পৃথিবীর সবচেয়ে হিংস্র প্রাণী

পৃথিবীতে হাজারো প্রজাতির প্রাণী রয়েছে। এদের কেও কেও যেমন অতি সাধারণ তৃণভোজী কেউ আবার মাংসাশী ও হিংস্র। আন্তর্জাতিকভাবে জলজ, স্থল ও উভচর প্রানীর মধ্যে হিংস্রতার ভিত্তিতে শ্রেনীবিভাগ করা হয়েছে। আর মধ্যে মানুষ এর স্থান রয়েছে ১০ নম্বরে। আমারা এই ১ম দশটি হিংস্র প্রাণীর বর্ণনা দুটি পর্বের মাধ্যমে ব্যাক্ত করবো।

১৯৫৪ সাল থেকে এখন পর্যন্ত বক্স জেলিফিশের আক্রমনে ৫,৫৬৭ টি মৃত্যু নথিভুক্ত করা হয়েছে। এদের বিষ বিশ্বের সবচেয়ে মারাত্মক বিষ হিসেবে বিবেচিত করা হয়। বক্স জেলিফিশের বিষ আক্রান্তের হৃৎপিণ্ড ,স্নায়ুতন্ত্র এবং ত্বকের কোষ আক্রমণ করে। এদের বিষ এতোই মারাত্মক যে মানুষ পর্যন্ত মৃত্যুমুখে পতিত হতে পারে।

cape-african-buffalo

 

কেপ মহিষ (Cape Buffalo):
তবে কেপ বাফালো নামের যে বুনো মহিষ আফ্রিকার তৃণভূমি প্রান্তরে রাজত্ব করে, সে বোধ সাক্ষাত জমদূত! অমিত শক্তিধর এই প্রাণীটার মতিগতি বোঝা বড় দায়। মানুষের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক এক প্রাণী বলে আখ্যায়িত করেছেন প্রাণীবিদরা। মানুষ হাতিকে পোষ মানাতে পেরেছে। কিন্তু আফ্রিকার এই বিভীষণকে পোষ মানানোর কথা চিন্তাই করতে পারে নি কখনো। এটা দেখতে ব্লাকমাম্বার মতই কালো। এর ওজন ২০০০ পাউন্ডের চাইতেও অধিক হয়ে থাকে। এরা সিংহের মতই আক্রমণাত্মক শিকারী।

siafu14-L

সাইফু পিঁপড়া (Siafu Ants):
এই ধরণের পিঁপড়াকে ড্রাইভার পিঁপড়াও বলা হয়। এরা সবসময় ঝাঁকে ঝাঁকে চলা ফেরা করে। প্রতিটি ঝাঁকে প্রায় ৫০,০০০০০০ পিঁপড়া থাকে। তাদের যদি কেও একাও বিপদে পরে তাহলে সে একাই তার মোকাবেলা করে। প্রাচীন জীবাশ্ম থেকে জানা যায়, ৭ কোটি বছর আগেও পৃথিবীতে এ ধরণের পিঁপড়া ছিল৷ এরা হলো দক্ষিন আমেরিকা ও আফ্রিকায় প্রাপ্ত ড্রাইভার অ্যান্ট যাদের মাংসাশী পিঁপড়া বলেও অভিহিত করা যায়। এদের কয়েক কোটি পিঁপড়া দল বেঁধে বড় যে কোনো বড় প্রাণীকে খেয়ে ফেলে৷

black-mamba-7

ব্ল্যাক মামবা (Black Mamba):
পৃথিবীর দ্রুততম, তেজস্বী ও মারাত্মক বিষধর সাপ হলো ব্ল্যাক মামবা। এরা যখন ভয় পায়, তখন প্রচণ্ড আক্রমণাত্মক হয়ে থাকে।অসংখ্য মানুষের মৃত্যুর জন্য এদের দায়ী করা হয়ে থাকে। আফ্রিকার পুরাণে এদের নিয়ে অনেক অতিরঞ্জিত গল্প রয়েছে। এসকল কারণে ব্ল্যাক মামবাকে পৃথিবীর সবচেয়ে প্রাণঘাতী সাপ হিসেবে বিবেচনা করা হয়। দক্ষিণ ও পূর্ব আফ্রিকার শক্ত ও পাথুড়ে পাহাড়ি অঞ্চলে ব্ল্যাক মামবার বসবাস। এটা আফ্রিকার দীর্ঘতম সাপ, যা লম্বায় গড়ে ৮.২ ফুটেরও (২.৫ মিটার) বেশি হয়ে থাকে। কখনো কখনো ১৪ ফুট (৪.৫ মিটার) দীর্ঘ ব্ল্যাক মামবার দেখাও পাওয়া যায়। ব্ল্যাক মামবা পৃথিবীর সবচেয়ে দ্রুতগতিসম্পন্ন সাপ। এদের গতিবেগ ঘন্টায় ২০ কিলোমিটার বা ১২.৫ মাইল। পৃথিবীর ভয়ঙ্কর প্রাণীদের মধ্যে এর অবস্থান তৃতীয়তে।

D3PMDY

পটকা মাছ (Puffer Fish):
এটি মহাসাগর নিবাসী সবচেয়ে মারাত্মক প্রাণীদের একটি।পটকা মাছ Tetradontiformes বর্গের Tetradontidae গোত্রের বেলুনাকৃতি মাছ। তারা খুব বুদ্ধিমান কিন্তু বেশ বিপজ্জনক। তাদের কাটা বিষ বহন করে তারা যখন কোনো প্রানী দ্বারা আক্রান্ত হয় তখন কাঁটা দিয়ে বিষ ছাড়ে। বীষেড় ফলে অন্য প্রানীর স্বাশ বন্দ হয়ে যায় ও শরীর অসাড় হয়ে যায়। এবং মারা যায়। এর বিষে ইতিমধ্যে অনেক মানুষও মারা গেছে।

3460744-8109292636-Spott

হায়েনা (Hyena):
হায়েনার অবস্থান রয়েছে সপ্তমে। এটি এক ধরনের বন্য মাংশাষী প্রাণী। এশিয়া এবং আফ্রিকা মহাদেশে এদের দেখা যায়। স্তন্যপায়ী শ্রেণীর শ্বাপদ বর্গের (order Carnivora) হায়েনার পরিবার ‘হায়েনিডে-র (Hyaenidae) সদস্যরা দেখতে ক্যানিডে অর্থাৎ কুকুর পরিবারের সদস্যদের (কুকুর, শেয়াল, নেকড়ে) মত হলেও আসলে হল বেজী, নেউল ইত্যাদি সমন্বিত নকুল পরিবারের (হার্পেস্টিডে) নিকটতর। এরা এতোটাই ভয়ংকর প্রাণী যে নিজের ইচ্ছে মতো যাকে খুশি যখন খুশি শিকার করতে পারে। হায়েনা বাঘকেও শিকার করে।

stonefihs2

স্টোনফিস (Stonefish):
স্টোনফিস নামের এই প্রানীকে এই গ্রহের সবচেয়ে বিষধর প্রাণী । এরা সমুদ্রের তলদেশে থাকা নানা রকম পাথরের ভাঁজে নিজেকে নিপুন ভাবে আড়াল করে রাখার ক্ষেত্রে পারদর্শি এবং পাথরের ছদ্মবেশ ধারণ করে সবার চোখকে ফাঁকি দিতে পারে তাই একে অনেকেই আখ্যায়িত করে থাকেন। এই প্রাণীর শরীরে ছড়ানো ছিটানো রয়েছে বিষাক্ত কাঁটা এবং এই বিষাক্ত কাঁটা হাঙ্গর ও অন্যান্য ভয়ংকর প্রাণীর হাত থেকে তাকে রক্ষা করে। এই কাঁটার আঘাতে ভিকটিমের হৃৎপিণ্ডের কার্যক্ষমতা লোপ পায় এবং শরীর দ্রুত নিস্তেজ হয়ে আসে, এমনকি মৃত্যুও হতে পারে।

3662682-3x2-940x627

মানুষ (Humans):
পৃথিবীর সবচাইতে ভয়াবহ প্রাণীর তালিকায় দশ নম্বরে রয়েছে ‘মানুষ’ এর নাম। যদিও মানুষের শরীরে তেমন কোনো বিষাক্ত পদার্থ নেই। কিন্তু তারা সবচাইতে বুদ্ধিমান প্রাণী। তারা নিজেদের বুদ্ধি দিয়ে তৈরি করেছে বোম, গোলা, বারুদ, বন্দুক, মিসাইল, জাহাজ ও উড়োজাহাজ। পৃথিবীর কোনো প্রাণীই মানুষের কাছে নিরাপদ নয়। এমনকি মানুষ মানুষের জন্য নিরাপদ নয়। সাগরের তলদেশ থেকে মহাশূন্য, যেখানে যতো প্রাণী আছে মানুষ সবার জন্য হুমকি স্বরূপ। হিংস্রতার শ্রেণীতে মানুষই প্রথম হওয়া উচিৎ। কিন্তু যেহেতু মানুষের শরীরে কোনো বিষ নেই তাই মানুষকে দশ নম্বরে স্থন দেওয়া হয়েছে। –

সূত্র: কন্সারভেশন ইন্সটিটিউট।



মন্তব্য চালু নেই