পাকিস্তানকে হারানোর স্বপ্ন পূরণ
সেই ১৯৯৯ সাল। এরপর আর পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে কোনো জয় নেই বাংলাদেশের। এবার পাকিস্তানকে দেশে আমন্ত্রণ জানিয়ে সেই জয় খরাটা কাটালো বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা। দীর্ঘ ১৬ বছর পর ওয়ানডেতে পাকিস্তানকে হারাল টাইগাররা। হোক না প্রস্তুতি ম্যাচ! রঙিন জার্সিতে ওয়ানডে ম্যাচ তো! এটাও কম কিসের! জাতীয় দলের আদলে গড়া বিসিবি একাদশ পাকিস্তানের দেওয়া ২৬৯ রান টপকে যায় ১ উইকেট হাতে রেখে।
ফতুল্লার প্রায় পাঁচ হাজার দর্শক নিজেদেরকে ভাগ্যবান মনে করতেই পারেন। ২০১৩ সালে এই স্টেডিয়ামে নিউজিল্যান্ডকে হোয়াইটওয়াশ করেছিল বাংলাদেশ। এরপর আর কোনো আন্তর্জাতিক দলের খেলা হয়নি ফতুল্লা স্টেডিয়ামে। এবার ফতুল্লাতেই বধ পাকিস্তান। ম্যাচ জয়ের নায়ক হার্ডহিটার সাব্বির রহমান।
পাকিস্তানের পেসার আর স্পিনারদের পিটিয়ে তুলোধুনো করেছেন সাব্বির। ৪ নম্বরে ব্যাটিং করতে নেমে খেলেছেন ১২৩ রানের নজরকাড়া ইনিংস। শতরান তুলে নিতে বল খরচ করেন মাত্র ৮৪টি। এরপর করেন আরো ২৩ রান। সবমিলিয়ে ১২৩ রানের ইনিংসটি খেলতে ৯৯ বল খেলেন সাব্বির। এজন্য ৭টি চার ও ৮টি ছক্কা হাঁকান মিডল অর্ডার এই ব্যাটসম্যান।
লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ৮১ রান তুলতেই ৪ উইকেট হারায় বিসিবি। এরপর ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন সাব্বির। পঞ্চম উইকেটে ইমরুল কায়েসকে সঙ্গে নিয়ে ১২৪ রানের জুটি গড়েন। জুটিতে ৩৬ রান যোগ করেন ইমরুল। ইমরুল দেখেশুনে খেললেও সাব্বির ছিলেন আক্রমণাত্মক। নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলে সেঞ্চুরির স্বাদ নেন সাব্বির। দলীয় ২০৫ রানে এই জুটি ভাঙেন ওয়াহাব রিয়াজ। ফুললেন্থ রেলিভারিতে উইকেট হারান ইমরুল। ইমরুলের বিদায়ের পর জুনায়েদ খান পাকিস্তানকে ম্যাচে ফিরিয়ে আনেন।
সাব্বির রহমান ও শুভাগত হোমকে পরপর দুই বলে সাজঘরে ফেরত পাঠান জুনায়েদ। এরপর মুক্তার আলীকেও ফিরিয়ে দেন রাহাত আলী। দ্রুত ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বিসিবি। সেখান থেকে দলকে ম্যাচ জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যান সোহাগ গাজী। ৩৬ রান করেন সোহাগ। কিন্তু শেষ সময়ে এসে তরী ডুবান বরিশালের এই তারকা। জুনায়েদের বলে জয়ের থেকে ১০ রান দূরে থেকে আউট হন গাজী। কিন্তু ম্যাচ জয়ের শেষ কাজটুকু সাড়েন শহীদ ও তাইজুল।শহীদ ১২ ও তাইজুল ৬ রানে অপরাজিত থাকেন।
এর আগে টস জিতে আগে ব্যাট করে পাকিস্তান ৯ উইকেটে ২৬৮ রান সংগ্রহ করে। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৮৫ রান করেন মোহাম্মদ হাফিজ। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৬৭ রানে অপরাজিত থাকেন ফাওয়াদ অালম। বিসিবি একাদশের হয়ে সর্বোচ্চ ৩ উইকেট নেন শুভাগত হোম।
ব্যাট করতে নেমে পাকিস্তানকে সতর্ক সূচনা এনে দেন দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ হাফিজ ও আজহার আলী। বাংলাদেশের দুই পেসার আল-আমিন ও মোহাম্মদ শহীদকে দেখেশুনে খেলেন ডানহাতি এই দুই ব্যাটসম্যান। ইনিংসের শুরুতে দুই প্রান্ত থেকে টানা ১২ ওভার করে যান আল-আমিন ও শহীদ।
১৩তম ওভারে বোলিংয়ে প্রথম পরিবর্তন আনেন নাসির হোসেনের পরিবর্তে অধিনায়কত্ব করা মুমিনুল হক। প্রেসবক্স প্রান্ত থেকে বোলিংয়ে আসেন মুক্তার আলী। নিজের প্রথম ওভারে ১০ রান খরচ করলেও দ্বিতীয় ওভারে ব্রেক থ্রু এনে দেন মুক্তার। দলীয় ৬৬ রানে আজহার আলী মুক্তারের বল কাট করতে গিয়ে লিটনের হাতে ক্যাচ দেন। ৪৯ বলে ২৭ রান করেন আজহার।
তবে দ্বিতীয় উইকেটে আবারও দলকে সঠিক পথে এগিয়ে নিয়ে যান মোহাম্মদ হাফিজ ও হারিস সোহেল। ৬৪ রানের জুটি গড়েন এই দুই ব্যাটসম্যান। তাদের ব্যাটে চড়ে বড় সংগ্রহের পথে এগিয়ে যেতে থাকে পাকিস্তান। কিন্তু শুভাগত হোমের ঘূর্ণিতে পাকিস্তানের স্বপ্ন ভেঙে যায়।
দলীয় ১৩০ রানে হারিস হোসেলকে প্রথমে সাজঘরে ফেরত পাঠান শুভাগত। অফস্পিনারের বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে কভারে মুমিনুলের হাতে ক্যাচ দেন সোহেল (২৩)। ২৮তম ওভারে পাকিস্তান শিবিরে সবচেয়ে বড় ধাক্কাটা দেন শুভাগত। সেঞ্চুরির পথে থাকা হাফিজকে আউট করেন শুভাগত। মুক্তার আলীর হাতে ক্যাচ দেন হাফিজ। ৭৯ বলে ৯ চার ও ৩ ছক্কায় ৮৫ রান করেন প্রফেসর খ্যাত হাফিজ। নতুন ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ রিজওয়ানকেও টিকতে দেননি শুভাগত। কাট করতে গিয়ে শুভাগতের ঘূর্ণিতে পরাস্ত হয়ে বোল্ড হন রিজওয়ান।
শুভাগতের তিন উইকেটে পিছিয়ে পড়ে পাকিস্তান। এরপর দ্রুতই আরও তিন উইকেট তুলে নেয় বিসিবি একাদশ। দলীয় ১৬৮ রানে উইকেটরক্ষক সরফরাজ (৬), ১৭৩ রানে সাদ নাসিম (১), ১৮৫ রানে ওয়াহাব রিয়াজ (৭) আউট হন।
প্রস্তুতি ম্যাচ হওয়ায় ১৪ জনের স্কোয়াডের যেকোনো খেলোয়াড়কে মাঠে নামাতে পারেন টিম ম্যানেজম্যান্ট। সুযোগটি কাজে লাগিয়ে ব্যাটসম্যান আসাদ শফিককে ৯ নম্বরে ব্যাটিংয়ে নামায় পাকিস্তান। কিন্তু সফরকারী শিবিরকে হতাশ করেন ছোট্ট আসাদ শফিক। ৮ বলে ৫ রান করে সোহাগ গাজীর বলে বোল্ড হন ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান।
২০৩ রানে আসাদ শফিফকে হারানোর পর নবম উইকেটে ফাওয়াদ আলম ও ইয়াসির শাহ ২৫ রান যোগ করেন। এই জুটি ভাঙেন তাইজুল। ৯ রান করে এলবিডাব্লিউয়ের শিকার হন ইয়াসির।
একপ্রান্তে উইকেট হারাতে থাকলেও ফাওয়াদ আলম দলের রানের চাকা সচল রাখেন। নিজের স্বাভাবিক খেলা খেলে ইনিংসের শেষ পর্যন্ত অপরাজিত থাকেন ফাওয়াদ। তাইজুল ইসলামের করা ৪৯তম ওভারে প্রথম তিন বলে তিনটি বাউন্ডারি হাঁকিয়ে হাফসেঞ্চুরি তুলে নেন ফাওয়াদ। এরপর শেষ বলে আরো একটি বাউন্ডারি হাঁকান বাহাতি এই ব্যাটসম্যান। ৫৮ বলে ৯ বাউন্ডারিতে ৬৭ রান করেন ফাওয়াদ। তার সঙ্গে ১৬ রানে অপরাজিত থাকেন সাঈদ আজমল।
এই ম্যাচে বিসিবি একাদশকে নেতৃত্ব দেন মুমিনুল হক। যদিও আজ দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার কথা ছিল নাসির হোসেনের। শেষ মুহুর্তে বিসিবি একাদশের স্কোয়াডে তামিম ইকবাল আসায় নাসিরকে বিশ্রাম দিয়েছে টিম ম্যানেজম্যান্ট।
বিসিবি একাদশ স্কোয়াড : মুমিনুল হক (অধিনায়ক), ইমরুল কায়েস, রনি তালুকদার, লিটন কুমার দাস, তামিম ইকবাল, শুভাগত হোম চৌধুরী, সোহাগ গাজী, আল-আমিন হোসেন, সাব্বির রহমান, জুবায়ের হোসেন, তাইজুল ইসলাম, আবুল হাসান, মুক্তার আলী ও মোহাম্মদ শহীদ।
পাকিস্তান স্কোয়াড : আজহার আলী (অধিনায়ক), মোহাম্মদ হাফিজ, সরফরাজ আহমেদ, সামি আসলাম, সাদ নাসিম, আসাদ শফিক, ফাওয়াদ আলম, মোহাম্মদ রিজওয়ান, হারিস সোহেল, সাঈদ আজমল, ইয়াসির শাহ, ওয়াহাব রিয়াজ, এহসান আদিল ও রাহাত আলী।
গত সোমবার ঢাকায় এসে মঙ্গলবার অনুশীলন করে পাকিস্তান ক্রিকেট দল। দুটি টেস্ট, তিনটি ওয়ানডে ও একটি টি-টোয়েন্টি খেলতে বাংলাদেশ সফরে এসেছে দলটি। ১৭ এপ্রিল মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হবে প্রথম ওয়ানডে। খুলনার শেখ অাবু নাসের স্টেডিয়ামে একটি টেষ্ট ছাড়া বাকি ম্যাচগুলো অনুষ্ঠিত হবে মিরপুরে।
মন্তব্য চালু নেই