পিৎজা-বয় থেকে হলিউডে বাজিমাত এই অভিনেতার

মনে হয় যেন হলিউডের কোনো ছায়াছবি। সিরিয়ার তারকা অভিনেতা ছিলেন তিনি। সহিংসতার কারণে দেশ ছেড়ে গেলেন যুক্তরাষ্ট্রে। হলেন পিৎজা সরবরাহকারী। এরপর আবার হলিউডে অভিনয়। কল্পলোকের গল্প মনে হলেও জে আবদোর বেলায় তা-ই ঘটেছে।
এএফপির প্রতিবেদনে জানানো হয়, আরব বিশ্বের অন্যতম তারকা অভিনেতা ছিলেন জে আবদো। ৪৩টি চলচ্চিত্র ও এক হাজারের বেশি টিভি শোতে অভিনয় করেছেন। সিরিয়ায় আবদো বেশি পরিচিত জিহাদ নামে। এটি তাঁর নামের প্রথম অংশ। পরে সেটিই হয়ে গেছে জে। ঐতিহাসিক টিভি সোপ অপেরা ‘বাব আল-হারা’য় (দ্য নেইবারহুড গেট) অভিনয় করে তিনি সুনাম কুড়ান। এই ধারাবাহিকের দর্শক ছিল পাঁচ কোটি। আবদোর স্বপ্ন ছিল হলিউডে অভিনয় করা। ২০১১ সালে আরব বসন্তের সময় সিরিয়ায় সহিংসতা বাড়ে। সে সময়ে স্বপ্নভঙ্গ হয় তাঁর।
জে আবদোর স্ত্রী ফরিদা আফাসে ছিলেন সিরিয়ার সংস্কৃতি বিভাগের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা। তিনি ছিলেন চিত্রকর ও মানবাধিকারকর্মী। প্রেসিডেন্ট বাশার আল-আসাদের দুঃশাসন থেকে বাঁচতে তিনি দেশ ছেড়ে পালান। ফ্রান্স সফরকালে বিরোধীপক্ষের সঙ্গে বৈঠক করার অভিযোগ ছিল তাঁর বিরুদ্ধে। তিনি যুক্তরাষ্ট্রে মিনেসোটা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক পলিসি নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেন।
আবদোর ওপরও আসাদ সরকার অসন্তুষ্ট ছিল। কারণ, আসাদের সমর্থনে আয়োজিত বিভিন্ন র্যালি ও টিভি টক শোর আমন্ত্রণ তিনি প্রত্যাখ্যান করেন।
লেবাননের বৈরুত সফরকালে লস অ্যাঞ্জেলেস টাইমসে দেওয়া জে আবদোর সাক্ষাৎকারের পর আসাদ সরকার আরও বেশি রুষ্ট হয়। ওই সাক্ষাৎকারে আবদো সিরিয়ার গোপন সংস্থার নির্যাতন ও দুর্নীতির খবর ফাঁস করে দেন। সাক্ষাৎকার শেষে সিরিয়ায় ফেরার পর আবদোকে হুমকি দেওয়া হয়। তাঁর গাড়ির কাচ ভেঙে চুরমার করে দেওয়া হয়। বাশার আল-আসাদের কাছে ক্ষমা চাওয়ার জন্য চাপ আসতে থাকে।
নানা চাপের মুখে সিরিয়ায় নিজের সম্পত্তি ফেলে আবদো মিনেসোটায় চলে যান তাঁর স্ত্রীর কাছে। আবদো দম্পতি যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় প্রার্থনা করেন। কাজের খোঁজে তাঁরা লস অ্যাঞ্জেলেসে চলে যান। প্রথম দিকে খুবই কষ্টে জীবনধারণ করতে হয় তাঁদের। এমনও হয়েছে যে মাত্র তিন ডলারে এক দিনের খরচ মেটাতে হয়েছে।
এক বছরেরও বেশি সময় খোঁজাখুঁজির পর কাজ পান জে। তিনি ডমিনিকস পিৎজার দোকানে পিৎজা সরবরাহ করার কাজ পান। ছোটখাটো কাজ করেই জীবন চালাতে হচ্ছিল আবদোকে। স্বল্প ভাড়ার বাড়িতে থাকেন, অল্প বেতনে টেনেটুনে সংসার চালান। ফরমাশমতো পিৎজা বাড়িতে বাড়িতে পৌঁছে দেন।
ছকে বাঁধা এই জীবনে হঠাৎ পরিবর্তন আসে। ‘কুইন অব দ্য ডেজার্ট’ ছবিতে নিকোল কিডম্যানের সঙ্গে অভিনয় করার সুযোগ পান আবদো। তিনি বলেন, ওই চলচ্চিত্রে তাঁর সব দৃশ্য ছিল নিকোলের সঙ্গে। তিনি খুবই মিষ্টি, যথেষ্ট পেশাদারি মনোভারের। খুবই সহৃদয়, চটপটে আর তীক্ষ্ণধী। প্রথম দৃশ্য থেকেই তিনি সাহায্য করেছেন আবদোকে।
‘কুইন অব দ্য ডেজার্ট’ চলচ্চিত্রের পরিচালক ওয়ার্নার হারজগ ওয়াল স্ট্রিট জার্নালের সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে আবদোর কথা বলেন। তিনি বলেন, মরক্কো সফরে গিয়ে তিনি জে আবদোর জনপ্রিয়তা সম্পর্কে ধারণা পান। এরপর তাঁর খোঁজ করে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সুযোগ দেন।
আমাজন টেলিভিশন সিরিজ ‘দ্য প্যাট্রিয়ট’-এও অভিনয় করেছেন জে আবদো। ‘বন ভয়েজ’ নামের স্বল্পদৈর্ঘ্যের ছবিতে তিনি অভিনয় করেছেন। গত বছর অভিনয় করেছেন ‘আ হলোগ্রাম ফর দ্য কিং’ চলচ্চিত্রে। আবদো বলেন, হলিউডে অভিনয় করবেন কখনো ভাবেননি। নিয়তিই তাঁকে এখানে নিয়ে এসেছে। -প্রথম আলো।
মন্তব্য চালু নেই