পিন্টুর জেলজীবন

২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বিদ্রোহে ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ কয়েকশ জোয়ান নিহত হয়। অভিযোগ ওঠে, বিএনপি নেতা নাসির উদ্দীন পিন্টু ও আওয়ামী লীগ নেতা তোরাব আলীর যোগসূত্র রয়েছে এই বিদ্রোহে। এই অভিযোগে একই বছরের পহেলা জুন তোরাব আলী ও নাসির উদ্দীন পিন্টু গ্রেফতার হন। ২ জুন আদালতের মাধ্যমে পিন্টু বিডিআর বিদ্রোহের মামলায় কারাগারে যান।

দীর্ঘ দিন ধরে মামলা চলার পর ২০১৩ সালের ৫ নভেম্বর পিলখানা হত্যা মামলায় বিএনপি নেতা ও প্রাক্তন সাংসদ নাসির উদ্দীন আহমেদ পিন্টু ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতা তোরাব আলীসহ ১৬১ জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়।

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারে পিন্টুর কারাজীবন সম্পর্কে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন ডেপুটি জেলার বলেন, ‘পিলখানা হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজার রায়ের পর অনেকটাই নিশ্চুপ হয়ে যান পিন্টু। প্রায় সময়ই কী নিয়ে যেন তাকে ভাবতে দেখা যেত। তবে কখনো কখনো তার মধ্যে বিক্ষুব্ধ আচরণ লক্ষ্য করা যেত। রোজার মাসে নিয়মিত রোজা ও নামাজ আদায়সহ কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে অধিকাংশ সময় পার করতে দেখা গেছে তাকে।’

দীর্ঘদিন কারাবাসের কারণে আচার-আচরণে অনেকটা নরম ভাব লক্ষ্য করা গেলেও মাঝে মধ্যে তার চোটপাটে অতিষ্ঠ হতে হয়েছে কারারক্ষীদের। একদিন এক কারারক্ষীর সঙ্গে দুর্ব্যবহারের কারণে ওই কারারক্ষীকেই অন্যত্র বদলি করে দেওয়া হয়। ওই ঘটনার পর প্রিজন সেলে বেশ কড়াকড়ি আরোপও করা হয়।

ডেপুটি জেলার জানান, মঈনুদ্দিন-ফখরুদ্দিন সরকারের আমলে একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে প্রিজন সেলে নাসির উদ্দীন পিন্টুর দিগম্বর হওয়ার ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে সারা দেশে ব্যাপক তোলপাড় হয়। সামরিক বাহিনী সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে প্রিজন সেলে বন্দি থাকা অবস্থায় নাসির উদ্দিন পিন্টু গোপনে মোবাইল ফোন ব্যবহার করেছেন জানতে পেরে কারারক্ষীরা তার কাছে মোবাইলের খোঁজ করতে গেলে ক্ষুব্ধ হয়ে তিনি সবার সামনে দিগম্বর হয়ে বলেন, ‘দেখ কোথায় আছে মোবাইল, খুঁজে নে।’

শরীরে নানা রোগশোক বাসা বাধায় পিন্টুকে দীর্ঘদিন বঙ্গবন্ধু প্রিজন সেলে থাকতে হয়। চলতে হয় ডাক্তারদের পরামর্শ মতো। খাবারের তালিকায় ভাত, মাছ, সবজি, ডাল, গোশত, ডিম থাকত। রোজার সময় ছোলা, পেয়াজু, খেজুর ও মুড়ি দিয়ে ইফতার করেন। এ ছাড়া ডাক্তারদের পরামর্শে সেহেরি ও ইফতারের পর তাকে ওষুধ খেতে হয়।

এ ব্যাপারে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ডা. জামাল উদ্দিন খলিফা বলেন, ‘পিন্টু যখন প্রিজন সেলে বন্দি ছিলেন, তখন তাকে ডাক্তারদের পরামর্শক্রমে চলতে হয়েছে। অফিসিয়াল কাজ-কর্মে ব্যস্ত থাকায় প্রিজন সেলে বন্দিদের ব্যাপারে তেমন কোনো খোঁজ খবর রাখার সুযোগ পাওয়া যায়নি।’

ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার ফরমান আলী জানান, আদালতের রায়ের পর ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে নারায়নগঞ্জ কারাগারে প্রেরণ করা হয়। এরপর সেখান থেকে কাশিমপুর কারাগারে প্রেরণ করা হয়। পিন্টুকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগার থেকে রাজশাহী সেন্ট্রাল কারাগারে প্রেরণ করা হয়।

রাজশাহী কারাগারের ডেপুটি জেলার মিজানুর রহমান জানান, নাসির উদ্দিন পিন্টু দীর্ঘদিন ধরে বিভিন্ন রোগে ভুগছিলেন। এর মধ্যে বুকে ব্যাথা, হার্টের রোগসহ নানা রোগে রাজশাহী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। কয়েকদিন আগে হাসপাতাল থেকে কারাগারে নেওয়া হয়। রোববার ভোর দিকে তার বুকে ব্যথা অনুভূত হলে সকাল ১০টার দিকে আবারো হাসপাতালে নেওয়া হয়। এরপর বেলা সোয়া ১২টার দিকে কর্তব্যরত চিকিৎসক পিন্টুকে মৃত ঘোষণা করেন।

পিন্টু কারাগারে থাকলেও বিএনপির আন্দোলন সংগ্রামে তার কর্মীরা ব্যানার-ফেস্টুন হাতে মিছিল-মিটিংয়ে অংশগ্রহণ করেছে। ওইসব আন্দোলন সংগ্রামে পিন্টুর মুক্তিও দাবি করা হয়। সমাবেশ কিংবা মিছিল যেকোনোটাতেই পিন্টুর সমর্থকদের একটা বড় অংশ দেখা গেছে।

সবশেষ পিন্টু সদ্য শেষ হওয়া সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রার্থিতা দাখিল করে। কিন্তু নির্বাচন কমিশন তার প্রার্থিতা বাতিল করে।



মন্তব্য চালু নেই