প্রধানমন্ত্রী আর সাংবাদিকের বক্সিং লড়াই
ঠিক পাঁচ বছর আগের ঘটনা। জাস্টিন ট্রুডো তখন লিবারেল পার্টির ব্যাকবেঞ্চার এমপি। ক্যান্সার আক্রান্তদের সহায়তায় আয়োজিত তহবিল সংগ্রহের অনুষ্ঠান। রাজধানী নামীদামী সব ব্যবসায়ীরা সেই অনুষ্ঠানে আমন্ত্রিত। কিন্তু সব কিছু ছাপিয়ে সবার নজর কেড়ে নেন দুই জন। একজন জাস্টিন ট্রুডো, আরেকজন সেই সময়কার ক্ষমতাসীন কনজারভেটিভ পার্টির সিনেটর প্যাট্রিক ব্রাজেরিও।
সিনেটর প্যাট্রিক বয়সে তরুণ। স্থানীয় রাজনীতিতে টাফ স্ট্রিট ফাইটার হিসেবে খ্যাত প্যাট্রিক আবার মার্শাল আর্টে ব্ল্যাক বেল্ট। সেই প্যাট্রিক এর সাথে বক্সিং প্রতিযোগিতায় নেমে যান জাস্টিন ট্রুডো।
রাজনীতির ‘টাফ ফাইটার’, মার্শাল আর্টের ব্ল্যাক বেল্ট- প্যাট্রিক ‘বড় লোকের আদুরে সন্তান জাস্টিনকে ঠিক হিসেবে নিতেই চাইলেন না। কিন্তু ফাইট শুরুর পরই প্যাট্রিক এর সব হিসেবে গড়মিল হয়ে যায়। বক্সিং এ প্যাট্রিককে হারিয়ে দেন জাস্টিন ট্রুডো। সেই থেকে শুরু হয় তার সামনে এগিয়ে যাওয়া।
আজ তিনি দেশের প্রধানমন্ত্রী। রাজনীতির বিশ্লেষকদের অনেকেই মনে করেন, সেইদিনের সেই বক্সিং এ প্যাট্রিককে হারিয়ে দেওয়ার ঘটনাই রাজনীতিতে তার ভাগ্য নির্ধারণ করে দেয়। এখন তো তিনি প্রধানমন্ত্রী। জাস্টিন ট্রুডোও সম্ভবত তেমনটিই ভাবেন। সেজন্য তিনি আনুষ্ঠানিকভাবেই পালন করলেন সেই বক্সিং জেতার পঞ্চম বার্ষিকী।
পঞ্চমবার্ষিকীতে প্রধানমন্ত্রীর ইন্টারভিউ করতে গিয়েছিলেন টরন্টো স্টার পত্রিকার সাংবাদিক ডিক্লান হিল। প্রধানমন্ত্রী হিসেবে ‘রাজনীতির বক্সিং রিং এ জাস্টিন ট্রুডোর পারফরমেন্স বাজিয়ে দেখাই ছিলো রিপোর্টারের লক্ষ্য। কিন্তু প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সত্যি সত্যি বক্সিং প্রতিযোগিতা নিমে পড়েন টরন্টো স্টারের সাংবাদিক।
ডিক্লান বলছেন, ইন্টারভিউর ঠিক আগ মুহূর্তে জাস্টিন আমার চোয়ালে ঘুষি মারার চেষ্টা করলো। আমি দ্রুত সেটি ফিরিয়ে দিলাম। পাল্টা আঘাতে উদ্যত হতেই আমার মনে হলো- একজন প্রধানমন্ত্রীকে আঘাত করা এতো সহজ কাজ নয়। জাস্টিন এবার আমার মুখে আঘাত করলেন।
ডিক্লান জানান, ট্রুডো এবং আমি দুজনে দুজনকে সার্কেল করে রিং এ দাড়ালাম। দুজনেই চেষ্টা করছি আঘাত করার, দুজনেই সেই চেষ্টাকে আটকে দিচ্ছি। হঠাৎ আমার ঘুষিটা গিয়ে লেগে যায় ট্রুডোর গালে। ‘ও মাই গড। ‘ বলেই দু’হাত উপরে তুলে ডিক্লান বলেন, ‘আমি দু:খিত, খুবই দু:খিত। ‘
‘আর একবার যদি তুমি দু:খ প্রকাশ করো- তা হলে আমি তোমাকে কঠিনভাবে আঘাত করবো। ‘ ট্রুডো বললেন। পরে তারা লড়াই চালিয়ে যেতে লাগলেন।
প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাংবাদিকের বক্সিংটা যারা দেখছিলেন, তাদের মধ্যে একজন মহিলা উচ্চস্বরে চিৎকার করছিলেন- ‘তাকে মারো, জোরে মারো। ও একজন সাংবাদিক। ‘
যে নারী এভাবে চিৎকার করছিলেন- তিনি স্থানীয় সিটির একজন কাউন্সিলর। রাউন্ড শেষ হওয়ার পর ডিক্লান সেই নারীর কাছে যান। আস্তে আস্তে বলেন, ‘তা হলে সাংবাদিকের সঙ্গে তোমার একটা টানাপড়েন চলছে?’
মুখভর্তি হাসি ছুড়ে দিয়ে ও নারী বলেন, আমি ঠাট্টা করছিলাম। দেশে অনেক ভালো সাংবাদিক আছে। কিন্তু একজন রাজনীতিকের জন্য এটাই হচ্ছে লেভেল প্রেয়িং ফিল্ডের সবচেয়ে বড় সুযোগ।
(লেখকের ফেসবুক পেজ থেকে নেয়া)
মন্তব্য চালু নেই