বিলুপ্তি প্রায় দেশি মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতি
পানি না থাকায় ধরলা ও সানিয়াজান নদীর বুকে ধান চাষ নদীর অস্তিত্ব বাঁচিয়ে রাখা হুমকি
পাটগ্রাম উপজেলার ধরলা ও সানিয়াজান নদীর তীরে বসবাসকারী প্রায় ২০ হাজার চাষী বোরো ধান, ভুট্টা ও তামাকসহ বিভিন্ন ফসল চাষ করা হয়েছে। এসব ক্ষেতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারে নদী দু’টিতে মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির বংশবিস্তার, উৎপাদনমগ প্রাকৃতিক পরিবেশের উপর বিরুপ প্রভাব মারাত্মকভাবে পড়তে শুরু করেছে। স্বাভাবিক পানিপ্রবাহ না থাকায় নদী দু’টিও বেঁচে থাকা হুমকির মধ্যে রয়েছে।
সরেজমিনে দেখা যায়, ভারতের চ্যাংরাবান্ধা-পানিশালা সীমান্ত পথে ধরলা নদী পাটগ্রাম উপজেলার শ্রীরামপুর-বুড়িমারী সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছে। অপরদিকে মেখলিগঞ্জ সীমান্ত পথে সানিয়াজান নদী পাটগ্রাম উপজেলার বামনদল সীমান্ত দিয়ে প্রবেশ করেছে। এক সময়ের খরস্রোত এ দুই নদী পানি শূন্যতায় এখন মরা খালে পরিণত হয়েছে। এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে নদীর তীরে বসবাসকারী স্থানীয় চাষীরা বোরো ধান, ভুট্টা ও তামাক চাষ করেছেন। ফলে নদীর স্রোতধারা কোথাও ৩ ফিট, কোথাও ৬ ফিট পর্যন্ত মানুষসৃষ্ট ক্যানেল দিয়ে পানিপ্রবাহ রয়েছে। একদিকে নদীরবুকে ফসল চাষ উপকারে আসলেও অন্যদিকে মাছসহ জীববৈচিত্রের মারাত্মক ক্ষতিসাধিত হচ্ছে। গত কয়েক বছর ধরে ধরলা ও সানিয়াজান নদীর বুকে ফসল চাষ করে এ ধ্বংসলীলা চালানো হচ্ছে। এসব যেন দেখার কেউ নেই। নদী সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতা এবং এক শ্রেণির মানুষরুপি দানবের কারণে প্রতিবছর নদী দু’টি বর্ষার পর থেকেই পানি শূন্যতায় ভুগতে শুরু করে। ফসল চাষের কারণে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহারে নদী দু’টিতে মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতির প্রাণি বংশবিস্তার না হওয়ায় তা হারিয়ে যাচ্ছে। প্রাকৃতিক পরিবেশের উপরও মারাত্মকভাবে বিরুপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ফলে নদী দু’টি বেঁচে থাকা এখন হুমকির মধ্যে রয়েছে।
‘তিস্তাপুত্র’ নামক গবেষণাধর্মী সংগঠনের সাধারন সম্পাদক সবুজ খন্দকার বলেন, ‘নদীগুলোর উৎসমুখ ভারতে। যে পরিমাণ স্রোতধারার পানি ভাটিতে থাকার কথা অথচ তা নেই। ফলে পানিপ্রবাহ না থাকার সুযোগ কাজে লাগাচ্ছে চাষীরা। এতে কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার করে মাছসহ বিভিন্ন প্রজাতি প্রাণির মারাত্মকভাবে ক্ষতিসাধন করছে। সরকারের উচিত নদী দু’টি খনন করে নাব্যতা ফিরিয়ে আনা।’
ধরলা নদীতে ধানচাষী জবেদ আলী ও আফছার মিয়া রাসায়নিক সার ও কীটনাশক ব্যবহারের সত্যতা নিশ্চিত করে জানান, ‘নদীতে পানি নেই। তাই গোটা নদীর বুকে ফসল চাষ করা হয়েছে।’
পাটগ্রাম উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা নুর আলম জানান, ‘বিষয়টি বিস্তারিত আমার জানা নেই। খোঁজখবর নিয়ে দেখা হবে।’
পাটগ্রাম উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা(ডিএফও) তারিফুর রহমান জানান, ‘কীটনাশক ও রাসায়নিক সার ব্যবহার হচ্ছে কি না বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে।’
পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান রুহুল আমীন বাবুল সানিয়াজান ও ধরলা নদীতে পানি নেই নিশ্চিত করে বলেন, নাব্যতা হারানোর কারণে মাছসহ জীববৈচিত্র বিলুপ্ত হতে বসেছে। নদী দু’টি খনন করার জন্য পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।’
পানি উন্নয়ন বোর্ডের লালমনিরহাট সার্কেলের নির্বাহী প্রকৌশলী শিবেন্দু খাস্তগীর সমকালকে বলেন, ‘নদী খনন কার্যক্রম পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঢাকায় আলাদ সেল রয়েছে। ওই সেল খনন কাজ প্রকল্প গ্রহন ও বায়স্তবায়ন করে থাকে। এ ধরনের কোন প্রস্তাব বা প্রকল্প আমরা করি না।’
মন্তব্য চালু নেই