত পৌনে ন’টায় আলিপুরের এক বেসরকারি হাসপাতালে ভারতীয় ক্রিকেটের এক স্বর্ণ-অধ্যায় শেষ হয়ে গেল। মৃত্যুর সঙ্গে তিন দিন যুদ্ধ চালিয়ে শেষ পর্যন্ত হেরে গেলেন জগমোহন ডালমিয়া। চলে গেলেন পঁচাত্তর বছর বয়সে। বঙ্গ ক্রিকেটকে অনাথ করে। ভারতীয় ক্রিকেটকে বিহ্বল করে এবং প্রশ্ন তুলে দিয়ে। ডালমিয়ার মৃত্যু নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে পরিবারে।
বলা হয়, গত বাহাত্তর ঘণ্টা ধরে বারবার হাসপাতালের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ডালমিয়া স্থিতিশীল। তাকে পর্যবেক্ষণে রাখা হচ্ছে। গত চব্বিশ ঘণ্টাতেও সরকারি বিবৃতিতে ন্যূনতম বিপর্যয়ের আন্দাজ দেওয়া হয়নি। এ দিন সকালেও বোঝা যায়নি কিছু। বরং পরিবারের কেউ কেউ আশায় ছিলেন যে, আর দিন তিনেক পর বাড়ি নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। হঠাৎ শোনা গেল, এ দিন সকাল থেকেই তার শারীরিক অবস্থার অবনতির শুরু। দ্রুতই মেডিক্যাল বোর্ড বসে চিকিৎসক অনিল মিশ্রর নেতৃত্বে।
রোববার দুপুরের দিকে ডালমিয়ার অ্যাঞ্জিওপ্লাস্টি হয়। দু’টো স্টেন্টও বসে। রাতের দিকে অনিল মিশ্র সাংবাদিকদের বলেন যে, ‘গন্ডগোলটা হল রাতের দিকে। স্টেন্ট বসানোর সময় শারীরিক অবস্থা ঠিকই ছিল। আচমকাই রাতে তার পাকস্থলী থেকে প্রবল রক্তক্ষরণ শুরু হয়। সব রকম চেষ্টা করেও আমরা কিছু করতে পারিনি।’
এ নিয়ে ডালমিয়া-কন্যা বৈশালী গভীর রাতে সোজাসুজি বলেন, ‘সন্ধ্যে অবধি বাবা ভাল আছেন, আমাদের বলা হল। কিন্তু সাড়ে আটটা নাগাদ যে কী হল, আমরা এখনও বুঝতে পারছি না। আমাদের সামনেই ওরা হঠাৎই দরজাগুলো বন্ধ করতে শুরু করে দেন। বলেন অবস্থা খারাপ হয়েছে। মা কাঁপছিলেন। বাবাকে জল পর্যন্ত খাওয়াতে দেয়নি ওরা। দশ মিনিটের মধ্যেও জানিয়ে দেওয়া হয় যে বাবা আর নেই।’
বৈশালী বলেন, ‘পাকস্থলীতে রক্তক্ষরণের কথা যে বলা হচ্ছে সেটা কেন বুঝতে পারছি না। বাবার কিন্তু কোনও আলসার বা অন্য কোনও সমস্যা ছিল না।’
ডাক্তারকে জিজ্ঞাসা করা হলে, তিনিও বেশ কিছু ধোঁয়াশা রেখে চলে গেলেন। এক, ভর্তির দিন বারবার জিজ্ঞেস করা হলেও হাসপাতাল থেকে বলা হয়নি যে, মায়োকার্ডিয়াল ইনফার্কশন হয়েছে। আজ কিন্তু সাংবাদিক সম্মেলনে বলা হল, সেটা হয়েছে। অর্থাৎ দু’টো বক্তব্যে মিল নেই। আর দুই, কেন পাকস্থলীতে রক্তক্ষরণ হল তা নিয়েও কোনও পরিষ্কার উত্তর পাওয়া যায়নি। অনিল মিশ্রর বক্তব্য, ‘অনেক সময় এ রকম হয়।’ যা শুনে বৈশালী বললেন, ‘আমরা এ সব নিয়ে বিরক্ত।’
রোববার সন্ধ্যায় ইন্টারন্যাশনাল কল-এ ডালমিয়াপুত্র অভিষেক বলেন, ‘বাবা এখন অনেক ভাল আছেন। দুটো স্টেন্ট বসেছে। আগামী দু-তিন দিনে বাড়ি নিয়ে যেতে পারব। তবে ডাক্তার যা বলবে, সতর্কতা হিসেবে তার চেয়ে হয়তো আমরা চব্বিশ ঘণ্টা বেশিই রেখে দেব।’ অভিষেকের গলা ছিল অনেক টেনশনহীন। আর বাবার অসুস্থতা সম্পর্কে বলেন ‘বাবাকে পুরোটা বলিনি। সুস্থ হলে বলব, কী হয়েছিল।’
ডালমিয়া-পুত্রের সঙ্গে কথোপকথন ব্রেকফাস্ট লাউঞ্জে বসা দিলীপ বেঙ্গসরকরকে জানানো মাত্র তিনি লাফিয়ে উঠলেন। ‘তার মানে বাইপাস দরকার হচ্ছে না। উনি বোর্ড প্রেসিডেন্ট হিসেবে পরের টার্মটাও চালাতে পারবেন।’
তথ্যসূত্র : আনন্দবাজার অনলাইন
মন্তব্য চালু নেই