পুরুষের কান্না কেউ শুনেনা! বিয়ের ৩বছরে স্ত্রীর সঙ্গে একবারও হয়নি মিলন, কিন্তু জেল হলো ৭৭ দিন!
নারী নির্যাতন ও যৌতুক মামলায় হয়রানির শিকার হওয়া একজন নারায়ণগঞ্জ জেলার ভূইগড়ের শেখ খায়রুল আলম। একদিনের জন্যও ঘরে বউ তুলতে না পারলেও সেই বউয়ের করা মামলায় হাজতে থাকতে হয়েছে ৭৭ দিন। খায়রুল আলমের দাবি, কোন প্রকার দোষ না করেও থাকতে হয়েছে হাজতে। মামলার সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ার পরও এখন পর্যন্ত ঝুলে আছে ২০১৪ সালের মামলা। প্রতি ২-৩ মাস পর পর দিতে হয় হাজিরা।
খায়রুল আলম জানান, ২০১৩ সালের ১৮ অক্টোবর একই এলাকার মেয়ে রিমিকে (ছদ্ধনাম) এক লক্ষ টাকা মোহরানায় কাবিন করে পারিবারিকভাবে বিয়ে করেন খায়রুল। মেয়ের বাবার ইচ্ছায় বিয়ে হয় ঢাকার মানিকনগরে। কথা ছিলো মেয়ের বাবা দুইমাস পর মেয়েকে তুলে দিবেন। কিন্তু এরই মধ্যে খায়রুল জানতে পারে তার বউয়ের অন্যের সাথে পরকীয়ার সম্পর্ক রয়েছে। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করলে ২০১৪ সালে নারায়ণগঞ্জ কোর্টে খায়রুলের বিরুদ্ধে করা হয় যৌতুকের মামলা। তবে তদন্তে মামলার সত্যতা প্রমাণ পায়নি সিনিয়র সহকারী জজ হুমায়রা তাসনিম।
পরে তার বিরুদ্ধে করা হয় নারী নির্যাতন মামলা। এই মামলায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ২০১৬ সালের মার্চ মাসে গ্রেপ্তার হন তিনি। ৭৭ দিন পর তাকে জামিনে মুক্তি দেয় নারায়ণগঞ্জ জেলা জজ কোর্ট। তবে এখন পর্যন্ত মামলা থেকে অব্যাহতি পাননি খায়রুল। সর্বশেষ ফেব্রুয়ারি মাসে এ মামলায় হাজিরা দিয়েছেন তিনি। এছাড়া চলতি মাসের নয় তারিখ ছিলো নারী নির্যাতন মামলার শুনানি।
খায়রুল আলম আক্ষেপ করে বলেন, ’মেয়েরা যা বলে আদালত তাই বিশ্বাস করে। বাদীপক্ষ সাক্ষী হাজির করতে না পারায় ২০১৪ সালের মামলা এখন পর্যন্ত ঝুলে আছে। তারা সাক্ষী হাজির করার জন্য শুধু সময় চায়, আর মেয়ে বলে আদালতও তাদের সময় দেয়।’ ৭৭ দিন কারাবাস ও আজ পর্যন্ত মামলা ঝুলে থাকায় শেষ হয়ে গেছে খায়রুলের ব্যবসা বাণিজ্যসহ আয়ের সকল উৎস। মামলার পেছনে দৌড়ে শেষ করেছেন যৌবনও। মানুষের যাতে জীবন যৌবন নষ্ট না হয় তাই সরকারের কাছে এ ধরনের মামলা দ্রুত শেষ করার দাবি জানান খায়রুল।
নারী নির্যাতন মামলা হলেই আসামিকে জেলে পাঠানোর বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে খায়রুল বলেন, ’ নারী নির্যাতন মামলা হলেই আগে জেলে। আগে মামলার তদন্ত হোক, তারপর শাস্তি হোক। কিন্তু নারী নির্যাতন মামলা হলেই আগে হাজত, তারপর তদন্ত।”
হয়রানি বন্ধে স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের ভূমিকার কথা জানতে চাইলে খায়রুল জানান, বিষয়টি মিমাংসা করার জন্য স্থানীয় মেম্বর ও চেয়ারম্যান কয়েকবার মেয়েপক্ষকে ডেকেছেন, কিন্তু তারা আসেনি। পরে খায়রুলের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করায় স্থানীয়দের কাছে ঘৃনীত মেয়ের পরিবার ঢাকায় চলে আসে। পূর্বে ব্যবহৃত মোবাইল নাম্বার ও বাসা পরিবর্তন করায় মেয়ের পরিবারের সাথে যোগাযোগ করা যায়নি। শুধুমাত্র মামলার শুনানির সময়ে আদালতে আসে তারা।
৭৭ দিন কারাবাসের পর খায়রুল উপলব্ধি করেন দেশের বহু পুরুষ মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলার শিকার হচ্ছে। এই অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে অনুভব করেন সমন্বিতভাবে সোচ্চার হওয়ার প্রয়োজনীয়তা। তাই আর কোন পুরুষকে যেন তার মতো হয়রানির শিকার হতে না হয় তাই “পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ আইন” বাস্তবায়নের লক্ষে রাস্তায় নেমেছেন খায়রুল। নিজ বাসায় প্রধান কার্যালয় করে গঠন করেছেন “পুরুষ নির্যাতন প্রতিরোধ আন্দোলন বাংলাদেশ (পুনিপ্রআবিডি)” নামের একটি সংগঠন। প্রথম দিকে একা আন্দোলন চালিয়ে আসলেও বর্তমানে তার সাথে যুক্ত হয়েছেন আরো অনেক নির্যাতিত পুরুষ। ইতিমধ্যে ১৫টি জেলায় ’পুনিপ্রআবিডি’র কমিটিও গঠন করা হয়েছে।
মন্তব্য চালু নেই