প্রথম সিনেমায় আমার আয় ছিলো মাত্র দশ টাকা! অভিনেত্রী রোজিনার গল্প শুনুন…

চলচ্চিত্রকে বিদায় জানিয়ে লন্ডনে থিতু হয়েছেন একসময়ের তুমুল জনপ্রিয় অভিনেত্রী রোজিনা। মাটির টানে মাঝে মাঝে বাংলাদেশে আসেন তিনি। এবার ঈদটা দেশে কাটতে ৯ জুন লন্ডন থেকে উড়ে ঢাকায় নেমেছেন। দেশে ফিরেই তুমুল ব্যস্ত হয়ে উঠেছেন তিনি। অংশ নিচ্ছেন টিভি অনুষ্ঠান আর বিভিন্ন ইফতার পার্টিতে। তারই এক ফাঁকে মুখোমুখি হলেন তিনি। জানালেন, তার অভিনয়ের বাইরের জীবন, সেই সোনালী সময়ের কথা, এখনকার ইন্ডাস্ট্রির কথা।

প্রায় বছর দশেক পর এফডিসিতে এলেন। কেমন লাগছে?
অনেকদিন ধরে এফডিসিতে যাওয়া হয় না। সর্বশেষ ২০০৫ সালে ইমপ্রেসের ছবি ‘রাক্ষুসী’র ডাবিং করেছিলাম। তারপরও আর আসা হয়নি খুব একটা। এবার এফডিসিতে এসে একটু খারাপই লেগেছে। নস্টালজিক হয়ে গিয়েছিলাম। কতো স্মৃতি জড়িয়ে আছে। প্রত্যেকটা ফ্লোরেই এক সময় কাজ করেছি। দেখা গেলো সকালে চার নাম্বার ফ্লোরে তো বিকেলে এক নাম্বার ফ্লোরে। খুব ব্যস্ত সময় কেটেছিল আমার। এফডিসিও তখন সরগরম ছিল। দিনভর তো বটেই অনেক রাত অবধি কাজ চলতো। কিন্তু এখন সেই ব্যস্ততা আর নেই। অনেকটাই নীরব। একটা মেকাপ রুমে ঢুকে দেখলাম লাইট নেই। দেখে কষ্ট হচ্ছিল। আমরা যখন অভিনয় ছেড়ে দিয়েছি তখন ভেবেছিলাম এফডিসি সামনে আরও উন্নত হবে। সব কিছুই তো উন্নতি হচ্ছে। কিন্তু এফডিসির আরও অবনতি হয়েছে।

পুরনো স্মৃতি মনে পড়েনি? কেমন ছিলো সেই সময়টা ?
খুব ব্যস্ত সময় কেটেছিল। সকাল বিকেল রুটিন করে এফডিসিতে শুটিং করতাম। কাজ করেছি সিনসিয়ারলি। প্রচুর দর্শকরা সিনেমা হলে যেতো। একটা ছবি মাসের পর মাস হাউসফুল থাকতো। ১৯৭৮ থেকে ৯৩ পর্যন্ত আমাকে পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। অনেক ছবি সুপার হিট হয়েছে। দর্শকদের ভালোবাসা পেয়েছি অনেক।

হারানো সময়গুলো মিস করছেন?
ভীষণ রকমের মিস করছি। তবে কাজ করার জন্য না। ইন্ডাস্ট্রির জন্য। ইন্ডাস্ট্রির অবস্থা তো বেশ খারাপ। কলকাতার সঙ্গে কো-অপারেশন করে বাংলা সিনেমা চালাতে হচ্ছে।

সিনেমার এই অবস্থার কারণ কী মনে করছেন?
যে প্রডিউসাররা সিনেমা প্রডিউস করছে তারা বিজনেস মাইন্ডের না। আর শিল্পীদের পার্সোনাল স্কিলও কম। শাকিব খান ছাড়া বাকিদের মধ্যে স্কিল খুব একটা দেখছি না। ২০১২ সালে ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ডে সেন্সর বোর্ডের মেম্বার ছিলাম। তখন প্রচুর বাংলা সিনেমা দেখেছিলাম। সেখানে দেখলাম, চরিত্র অনুযারি কোন শিল্পী গেটাপ নেয়না। এটার জন্য আমি ডিরেক্টরকে দোষ দেবো। আমি একটা নিন্মবিত্ত গ্রামের মেয়ের চরিত্র করছি কিন্তু কাপড় পড়ছি রঙচঙে। ডিরেক্টরকে তো আর্টিস্টদের বলতে হবে, কেমন কস্টিউম হবে। গ্রামের মেয়ের চরিত্র করার সময় আমাকে সেই চরিত্রের মধ্যে ঢুকে যেতে হবে। তখন আমি আর রোজিনা নয়। এখনকার অভিনয়শিল্পীরা গ্ল্যামারের পেছনেই বেশি ছুটছে। অভিনয়ের আগ্রহ নেই। এখনকার অভিনয়শিল্পীরা নাকি একটা সিনেমা করেই গাড়ি বাড়ি করে ফেলে। অথচ প্রথম সিনেমায় আমার আয় ছিলো মাত্র দশ টাকা। শুরুর দিকে স্কুটারে করে এফডিসিতে আসতাম। সিনেমার এই অবস্থার আরেকটা কারণ হলো, শিল্পীরা অভিনয় শুরু করার আগেই পত্রিকায় পাবলিসিটি শুরু হয়। এতে করে তাদের মাথা গরম হয়ে যায়। ফলে তারা ধরেই নেয় অনেক বড় কিছু হয়ে গেছি।

নতুনদের জন্য আপনার পরামর্শ কী?
ছেলে হোক মেয়ে হোক যারাই অভিনয়ে আসুক তারাই কাজকে ভালোবাসুক। তাদের নিয়ে মিডিয়ায় লেখালেখি হোক কিংবা না হোক এসব নিয়ে ভাববার দরকার নেই। ভাবতে হবে কিছুই করতে পারিনি। কাজ করে যেতে হবে। ভালো কাজ করলে যুগ যুগ ধরে দর্শকদের মনের মধ্যে থাকবে।

আপনার পরের প্রজন্মের নায়িকাদের মধ্যে কারা ভালো করছে?
শাবনুর, মৌসুমী আর পূর্ণিমাকে ছাড়া তো তেমন নায়িকা দেখছি না।

সিনেমাকে বিদায় জানালেন কেন?
একটা সময় প্রচুর কাজ করেছি। দেশে তো বটেই দেশের বাইরেও অভিনয় করেছি। পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকার ছবি করেছি। তিন চার বছর সর্বাধিক ছবি রিলিজ হয়েছিল আমার। সকাল থেকে রাত অবধি শুটিং করেছি। পরে ফিল করলাম অভিনয় জগৎ থেকে অবসর নিয়ে একটু সংসারে মনোযোগী হই। তারপরই ঘোষণা দিলাম আপাতত নতুন ছবি আর হাতে নেবো না। তবে পুরাতন ছবি গুলো শেষ করবো। ঝুলে থাকা ছবি শেষ করে লন্ডনে চলে গেলাম।

লন্ডনের দিনগুলি কেমন কাটতো?
লন্ডনে আমি তো হাউসওয়াইফ। ঘর সামলাতাম। টুকটুক জিমে যেতাম। মাঝে মাঝে দেশে আসতাম। কয়েকদিন থেকে আবার চলে যেতাম।

এবার দেশে কতোদিন থাকছেন?
কোরবানীর ঈদ অবধি থাকবো।

দেশে আসার পর আপনার সময়গুলো কিভাবে কাটছে?
দেশে আসার পরপরই তো ব্যস্ত হয়ে গেলাম! টিভি থেকে অনেকগুলো প্রোগ্রামের ডাক পড়ছে। বেশ কয়েকটা ইতিমধ্যেই শেষ করেছি। ফারুক ভাইয়ের সঙ্গে একটা প্রোগ্রাম করলাম। অনেকদিন পর চম্পার সঙ্গে দেখা হলো। খুব ভালো লাগলো। পাশাপাশি বিভিন্ন ইফতার পার্টিতে থাকছি।

দর্শকদের কাছ থেকে প্রতিক্রিয়া পান কেমন?
দর্শকরা ভোলেনি এখনো আমাকে। তাদের প্রতি সত্যিই আমি কৃতজ্ঞ।

আপনার সিনেমাগুলো এখন দেখেন?
তখন তো হলে বসে সিনেমা দেখা হয়ে উঠেনি। এখন ইউটিউবে বসে বসে নিজের সিনেমাগুলো দেখি। আমি অবাক হয়ে যাই। ভাবতেই পারি না, আমিই কাজগুলো করেছি।

আবার অভিনয়ে ফিরবেন কী না?
আসলে যদি ভালো গল্প, ভালো চরিত্র, ভালো নির্মাতা পাই তাহলে করবো। নতুবা অতটা আগ্রহী নয়। তবে অভিনয়ের চেয়ে ডিরেকশনের আগ্রহী বেশি। সুযোগ সুবিধা হলে সামনে ডিরেকশন দেবো ইনশাল্লাহ। বাংলামেইল



মন্তব্য চালু নেই