পুড়ছে আনুশকার কুশপুতুল; বাড়িতে পাথর মারার অনুরোধ
এর আগেও হয়েছিল এমন কাণ্ড। ইংল্যান্ড সফরে ভারতীয় ক্রিকেটার বিরাট কোহলি ভালে খেলতে না পারায় সব দোষ এসে পড়েছিল তার প্রেমিকা আনুশকা শর্মার ঘাড়ে।এবারের বিশ্বকাপের সেমি ফাইনালে অস্ট্রেলিয়ার কাছে ভারত হেরে যাওয়ায় এবং বিরাট কোহলি এক রান করে আউট হয়ে যাওয়ায় ভারতীয়রা আরও একবার চড়াও হয়েছেন হিন্দি সিনেমার এই অভিনেত্রীর ওপর।
অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে দ্বিতীয় সেমিফাইনালে খেলতে নেমে জয়ের জন্য ভারতের দরকার ছিল ৩২৯ রান। ওপেনিং ব্যাটসম্যান শিখর ধাওয়ান আউট হয়ে যাওয়ার পর ক্রিজে নামেন বিরাট কোহলি। কিন্তু তের বলে এক রান করার পর তিনিও আউট হয়ে যান মিচেল জনসনের বলে। ওইসময় গ্যালারিতে বসে খেলা দেখছিলেন আনুশকা শর্মা। ভারত পরে ম্যাচটি হেরে যায় ৯৫ রানের বিশাল ব্যাবধানে।
গোয়ালিয়রে ক্ষুব্ধ ভক্তরা পুড়িয়েছে আনুশকার কুশপুতুল। ভারতীয় দৈনিক ডেকান ক্রনিক্রলস বলছে, কংগ্রেস এবং ন্যাশনাল স্টুডেন্ট ইউনিয়ন অফ ইন্ডিয়ার স্থানীয় সদস্যরা এই ঘটনা ঘটিয়েছেন। তাদের সবার অভিযোগ, সেমি ফাইনাল ম্যাচটি আনুশকা অস্ট্রেলিয়ায় দেখতে যাওয়াতেই খারাপ খেলেছেন বিরাট কোহলি।
মাইক্রোব্লগিং সাইট টুইটারে এর মধ্যেই আনুশকাকে নিয়ে তৈরি হয়েছে নানা রকম ব্যাঙ্গাত্মক মেম এবং ট্রল। শুধু তাই নয়, ভারতীয় ক্রিকেটভক্তরা একের পর এক তীর্যক মন্তব্য করেই যাচ্ছেন আনুশকাকে লক্ষ্য করে। খোদ বিনোদন জগতের বাসিন্দা কামাল আর খান টুইট করেছেন, “আমি সবাইকে অনুরোধ করছি আনুশকা শর্মার বাড়িতে গিয়ে পাথর ছুঁড়তে। কারণ, আনুশকাই ভারতের হারার প্রধাণ কারণ।”
একজন সমর্থক লিখেছেন, “আনুশকাকে খুব একটা দোষ দিচ্ছি না। কিন্ত কঠিন এক ম্যাচে স্ট্যান্ডে থেকে ভালোবাসার মানুষটির ওপর চাপ বাড়ানো কোনো ভাল সিদ্ধান্ত না।”
কৃপা শর্মা নামের একজন লিখেছেন, “আমি জানতাম সিডনিতে আনুশকা শর্মা গেলেই খারাপ কিছু হবে!”
গিজা নামের একজন লিখেছেন, “আনুশকা শর্মা তার জীবনের সবচেয়ে বড় ভুলটা করেছেন সিডনিতে গিয়ে। এখন গোটা দেশ তাকে কখনও ক্ষমা করবে না।”
নিদা ফাতিমা নামের একজনের টুইট, “আনুশকা মুম্বাই থেকে সিডনি উড়ে এলো ভিরাটের এক রানে আউট হওয়া দেখার জন্য। কেন এসেছিলে এখানে, নির্বোধ কোথাকার?”
আনুশকাকে এভাবে আক্রমণের লক্ষবস্তুতে পরিনত করাটা অবশ্য একদমই মানতে পারছেন না মুম্বাইয়ের সিনে পাড়ার মানুষেরা। প্রিয়াঙ্কা চোপড়া, বিপাশা বসু, মাধুর ভান্ডারকারদের মতো তারকারা টুইটারেই সরব হয়েছেন এর বিরূদ্ধে।
প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার টুইট, “একজন সহানুভূতিশীল প্রেমিকাকে কেবল একটা ম্যাচ দেখার জন্য এভাবে আক্রমনের শিকার হতে দেখতে খুবই খারাপ লাগছে। এই অশ্রদ্ধা বন্ধ করুন।”
বিপাশা বসুর টুইট, “গোটা দেশ ক্রিকেটারকে সমর্থন করতে পারে। আর তার প্রেমিকা পারে না? সত্যি?”
মাধুর ভান্ডারকারের টুইট, “যে বিষ নিয়ে ম্যাচের পর সবাই আনুশকাকে আক্রমণের লক্ষবস্তুতে পরিণত করেছে, সেটা কেবল হতাশাজনকই নয়, জঘন্যও। দয়া করে নিজের চরকায় তেল দিন।”
এর আগে গণমাধ্যমে দেওয়া বিভিন্ন সাক্ষাৎকারে বিরাটের খারাপ খেলার জন্য ভারতীয়দের তাকে দায়ি করার মনোভাব নিয়ে আনুশকা বলেছিলেন, এসবে কেবল এটাই প্রমাণিত হয় যে ক্রিকেটারদের সামর্থের ব্যাপারে সমর্থকদের আস্থা কম।
“কেন কোনো একজন ক্রিকেটারের অমনযোগের কারণ হবেন? কারণ ওই মানুষটির সঙ্গে তার দৈহিক সম্পর্ক রয়েছে? আমি এই ধরনের মনোভাব একেবারেই মান্ধাতা আমলের মনে করি। এমনকি এই ধরনের শব্দ উচ্চারণও রূচিহীনতার পরিচয় বলে মনে করি।”
“এবং এসব করে আপনারা আসলে যে মানুসগুলো সেই ছোটবেলা থেকে ক্রিকেট খেলে আসছে, তাদের সামর্থ নিয়েই প্রশ্ন তুলছেন। তাদের সঙ্গে যদি আপনার কখনও দেখা হয়, তাহলে বুঝবেন, তারা ক্রিকেট ছাড়া কিছুই বোঝে না। তারা ক্রিকেটেই খায়, ক্রিকেটেই শ্বাস নেয়, ক্রিকেট নিয়ে বাঁচে-মরে। সুতরাং, আপনি বলার চেষ্টা করছেন, তারা নিজেদের ক্যারিয়ার নিজেরা সামলাতে পারে না? তারা যা অর্জন করেছে, সে জন্য তাদের প্রাপ্য সম্মান দিন।”
মন্তব্য চালু নেই