পানযোগ্য বই, বিশুদ্ধ পানির সন্ধানে
কথায় আছে, পানির অপর নাম জীবন। কিন্তু সেই পানি যদি দূষিত হয় তাহলে কিন্তু আর পানির অপর নাম জীবন থাকছে না, উল্টো হয়ে যাচ্ছে মরণ। প্রতিদিন বিশ্বে পানিবাহিত রোগে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক মানুষ মারা যাচ্ছে। পানবাহিত রোগের প্রার্দুভাব সবচেয়ে বেশি বিশ্বের উন্নয়নশীল দেশগুলোতে। একটা সময় ছির পানিবাহিত রোগের কারণে গ্রামকে গ্রাম উজার হয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটতো। কিন্তু গবেষকদের বিভিন্ন কর্মতৎপরতার কারণে বর্তমানে আগের তুলনায় রোগির সংখ্যা কিছুটা কমেছে।
সম্প্রতি বিশেষজ্ঞরা ‘ড্রিঙ্কেবল বুক’ নামে একটি বই বের করেছে। এই বইয়ের পাতাগুলোতে রয়েছে সিলভার অথবা কপারের ন্যানোপার্টিকেল, যা ব্যাকটেরিয়াকে হত্যা করতে সাহায্য করে। তবে তখনই এটা সম্ভব হবে যখন এই বইয়ের পাতাকে পানি ছাঁকার কাজে ব্যবহার করা হবে। দক্ষিণ আফ্রিকা, ঘানা এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন পানির আধার থেকে পানি নিয়ে এই বইটির পরীক্ষা করা হয়েছিল। পরীক্ষায় দেখা যায়, দূষিত পানির ৯৯ ভাগ ব্যাকটেরিয়াই ধ্বংস করতে পারে ওই বইয়ের পৃষ্ঠা।
কিছুদিন আগেই যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে আমেরিকান কেমিক্যাল সোসাইটি আয়োজিত ২৫০তম জাতীয় সম্মেলনে গবেষকরা এই বইটিকে তুলে ধরেন। ড. টেরি দানোকোভিচ নামে একজন গবেষকদের নেতৃত্বে টানা কয়েক বছরের পরিশ্রমের ফলে এই বইটি তৈরি করা হয়েছে। আর এই কাজে সহায়তা করেছে কানাডার ম্যাকগিল বিশ্ববিদ্যালয় ও ভার্জিনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়।
গবেষক দলের প্রধান দানোকোভিচ বইটি সম্পর্কে জানান, ‘উন্নয়নশীল দেশগুলোর কথা মাথায় রেখেই এটা তৈরি করা হয়েছে। কারণ বিশ্বের ৬৬৩ মিলিয়ন মানুষ আজও পরিচ্ছন্ন পরিষ্কার পানি পান করার সুযোগ পায় না। আপনাকে যা করতে হবে তা হলো, বই থেকে একটি পৃষ্ঠা ছিড়তে হবে এবং পাতাটিকে পানি ঢালার চোঙে রাখতে হবে। এরপর যেকোনো উৎস থেকেই পানি ঢালা যেতে পারে। কিছুক্ষণ পানি ঢালার পরেই পাতাটির উপর ব্যাকটেরিয়ার আস্তরণ দেখতে পাওয়া যাবে।’
পরীক্ষা ফল অনুযায়ী বইটির প্রতি পাতা দিয়ে অন্তত একশ লিটার পানি বিশুদ্ধ করা যাবে। অর্থাৎ একটি বই দিয়ে চারজনের একটি পরিবার নির্দিধায় চার বছর পার করে দিতে পারবে। তবে কবে নাগাদ এই বইটি বিশ্ব বাজারে পাওয়া যাবে সেব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। তবে দানোকোভিচ ও তার দলের আশা যে, তাদের তৈরি করা এই পানি বিশুদ্ধিকরণ বই বিশ্বের অগুনতি মানুষের উপকার করবে।
মন্তব্য চালু নেই