প্রকৃতির ছোঁয়া দিতে বনসাই
বনসাই হল টবের মধ্যে ফলানো পূর্ণ অবয়বে খর্বাকৃতির যেকোনো গাছ। বনসাই তৈরিতে থাকে নানা নান্দনিকতার ছোঁয়া থাকে। চীনা পেনজাই শব্দ থেকে বনসাই শব্দের উৎপত্তি হয়েছে। খ্রীষ্টপূর্ব চার হাজার অব্দ থেকেই প্রাচীন মিশরীয় সভ্যতায় টবে বিভিন্ন ধরনের গাছের চারা জন্মানোর প্রচলন ছিল। তখন ওষুধ ও খাবারের জন্য পাথর কেটে পাত্র তৈরি করে গাছ লাগানো হত। এক হাজার বছর আগে চীনে এর প্রচলন শুরু হলেও দ্বাদশ শতাব্দীতে জাপানীদের নান্দনিক ছোঁয়ায় এটি শিল্পে পরিণত হয়। শহুরে কংক্রিটের ঘর-দোরে বনসাই পারে প্রকৃতির ছোঁয়া দিতে। তাই আমাদের দেশে প্রকৃতি ও সৌন্দর্যপ্রেমি নগরবাসীর কাছে ঘরের শোভা বাড়াতে বনসাইয়ের গুরুত্ব অনেক।
বনসাইয়ের আকৃতি মূলত তিন ধরনের। ১০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত স্মল শেপ, ১০ থেকে ২৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত মিডিয়াম শেপ, ২৫ থেকে ৪৫ সেন্টিমিটার পর্যন্ত লার্জ শেপ। বনসাই বেশ দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। বনসাইয়ের জন্য উপযোগী বৃক্ষ বট, চায়না বট, তমাল, কদবেল, শিমুল, তেঁতুল, বাগানবিলাস, ছাতিম, হিজল, নিম, অর্জুন, কড়ই, দেবদারু, হরীতকী, রঙ্গন, বাবলা, বকুলসহ অন্যান্য অনেক গাছ। ভালো মানের একটি বনসাইয়ের কিছু বৈশিষ্ট্য থাকা প্রয়োজন। যেমন-
* গাছের প্রধান কান্ডটিকে সবচেয়ে বেশি মোটা থাকতে হয়।
* গাছের উচ্চতানুযায়ী গাছের শাখা প্রশাখা অর্ধেক বা তার চেয়ে বেশি থাকতে হয়।
* গাছের বাইরের আকৃতি দেখতে অনেকটা ত্রিভুজের বৃত্তের মত দেখাতে হয়।
* মরে যাওয়া এবং রুগ্ন পাতা, পোকা-মাকড় থাকবে না।
* টবের রং গাছের সাথে মানানসাই হতে হয়। বনসাইয়ের পাত্রে বা টব পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন হতে হবে।
* গাছের সব পাতার আকার এরকম হতে হয়। ফুল ও ফলে কোন ধরনের বিকৃতি থাকতে পারে না।
বনসাইয়ের দরদাম নির্ভর করে গাছের বয়স ও গঠনের ওপর। দেশের বাজারে ৫০০ থেকে ৭ হাজার টাকা পর্যন্ত বনসাই পাওয়া যায়। বনসাই প্রদর্শনী, কৃষিমেলা, বৃক্ষমেলা এমনকি বনসাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে বনসাই সংগ্রহ করতে পারেন। বনসাই তৈরির জন্য বাংলাদেশ বনসাই সোসাইটি, রাজশাহী বনসাই সোসাইটি আছে। এসব সংগঠনের মাধ্যমে বনসাই সংগ্রহ করতে পারেন। সংগ্রহের সঙ্গে সঙ্গে বিক্রেতার কাছ থেকে জেনে নিতে পারবেন এর পরিচর্যা কীভাবে করতে হয়। তাছাড়া বনসাই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে আপনি নিজেই বনসাই বানাতে পারেন।
মন্তব্য চালু নেই