প্রধানমন্ত্রীকে একটা চাকরির কথা বলতে চেয়েছিলেন কিন্তু পারেননি ইমাম শেখ!
শুক্রবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ভ্যানে চড়িয়ে তার নিজ এলাকা ঘুরিয়ে দেখায় ১৭ বছর বয়সী ভ্যানচালক ইমাম শেখ। তবে প্রধানমন্ত্রীকে মনে কথা বলে উঠতে না পারায় এখনও আফসোস তার। প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটি চাকরির কথা বলতে না পেরে এখন মনও কিছুটা খারাপ তার।
পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত উঠে আটকে যায় ইমাম শেখের পড়াশোনা। তার বাড়ি টুঙ্গিপাড়া উপজেলা সদরের পাটগাতী সরদার পাড়া গ্রামে। এখন জীবনযুদ্ধ চলে ভ্যান চালিয়ে। বাবা আব্দুল লতিফ শেখ মানসিক রোগী, মা গৃহিণী। ইমাম শেখরা দুই ভাই, তিন বোন। এক ভাই ঢাকায় নতুন চাকরি শুরু করেছেন। এখনও বেতন পাওয়া শুরু হয়নি। ইমাম এলাকাতেই ভ্যান চালায়।
ভ্যান থেকে নেমে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কিশোর ভ্যানচালক ইমামকে ৫০০ টাকা বের করে দেন। ইমাম শেখ টাকা নিতে রাজি হয়নি। বঙ্গবন্ধুর কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার ভ্যানে চড়েছেন- এতেই সে মহাখুশি, আনন্দে আত্মহারা।
কিসের টাকা, কিসের কী? এমন স্মরণীয় মুহূর্তে তার জীবনে আর কোনো দিন আসেনি। তাই দুর্লভ এমন মুহূর্ত টাকার ফ্রেমে বন্দি করতে রাজি হয়নি ইমাম শেখ। পরে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে থাকা নিরাপত্তা বাহিনীর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা ইমামের পকেটে টাকা গুজে দেন। তখন আর না বলে পার পায়নি ইমাম। টাকা নেওয়ার সময়ও ভ্যানচালক ইমাম শেখ প্রধানমন্ত্রীকে মনের আকুতিটি জানাতে চেয়েছিলো। কিন্তু মুখ ফুটে কথাটি বলতে পারেনি।
ইমাম শেখ বলেন, ‘শুক্রবার (২৭ জানুয়ারি) আমি পাটগাতী স্ট্যান্ডে ভ্যান নিয়ে দাঁড়িয়ে ছিলাম যাত্রীর অপেক্ষায়। প্রধানমন্ত্রীর সফরে দায়িত্ব পালনকারী দুই কর্মকর্তা আমার ভ্যানে উঠে বঙ্গবন্ধু সমাধি সৌধে যেতে বলে। আমি সমাধি সৌধের কাছে এলে নিরাপত্তা কর্মীরা আটকে দেয়। পরে ভ্যানে থাকা ওই দুই কর্মকর্তা তাদের পরিচয় দিলে আমাকে ভ্যান নিয়ে সমাধি সৌধের ১নং গেটে যেতে দেয়।’
ইমাম জানায়, ‘সেখানেই প্রধানমন্ত্রী ও তার পরিবারের সদস্যরা আসেন। প্রধানমন্ত্রী ভ্যানে চড়তে আগ্রহ প্রকাশ করেন। সেখানে আমারসহ দু’টি ভ্যান ছিল। নিরাপত্তা কর্মীরা আমার ভ্যান পছন্দ করেন। আমাকে চেক করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নিয়ে যায়। প্রধানমন্ত্রী ভ্যানে ওঠেন। উঠে জিজ্ঞাসা করেন- ‘তুমি ভ্যান চালাও’ । আমি উত্তরে বলি ‘হ্যাঁ’ । প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ইঞ্জিনচালিত ভ্যান চালিয়ে আমার বিদ্যুৎ নষ্ট করছো’। বলেই হেসে দেন। আমিও হেসে দিই। নিজের ভ্যানে প্রধানমন্ত্রীকে বহন করে তার নতুন বাসভবনে যাই। প্রায় ১ কিলোমিটার রাস্তা অন্য রকম আনন্দে অত্যন্ত সাবধানতার সঙ্গে চালিয়ে যাই।’
ইমাম শেখ আরও জানায়, ‘এ সময়ের মধ্যে বার বার একটি চাকরি দেওয়ার কথা বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী আমার ভ্যানে চড়ে ঘুরবেন। আর আমিই সেই ভ্যানের চালক। এমনটা কোনোদিনও কল্পনা করতে পারিনি। এ আনন্দে শেষ পর্যন্ত আর মনের কথা বলতে পরিনি।’
ইমাম শেখ বলে, ‘প্রধানমন্ত্রীর বিদ্যুৎ উৎপাদনে অনেক শ্রম দিয়েছেন। ইঞ্জিনচালিত ভ্যানে তিনি বিদ্যুৎ নষ্টের কথা বলেছেন। তাই আমি ভ্যান ছেড়ে বিকল্প কর্মসংস্থানে যেতে চাই।’
মন্তব্য চালু নেই