পাঁচ নম্বরেও ফ্লপ পরীমনি!

সময়ের আলোচিত চিত্রনায়িকা পরীমনি। গেল বছর প্রায় এক ডজনেরও বেশি ছবিতে চুক্তিবদ্ধ হয়ে তিনি সবার নজর কেড়েছিলেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয় হলো এখন পর্যন্ত পাঁচটি ছবি মুক্তি পেলেও একটিও ব্যবসায়িক সাফল্য পায়নি।

শাহ আলম মণ্ডল পরিচালিত আনিসুর রহমান মিলন ও জায়েদ খানের বিপরীতে ভালোবাসা সীমাহীন দিয়ে ঢাকাই ছবিতে যাত্রা শুরু করা পরী হালে পানি পেলেন না তার দ্বিতীয় ছবি পাগলা দিওয়ানাতেও। একইভাবে হোচট খেলেন শাকিবের সাথে জুটি বেঁধেও এস এ হক অলিকের আরো ভালোবাসবো তোমায় ছবিতে। আশা জাগিয়েও হতাশায় ডুবলেন বাপ্পির বিপরীতে লাভার নাম্বার ওয়ান ছবিতে। তারই ধারবাহিকতা বজায় থাকল শাহরিয়াজের সাথে দ্বিতীয় নগর মাস্তানেও।

বলে রাখা ভালো সাইমনের বিপরীতে পরীমনির প্রথম ছবি নজরুল ইসলাম খান পরিচালিত ‘রানা প্লাজা’ অনেক সম্ভাবনার স্বপ্ন দেখালেও ছবিটি রাষ্ট্রপতির আদেশে প্রদর্শনীর অযোগ্য ঘোষণা করা হয়েছে। আর পরীর প্রযোজিত প্রথম ছবি সরকারি অনুদানে নির্মিত ‘মহুয়া সুন্দরী’ সেন্সরের ছাড়পত্র পেলেও কবে মুক্তি পাবে সে বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেননি ছবিটির নির্মাতা।

তবে নগর মাস্তান নিয়েও আশাবাদি ছিলেন পরীমনি। কিন্তু রাকিবুল আলম রাকিব পরিচালিত, পরী-শহারিয়াজ ও জায়েদ-তিতান জুটির ছবিটিও মুখ থুবড়ে পড়ল। গেল শুক্রবার ২৩ অক্টোবর সারাদেশে ৯৪টি হলে মুক্তি পেয়েছে ‘নগর মাস্তান’ ছবিটি। এটি ছিলো পরীমনির অভিনীত মুক্তি পাওয়া পঞ্চম ছবি। ছবিটিকে ২৪ অক্টোবর নিজের জন্মদিন উপলক্ষে পাওয়া বিশেষ উপহার বললেও ছবিটির ব্যবসায়িক ব্যর্থতা হতাশ করেছে তাকে।

ঢাকাস্থ সৈনিক ক্লাব হলে খবর নিয়ে জানা গেছে, অশ্লীল আর খোলামেলা পোস্টারে প্রচারের জন্য প্রথম দিন ভালোই দর্শক ছিলো প্রেক্ষাগৃহে। কিন্তু ছবির দুর্বল গল্প, নির্মাণ ও তারকা নায়ক-নায়িকার অভাবে পরদিন থেকেই দর্শক শূন্য হয়ে যায় হলগুলো। যার ফলে মাথায় হাত হল মালিকদের। ছবিটির প্রযোজনা সূত্রে জানা গেছে, একই অবস্থা ঢাকার অন্যান্য হল ও ঢাকার বাইরেও।

নগর মাস্তানের ভরাডুবির পর বারবার উঠে আসছে একটাই প্রশ্ন- কেন পারছেন না পরীমনি? কীভাবে পারবেন? কার সাথে পারবেন? বাপ্পি-সাইমন তো বটেই হালের কিং খান শাকিবের বিপরীতেও মূল নায়িকা হয়ে কাজ করার সুযোগ পেয়েছেন পরী। কিন্তু নিজেকে তিনি দর্শকদের কাছে প্রতিষ্ঠিত করতে পারেননি। তার ভক্তরা ফেসবুকের ওয়ালে ঝাপিয়ে পড়লেও হলে গিয়ে সাড়া দেননি। তারকাখ্যাতি ছাড়া আর কিছুই জুটেনি তার।

স্বভাবতই নায়িকা সংকটের মুহূর্তে আশার ভেলা হয়ে আসা পরীমনির উপর আস্থা হারাচ্ছেন নির্মাতারা। সেইসাথে চলছে চুলছেড়া বিশ্লেষণ-কেন পারছেন না পরী? অনেকেই অনেক কারণ তুলে আনছেন নায়িকা হিসেবে পরীমনির সাফল্যের অন্তরায় হিসেবে। তারমধ্যে সবার আগে এসেছে তার অভিনয়ের দক্ষতার অভাব। অনেক নির্মাতারাই দাবি করছেন, দেখতে সুশ্রী এই সুন্দরী অভিনয়টা তেমন রপ্ত করে আসেননি। এবং অভিনয়কে মন থেকে ভালোবাসার অভাব রয়েছে বলেই দেড় বছরের বেশি সময় অভিনয়ের সাথে থাকলেও নিজেকে পরিণত করতে পারেননি। কারণ সেই ইচ্ছেটাই তার নেই। রবীন্দ্রনাথের সাহিত্য প্রেমী হিসেবে নিজেকে দাবি করা পরীমনি ভাবেন, খোলামেলা হয়ে পর্দায় হাজির হলেই দর্শক লুফে নিবে।

সেইসাথে অভিযোগ রয়েছে তার মধ্যে তারকাখ্যাতির অহংকারেরও। যার ফলে পরীমনির সাথে সাবলীল হতে পারেন না তার নির্মাতা ও সহশিল্পীরা। উচ্ছৃঙ্খল জীবন যাপন করেন পরীমনি এ অভিযোগও শোনা যায় চিত্রপুরীতে। শুটিং স্পটে তার আবদার মিটাতে গিয়ে নানা রকম ভোগান্তির শিকার হতে হয় নির্মাতাকে।

সেইসাথে পরীরর সমসাময়িক বেশ ক’জহন নায়কদের অভিযোগ রয়েছে শাকিব খান ছাড়া আর কোনো নায়ককে পাত্তা দিতে চান না। অশোভন আচরণ করেন তিনি তাদের সাথে। প্রযোজকদের হয়রানি করছেন আকাশ ছোয়া পারিশ্রমিক দাবি করে।

শুধু তাই নয়, নিজের বাজে স্বভাবের কারণে মিডিয়ারও সমর্থন পান না পরীমনি। সাংবাদিকদের সাথেও বেয়াদবি করে আলোচনায় এসেছেন পরীমনি। তার মধ্যে উল্লেখ করা যায়, একটি সংবাদ করা নিয়ে প্রয়াত এক বিনোদন সাংবাদিকের উপর অযথাই ক্ষেপেছিলেন পরীমনি। খুব বাজে কিছু শব্দ ব্যবহারে সেই সাংবাদিককে ইঙ্গিত করে ফেসবুকে স্ট্যাটাসও দিয়েছিলেন তিনি। তারপরও তিনি থেমে থাকেননি।

সম্প্রতি দেশের শীর্ষ স্থানীয় প্রিন্ট মিডিয়ার সিনিয়র সাংবাদিকসহ বেশ কজন অনলাইন সাংবাদিকদের সাথে তিনি রেষারেষিতে জড়িয়ে পড়েছেন। সেইসব সাংবাদিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ‘কিছু জুনিয়র সাংবাদিককে পরীমিন টাকা দিয়ে পুষছেন; যারা সারাক্ষণ নিজেদের পত্রিকায় পরীমনির বন্দনায় ব্যস্ত থাকেন। ভাবছেন তারাই তাকে নায়িকা বানিয়ে দিবে। অভিজ্ঞতার অভাবে পরী বুঝতে পারছেন এইসব শিক্ষানবীশ সাংবাদিকেরা তার নাম ও সুনাম বিক্রি করে তাকে খাটো করছে। সবসময় তোষামোদ করে তাকে আত্ম-সমালোচনা থেকে বঞ্চিত করছে। যার ফলে নিজেকে সেইভাবে মেলে ধরতে পারছেন না পরী। আর সাংবাদিকদের সাথে বেয়াদবির কারণে দূরে থাকছেন প্রচার থেকেও। কিন্ত এই ডিজিটাল যুগে ‘প্রচারই প্রসার’- এই কথা অস্বীকার করার উপায় নেই।’

তারা আরো বলেন, তোষামোদে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ায় সমালোচনা সহ্য করতে পারেন না পরীমনি। একটি ছবিও তার ব্যবসা করতে পারছে না। সেটা বলতে গেলেই পরী ক্ষেপে যাচ্ছেন। নিজের ফেসবুকে ইশারা-ইঙ্গিতে মৃত্যু কামনা করে বেড়াচ্ছেন।

তবে এ বিষয়টি অস্বীকার করেছেন পরীমনি। এফডিসিতে আলাপকালে তিনি বলেন, আমি কোনো সাংবাদিকের মৃত্যু কামনা করিনি। এটা একটা ছবির সংলাপ। তবে কোন ছবির সংলাপ সেটি জানতে চাইলে উত্তর দিতে পারেননি পরী।

এদিকে হাফ ডজন ছবি এখনো হাতে রয়েছে পরীর। তাই রয়েছে সুযোগ। চলচ্চিত্র বোদ্ধাসহ সংশ্লিষ্ট সকলেরই প্রত্যাশার- শিগগির নিজেকে প্রমাণ করবেন পরীমনি। অপু বিশ্বাস-মাহির পর তিনিই হয়ে উঠবেন ঢাকাই ছবির নতুন রানী।



মন্তব্য চালু নেই