পাঠ্যবই বিক্রি করা ওই শিক্ষককে প্রত্যাহার !

কুড়িগ্রামের রাজীবপুরে সরকারের বিনামূল্যের পাঠ্যবই কেজি দরে বিক্রি করার ঘটনায় অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষক শহীদুর রহমানকে প্রত্যাহার করা হয়েছে স্কুল থেকে। গত বৃহষ্পতিবার অভিযুক্ত শিক্ষককে উপজেলার এতিমখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে প্রত্যাহার করে একই উপজেলার দুর্গম ব্রহ্মপুত্র নদ বিচ্ছিন্ন শিকারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বদলি করা হয়েছে। বিক্ষুদ্ধ স্কুলের শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসি ওই শিক্ষককে বরাখাস্তের দাবিতে অভিযোগ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছিল। অভিযুক্ত শিক্ষককে প্রত্যাহার করায় এলাকার পরিস্থিতিও শান্ত হয়েছ।

উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা রফিকুল ইসলাম জানান, অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে সরকারি প্রাঠ্যবই বাজারে বিক্রি ও শিক্ষার্থীদের উপবৃত্তির টাকা আত্মসাতের প্রমাণ পাওয়া গেছে। এর ফলে তাকে ভর্ৎসানা করে আত্মপক্ষ সমর্থনের সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এরপর যদি তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ওঠে তাহলে বিভাগীয় শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে ১৩ ফেব্রুয়ারি ওই শিক্ষক সরকারের বিনামূল্যের পাঠ্যবই কেজি দরে বিক্রি করার পর জনতার হাতে তা ধরাপড়ে। এসংক্রান্ত সংবাদ দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকায় প্রকাশিত হলে কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে তার বিরুদ্ধে উপরোক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে।

রাজীবপুর উপজেলার এতিমখানা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত ওই প্রধান শিক্ষক শহীদুর রহমাননের বিরুদ্ধে এর আগেও অসংখ্য অনিয়ম দুর্নীতি ও শিশুদের নির্যাতনের অভিযোগ করেছিল অভিভাবক ও শিক্ষার্থীরা।

অভিযোগ সমূহ
২০১৪ সালের ৯ জুলাইঃ স্কুলের দৈনিক সমাবেস চলাকালে বিনা কারনে ২য় শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাদিয়া খাতুন ও আয়শা খাতুনকে বেধরক মারপিট করে মারত্মক ভাবে আহত করে ওই প্রধান শিক্ষক। এসময় শিশু দুটি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে সঙ্গে সঙ্গে তাদেরকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বিনা কারনে শিশুদের বেত্রাঘাত করার অভিযোগ প্রমানিত হওয়ায় পর ওই সর্তক করাসহ ও ৭দিনের জন্য পাঠদান থেকে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়।

২০১৩ সালের ২০ জানুয়ারীঃ ভুয়া শিক্ষার্থী দেখিয়ে উপবৃত্তির টাকা আত্মসাৎ এবং শিক্ষার্থীদের পাওনা উপবৃত্তির টাকা থেকে জনপ্রতি ৫০ টাকা করে কেটে রাখার ঘটনায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর লিখিত অভিযোগ করা হয়। অভিযোগ করার কারনে দুই বোন ৩য় শ্রেনীর আছমা খাতুন (ক্লাশ রোল-৩) ও ৪র্থ শ্রেনীর আফরোজা খাতুন (ক্লাশ রোল-১৫) কে বাধ্যতামূল স্কুল থেকে বহিস্কার করে নজির বিহীন ঘটনার জন্ম দেন ওই প্রধান শিক্ষক। বহিস্কৃত দুই বোনের দিনমজুর পিতা উপজেলার দক্ষিন মরিচাকান্দি গ্রামের আবু তালেব। কিন্তু তাদের বাবা তাদের এবং তার মা’কে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করে ঘর সংসার করে। এর ফলে ওই দুই বোনের আর লেখাপড়া করা হয়নি।

২০১২ সালের ২ ফেব্রুয়ারিঃ পাঠ্য বইয়ের মলাট না থাকার অপরাধে রাশেদুল ইসলাম নামের ৩য় শ্রেনীর এক ছাত্রকে অমানবিক নির্যাতন করা হয়। এতে ওই ছাত্রকে বেঞ্চের নিচে মাথা ঢুকিয়ে পিটে কিল ঘুষি ও চাবি দিয়ে আঘাত করার মতো অমানবিক ঘটনার জন্ম দেয় ওই শিক্ষক। তাৎক্ষনিক ভাবে ছাত্রটি জ্ঞান হারিয়ে ফেললে মাথায় পানি ঢেলে তাকে সুস্থ্য করা হয়। এসময় তাকে হাসপাতালে না নিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেওয়া হয়। নির্যাতনের শিকার রাশেদুল ইসলাম এর পিতা সাখোয়াত হোসেনও ছিলেন একজন দিনমজুর। ফলে কোনো বিচার পাননি পরিবারটি।

২০১১ সালের ১০ মার্চঃ বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচীর (ওয়ার্ল্ড ফুড প্রোগ্রাম) আওতায় বিনা মূল্যে দেওয়া বিস্কুটের কার্টন উপজেলা শিক্ষা অফিস থেকে শিশুদের দিয়ে বহনে বাধ্য করানো হয়। পরিবহন ছাড়া শিশুদের দ্বারা প্রায় ৫কিলোমিটার দূরে স্কুলে বিস্কুটের কার্টন বহন করা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়। অভিযোগ উঠেছিল যেসব শিশু বিস্কুটের কার্টুন বহন করেনি তাদের বিস্কুটও দেওয়া হয়নি। এ ব্যাপারে অভিভাবকরা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বরাবর অভিযোগ করলে ক্ষমা প্রার্থনা করে রক্ষা পায় ওই শিক্ষক।

ওইসব অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক শহীদুর রহমান বলেন, ‘আমাকে তো স্কুল থেকে বদলি করে চরের স্কুলে দিয়েছে। আপনার কোনো প্রশ্নের জবাব আমি দিব না বলেই ফোন বন্ধ করেন তিনি।’



মন্তব্য চালু নেই