শনিবার অবরোধের পাশাপাশি বিক্ষোভ মিছিল
প্রধানমন্ত্রীর ঔদ্ধত্য জোয়ারের লক্ষণ নয়, ভাটার টান : বিএনপি
বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব সালাহ উদ্দিন আহমেদ বলেছেন, প্রধানমন্ত্রীর ঔদ্ধত্য, অসংযত ও লাগামহীন আচরণ ক্ষমতার ভাটার টান। গলার জোরে ক্ষমতায় টিকে থাকার নিষ্ফল ব্যাকুলতামাত্র।জনগণ সেটা বোঝে।
বৃহস্পতিবার বিকালে এক বিবৃতিতে তিনি এ কথা বলেন।
সালাহ উদ্দিন আ্হমেদ বলেন, “ বুধবার জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী ঔদ্ধত্য ভঙ্গিতে ঘোষণা দিয়েছেন যে, প্রয়োজনে বিএনপিকে নিষিদ্ধ করা হবে। সরকার জামায়াতকে নিষিদ্ধ করার ঘোষণা ইতোপূর্বে অনেকবার দিয়েছে। আওয়ামী মন্ত্রী-নেতারা এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্তাব্যক্তিরা প্রধানমন্ত্রীর সুরে সুর মিলিয়ে আরো ঔদ্ধত্য, অসংযত ও লাগামহীন আচরণে লিপ্ত। এ জাতীয় বাক্যবাণ জোয়ারের লক্ষণ নয়, ক্ষমতার ভাটার টান। গলার জোরে ক্ষমতায় টিকে থাকার নিষ্ফল ব্যাকুলতামাত্র-জনগণ সেটা বোঝে। প্রধানমন্ত্রীর পিতা সকল দল নিষিদ্ধ ঘোষণা করেও ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারেননি, তিনিও পারবেন না।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “নৈতিক, সাংবিধানিক, গণতান্ত্রিক, রাজনৈতিক ও আন্তর্জাতিকভাবে অগ্রহণযোগ্য, অন্যায্য ও অবৈধ একটি ভুয়া নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত অবৈধ সরকার বর্গী শাসকদের কায়দায় দেশ শাসন করছে। যেখানে নিরন্তরভাবে লঙ্ঘিত হচ্ছে নাগরিকদের সাংবিধানিক ও মানবিক অধিকার। “
সালাহ উদ্দিন আ্হমেদ বলেন, “প্রধানমন্ত্রী ‘টক শো’ ওয়ালাদের দেখে নেয়ার হুমকি দিয়েছেন। ইতোমধ্যে অনেক সংবাদপত্র ও টিভি চ্যানেল বন্ধ করে সেসব মিডিয়া মালিকদের গ্রেফতার করেও চিন্তাহীন হতে পারেননি তিনি। বাকশালী কায়দায় সকল সংবাদপত্র ও মিডিয়া বন্ধ করে দিয়ে তার পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করেও তিনি তৃপ্ত হতে পারবেন বলে মনে হয় না।”
বিএনপি নেতা বলেন, “আওয়ামী লীগ প্রতিনিয়ত বিএনপিকে জঙ্গি ও সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে আখ্যায়িত করার বিরামহীন অপচেষ্টা ও অপপ্রচার চালিয়েই যাচ্ছে। সেই ষড়যন্ত্রেরই অংশ হিসেবে প্রতিদিন সুপরিকল্পিতভাবে আওয়ামী লীগের দূর্বৃত্তদের দিয়ে সহিংসতা ও পেট্রলবোমার নাশকতা পরিচালনা করে বিরোধী দলের ওপর তার দায় চাপিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক মহলের সহানুভূতি আদায়ের নিষ্ফল প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। ”
তিনি বলেন, “সাবেক পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী, বিশিষ্ট কুটনীতিবিদ ও বিএনপি চেয়ারপার্সন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার উপদেষ্টা জনাব রিয়াজ রহমানের ওপর বর্বর হামলা ও হত্যা প্রচেষ্টার দায়ভারও বিএনপি’র ওপর চাপানোর চেষ্টা করা হয়েছে। আজ পর্যন্ত এই মামলায় তদন্তের কোনো অগ্রগতি নেই। একই কায়দায় বিএনপি চেয়ারপার্সনের আরেক উপদেষ্টা সাবেক রাষ্ট্রদূত সাবিহ উদ্দিন আহমেদের ওপরও ন্যাক্কারজনক হামলা ও তার গাড়ি পুড়িয়ে দেয়া হয়েছে। বুধবার আরেক উপদেষ্টা দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও এফবিসিসিআই এর সাবেক সভাপতি আবদুল আউয়াল মিন্টুর ফেনীর বাসভবনে অগ্নিসংযোগ ও বোমা হামলা চালিয়েছে আওয়ামী দূর্বৃত্তরা। আমরা এ জাতীয় সকল ঘটনার প্রতি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলোর দৃষ্টি আকর্ষণ করছি এবং উক্ত ঘটনাসমূহের তীব্র নিন্দা, প্রতিবাদ ও বিচারের দাবি জানাচ্ছি।”
বিবৃতিতে আরো বলা হয়, “সমগ্র জাতি গভীর উদ্বেগের সাথে লক্ষ্য করছে যে, বুধবার রাতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের গুলশান কার্যালয়ে রাতের খাবার ও পানি সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে সরকারি পেটোয়া পুলিশ বাহিনীর লোকেরা। খালেদা জিয়া এবং কার্যালয়ে অবস্থানরত সকলেই এখনও অভুক্ত অবস্থায় আছেন। ভাতে মারার আর পানিতে মারার নীতি অবলম্বন করে, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করে, টেলিফোন, ফ্যাক্স, ইন্টারনেট ক্যাবলসহ সকল যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়ে খালেদা জিয়াকে নিষ্ঠুর কায়দায় হত্যার ষড়যন্ত্র করে যাচ্ছেন শেখ হাসিনা । জলকামান, বালির ট্রাক, মরিচের স্প্রেসহ সকল ঘৃণ্য কায়দায় নির্যাতন প্রচেষ্টা সত্ত্বেও জনগণের অধিকার আদায়ের আন্দোলন থেকে দেশনেত্রীকে একচুলও সরাতে ব্যর্থ হয়ে অবশেষে ইতিহাসের জঘন্যতম বর্বর ও হীন দৃষ্টান্ত স্থাপন করে আওয়ামী সরকার সারাবিশ্বের কাছে বাংলাদেশের সম্মানকে ভুলুণ্ঠিত করছে।”
বিবৃতিতে বলা হয়, “খালেদা জিয়ার এবারের সংগ্রাম দেশরক্ষার সংগ্রাম, স্বৈরাচারী একনায়কতন্ত্র থেকে দেশের মানুষকে রক্ষার সংগ্রাম। অবরুদ্ধ গণতন্ত্রকে মুক্ত করার সংগ্রাম। ভোটের অধিকার, মৌলিক মানবাধিকার রক্ষার সংগ্রাম। জনগণের ন্যায্য অধিকার আদায়ের আন্দোলনে খালেদা জিয়া যেকোনো ত্যাগ স্বীকার করতে প্রস্তুত রয়েছেন। দেশের মুক্তিকামী আপামর জনসাধারণ দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে ঐক্যবদ্ধ হয়ে অন্যায়ের বিরুদ্ধে নিরন্তর লড়াই সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছেন। অবিরাম সংগ্রামের মধ্য দিয়ে এই অবৈধ সরকারের পতন না হওয়া পর্যন্ত গণতন্ত্র মুক্তি আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।”
সালাহ উদ্দিন আ্হমেদ বলেন, “অবৈধ সরকারের পায়ের তলায় মাটি নেই। শাসকশ্রেণীর নির্মম পতন অবশ্যম্ভাবী। অবৈধ সরকারের ক্ষমতার সূর্য অস্তমিতপ্রায়। নিষ্ঠুর, নির্মম কায়দায় দমন-পীড়ণ অব্যাহত রেখে শাসকশ্রেণী নিজেদের পতন তরান্বিত করছে। সময় থাকতে গণদাবি মেনে নিয়ে পদত্যাগ করুন, অন্যত্থায় জনতার রোষানল থেকে কেউ আপনাদের রক্ষা করতে পারবে না।”
তিনি বলেন, “আগামী ১৪ ফেব্রুয়ারি শনিবার দেশের সকল থানা, উপজেলা, পৌরসভা ও জেলা সদরে এবং সকল মহানগরের প্রতি ওয়ার্ডে শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ মিছিল হবে। ইতোমধ্যে সরকার গণদাবি মেনে নেয়ার ঘোষনণা না দিলে আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি রোববার থেকে একই দাবিতে চলমান অবরোধের সাথে সাথে সর্বাত্মক হরতালসহ আরো কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।”
বিবৃতিতে ‘চলমান অবরোধ-হরতাল কর্মসূচি পালন করতে গিয়ে পুলিশের তথাকথিত বন্দুকযুদ্ধে নিহত ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীসহ দুর্বৃত্তদের পেট্রলবোমা নিক্ষেপে যেসব নিরীহ মানুষ নিহত হয়েছেন’, খালেদা জিয়ার পক্ষ থেকে তাদের আত্মার মাগফিরাত এবং আহতদের সুস্থতা কামনা করছি। বিএনপিসহ ২০ দলীয় জোটের নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে দায়েরকৃত সকল মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার ও গ্রেফতারকৃতদের নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করা হয় বিবৃতিতে। ‘দেশকে সন্ত্রাসের ভয়াল জনপদে পরিণত না করতে’ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর প্রতি আহবান জানানো হয়।
মন্তব্য চালু নেই