পেসার ‘দৈন্যদশা’ কাটাতে পেসার ক্যাম্প

বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের বর্তমান পারফরম্যান্সে ক্রিকেট সংশ্লিষ্টরা আকাশে উড়ছেন। বোর্ড কর্মকর্তাদের মুখের হাসি বেড়ে গেছে। টিম ম্যানেজম্যান্ট থেকে শুরু করে ক্রিকেট অপরারেশন্স কমিটি, ক্রিকেটাররা সবাই নিজেদের সেরাটা দিতে পেরে সন্তুষ্ট। বিশ্বকাপে আশানুরূপ পারফরম্যান্সের কারণে ক্রিকেটারদের কাছ থেকে প্রত্যাশা বেড়ে যায় দ্বিগুণ। সেই ক্ষুধা বেশ ভালোমত মিটিয়ে দেন টাইগাররা। পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ৩-০ ব্যবধানে সিরিজ জয়, একমাত্র টি-টোয়েন্টিতে জয় তারই প্রমাণ।

রঙিন জার্সির পর সাদা জার্সিতেও ভালো করে বাংলাদেশ। খুলনায় গৌরবের ড্র নিয়ে ঢাকায় টেস্ট খেলে বাংলাদেশ। কিন্তু শেষটাতে পাকিস্তানের দাপুটে পারফরম্যান্সে কিছুটা হোঁচট খায় বাংলাদেশ। তবুও গোটা সিরিজের পারফরম্যান্সের সন্তুষ্ট সবাই। তবে শেষটাও যদি ভালো হত, তাহলে উৎসবের রঙ আরও গাঢ় হত। ওয়ানডেতে বাংলাদেশ যেভাবে উন্নতি করেছে সেভাবে টেস্টে করেনি, তা আরেকবার প্রমাণ হলো। টেস্ট অধিনায়ক মুশফিকুর রহিম অন্য দশজনের মত বিশ্বাস করেন, টেস্ট ম্যাচ জিততে প্রতিপক্ষের ২০ উইকেট প্রয়োজন। কিন্তু বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ কি ২০ উইকেট নেওয়ার মত? প্রশ্নটা বারবার ঘুরপাক খাচ্ছে, কিন্তু উত্তর জানা নেই।

দলপতি মুশফিকুর রহিমও বোলিং আক্রমণ নিয়ে কিছুটা অসন্তুষ্ট। স্পিনাররা লড়াকু মনোভাব তৈরী করে দিলেও পেসাররা একেবারে নিষ্প্রভ। পেসারদের পারফরম্যান্স নির্বাচকসহ বোর্ড কর্মকর্তাদের রীতিমত ভাবিয়ে তুলছে। ঢাকা টেস্টের কথাই ধরা যাক, মিরপুরে পেসার শহীদ একাই ২২ গজের ক্রিজে দৌড়েছেন। শাহাদাত হোসেন রাজীব মাত্র ২ বল করেই ইনজুরিতে পড়ে ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছেন। বল করেছেন মিডিয়াম পেসার সৌম্য সরকার। কিন্তু তিনিও নিষ্প্রভ। ঢাকায় টেস্টে যেরকম উইকেট তাতে তিন পেসার নিয়ে খেলার কথা চিন্তা করতে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু টিম ম্যানেজম্যান্ট সেটা করেনি। ফলে খেসারতও দিতে হয়েছে। বোলিংয়ের পাশাপাশি ব্যাটিং ব্যর্থতায় একদিন আগেই টেস্ট শেষ!

পেসারদের ভয়াবহ পারফরম্যান্সের অন্যতম কারণ ফিটনেস। আবুল হাসান রাজু, টেস্ট ‘স্পেশালিস্ট’ রবিউল ইসলাম শিপলু, শফিউল ইসলাম পাঁচদিন টেস্ট খেলার জন্য প্রস্তুত নন। মাশরাফি বিন মর্তুজা ও তাসকিন আহমেদ টেস্ট খেলার বিবেচনার বাইরে। বিশ্বকাপের মাঝপথে দেশে ফেরত আসা আল-আমিন এখানো নির্বাচকদের নজর কাড়তে পারেননি। আর রুবেল হোসেন গত ছয় মাস ধরে ফিট থাকলেও ঢাকা টেস্টে খেলতে পারেননি। এই হলো দেশের প্রথমসারির পেসারদের অবস্থা। এই শক্তি নিয়ে টেস্টে কতটুকু উন্নতি করতে পারবে বাংলাদেশ তা সময় বলে দেবে!

পাকিস্তানের বিপক্ষে শেষ ম্যাচ বাদে সবকটিতেই ভালো করেছে বাংলাদেশ। সামনের মাসেই আসছে ভারত। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া। ভারতকে বাদ দিলে দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়া দল পেস আক্রমণ নির্ভর। সেখানেই বাংলাদেশের পেসারদের দিতে হবে আসল পরীক্ষা। এ জন্য এখন থেকে পেসারদের নিয়ে কাজ শুরু করবে বিসিবি। প্রধান নির্বাচক ফারুক আহমেদ জানিয়েছেন, ১৫ জন পেসার নিয়ে দ্রুত ক্যাম্প করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন তারা।

গুরুত্বপূর্ণ সিরিজগুলোতে পেসারদের কাছ থেকে ভালো পারফরম্যান্স চায় বিসিবি। এ জন্য বোলিং কোচ হিথ স্ট্রিককে বাড়তি সময়ের জন্যে রেখে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে ক্রিকেট বোর্ড। জানা গেছে, ক্যাম্পটি করার জন্যে এরই মধ্যে প্রস্তুতি শুরু করেছে বোর্ড। ঢাকায় ক্যাম্প করার পাশাপাশি ফতুল্লা, চট্টগ্রাম ও বিকেএসপির বিভিন্ন উইকেটে ক্যাম্প করতে আগ্রহী বোর্ড। হোম সিরিজ শেষে ছুটিতে রয়েছেন ক্রিকেটাররা। দশ দিন ছুটি পেয়েছেন তারা। ২০ ও ২১ মে ফিটনেস পরীক্ষা হবে তাদের।



মন্তব্য চালু নেই