প্রলোভনে দুয়েকজন চলে গেলেও জোট অটুট

হালুয়া-রুটির প্রলোভনে দুয়েকজন চলে গেলেও বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০দলীয় জোট অটুট রয়েছে বলে দাবি করছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।

বৃহস্পতিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী বাস্তুহারাদলের ২৩তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত সম্মেলনে তিনি এ কথা বলেন।

সনদ নিয়ে সাংবাদিকতা করতে হবে বলে যে প্রক্রিয়া চলছে তাতে সন্দেহ পোষণ করে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব বলেন, ‘শুনতে পাচ্ছি সরকার সাংবাদিকদের আরো বেশি নিয়ন্ত্রণ করার জন্য এখন প্রেসকাউন্সিলের আইন পরিবর্তন করছে। এখন থেকে প্রেস কাউন্সিলের অনুমোদন ছাড়া কেউ সাংবাদিকতা করতে পারবে না। এর ফলে আওয়ামী লীগের মনঃপুত লোক ছাড়া কেউ সাংবাদিকতা করতে পারবে না।’

সংবিধান প্রণেতাদের উদ্ধৃতি দিয়ে একটি নির্দিষ্ট দলকে ক্ষমতায় রাখতেই সংবিধান সংশোধন করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আজকে সবাই বলছে সংবিধানকে এমন একটি অবস্থায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে তা আর কোনোভাবেই  গণতান্ত্রিক শাসনের জন্য উপযোগী হতে পারে না। এটা কেবলমাত্র বাকশালী শাসনের জন্য প্রযোজ্য হতে পারে।’

মির্জা আলমগীর বলেন, ‘বর্তমান সরকার একের পর এক আইন করে চিরকাল ক্ষমতায় থাকার পাঁয়তারা করছে। তারা নীতিমাল তৈরি করে মিডিয়া নিয়ন্ত্রণ করতে চাইছে। এটা নীতিমালা নয় ভীতিমালা, সাংবাদিকরা যেন জনগণের কথা বলতে না পারেন, সরকারের অপকর্মের কথা বলতে না পারেন।’

বিচারপতিদের অভিশংসন ক্ষমতা যতি সংসদের হাতে যায় তা হবে আওয়ামী লীগের হাতে চলে যাওয়া। কারণ সংসদে জনগণের প্রতিনিধি নেই। এটা একটা দলীয় ফোরাম মাত্র।’

দেশে বর্তমানে আওয়ামী গণতন্ত্র চলছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আজকে রাজপথে সভাসমাবেশ করা যাবে না। মানববন্ধন করলেও পুলিশের অনুমতি লাগবে। এটা কোন ধরনের গণতন্ত্র?’

সরকার আইনের শাসনকে ধ্বংস করেছে মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘মানুষের নিরাপত্তা নেই। ঘরে ঢুকে মানুষকে হত্যা করা হচ্ছে। অথচ আমাদের সাবেক প্রধানমন্ত্রী বলেছিলেন, আমরা কি বেডরুম পাহারা দিব? আপনারা তো কিছুই পাহারা দিতে পারেন না। সীমান্তগুলো অরক্ষিত।’

আ’লীগ নেতাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আ’লীগের হাইব্রিড নেতারা যে ভাষায় কথা বলছেন, তা রাজনৈতিক শিষ্টাচারের মধ্যে পড়ে না। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া কখনো দেশ ছেড়ে যান নাই। বরং আপনাদের নেত্রীই দেশের জনগণকে ভুলে বিদেশে চলে গিয়েছিলেন। আপনাদের কি মনে নেই ৮৬ সালে আপনাদের নেত্রী জাতীয় বেঈমান সেজে এরশাদের নির্বাচনে গিয়েছিলেন। আপনারা বড় গলায় বলেন, তিনি বিক্রি হয় না। অথচ তিনি সেইদিনতো বিক্রি হয়েছিলেন।’

তারেক রহমানকে রাজনীতি থেকে দূরে রাখতে তিনি যাতে দেশে আসতে না পারেন, এজন্য একের পর এক মিথ্যা মামলা দেয়া হচ্ছে মন্তব্য করে ফখরুল বলেন, ‘বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের একের পর এক গুম হত্যা করেও আন্দোলন দমাতে পারেনি। কারণ আমরা দেশের মানুষের জন্য, গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করছি। বেগম খালেদা জিয়া আপসহীন রাজনীতি করে গেছেন। আমাদেরকে দমাতে পারবেন না। অতীতে বিএনপির বিরুদ্ধে বহু ষড়যন্ত্র হয়েছে। কোনো লাভ হয়নি। ভয় দেখাবেন না। দেশের জনগণই একদিন আপনাদের বিচার করবে।’

আওয়ামী লীগ প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা পূরণ করেনি অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘বিএনপি সরকার গঠন করলে বস্তিবাসীদের উন্নয়নে অগ্রাধিকার দেয়া হবে এবং বিএনপির আগামী কাউন্সিলে জাতীয়তাবাদী বাস্তুহারা দলকে বিবেচনা করা হবে।

জাতীয়তাবাদী বাস্তুহারা দলের আহ্বায়ক শরীফ হাফিজুর রহমান টিপুর সভাপতিত্বে সম্মেলনে আরো বক্তব্য দেন বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুল মান্নান, যুগ্ম মহাসচিব মো. শাহজাহান, আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক নাজিম উদ্দিন আলম প্রমুখ বক্তৃতা করেন।

উল্লেখ্য, ২০ দলীয় জোটের শরিক ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে ১০টি দলের সমন্বয়ে নতুন জোটের ঘোষণা দেন।

এর আগে গত ২৫ আগস্ট ২০ দলীয় জোট ছেড়ে দেন এনপিপি চেয়ারম্যান শেখ শওকত হোসেন নিলু। তবে তার দলের একাংশ এখনো বিএনপির জোটে রয়েছে।



মন্তব্য চালু নেই