পরিবারেও আমরা নিরাপদ নই : ড. ইউনুস

রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশানের রেস্তোরাঁয় সন্ত্রাসী হামলার পরিপ্রেক্ষিতের সন্ত্রাসীদের সামাজিক-পারিবারিক অবস্থানের কথা উল্লেখ করে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. মুহাম্মদ ইউনূস।

এ ধরনের ঘটনার মূলোৎপাটন করার আহ্বান জানিয়ে এ অর্থনীতিবিদ বলেন, ‘আমাদের পরিবারের ভেতরেও এখন আমরা নিরাপদ নই। আমার পরিবারের সদস্য কে কোন দিকে কী কাণ্ড করে ফেলতে পারে।’

‘যে ছেলে মুরগি জবাই করতে ভয় পাবার কথা, সে নির্বিঘ্নে মানুষ জবাই করছে। এই প্রক্রিয়া কীভাবে শুরু হলো তা চিহ্নিত করতে না পারলে জাতি হিসেবে আমরা দাঁড়াতে পারব না’, যোগ করেন ইউনূস।

গুলশানে হামলাকারীদের মতো আরো কত ছেলেমেয়ে এই প্রক্রিয়ায় আছে তা আমরা জানি না উল্লেখ করে পরস্পরকে দোষারোপ না করে এই অবস্থা থেকে উদ্ধার পেতে চেষ্টার আহ্বান জানান এই নোবেলজয়ী।

মঙ্গলবার সন্ধ্যায় স্যোশাল বিজনেস সেন্টার, চট্টগ্রাম আয়োজিত ইফতার মাহফিলে ড. মুহাম্মদ ইউনূস এসব কথা বলেন। অনুষ্ঠানে ইস্ট ডেল্টা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ড. মুহাম্মদ সিকান্দার খান, আমীর হুমায়ুন মাহামুদ চৌধুরী ও ফারুকে আজম বীর প্রতীক বক্তব্য দেন।

ঈদের প্রাক্কালে আজ কারো মনে আনন্দ নেই উল্লেখ করে ড. ইউনূস বলেন, ‘আমরা বাংলাদেশে কোনোদিন গুলশান ট্র্যাজেডির কথা চিন্তা করি নাই। এসব ট্যাজেডি থেকে মুক্ত হওয়ার জন্য আমাদের যা কিছু করা দরকার তাই করতে হবে। বিলম্ব করলে আমাদের পরিণতি আরো ভয়াবহ হবে।’

‘দুঃস্বপ্ন আমাদের পেছনে তাড়া করছে। এটি যে কত বড় আঘাত তা দেশের বাইরে না গেলে বুঝা কঠিন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো প্রতিদিন এসব ঘটনা প্রচার করছে। বিশ্বের আনাচে-কানাচের মানুষের কাছে বাংলাদেশের ঘটনা পৌঁছে গেছে। সিএনএনসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমগুলো এখনো বাংলাদেশ নিয়ে ননস্টপ রিপোর্ট প্রচার করে যাচ্ছে।’

ড. ইউনূস আরো বলেন, সারা বিশ্বের কাছে আমাদের এ বার্তা দিতে হবে, যে নমুনা তোমরা দেখেছ, সেটি আমাদের জাতিগত নয়। ভবিষ্যতে যাতে এসব ঘটনা আর না হয় তার জন্য আমাদের প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে।

‘সামাজিক ব্যবসার সম্মেলন স্থগিত’

চলতি মাসের ২৮ তারিখ থেকে দেশে একটি সামাজিক ব্যবসা সম্মেলন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। সেই সম্মেলন স্থগিতের কথা জানিয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, সেখানে জাপান থেকে ১০০ জন, চীন থেকে ১০০ জন, ভারত, থাইল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া থেকে প্রতিনিধি আসার কথা ছিল। কিন্তু দেশের এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতিতে আমরা সম্মেলনটি বাতিল করতে বাধ্য হলাম। শত শত বিদেশি নাগরিকের এ সম্মেলনে কার মনে কী আছে, কী দুর্ঘটনা হয়- এ ভেবে সামাজিক সম্মেলনটি স্থগিত করতে হলো।

নোবেলবিজয়ী বলেন, সম্মেলন স্থগিতের খবর শুনে বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা হতবাক হয়েছেন। কারণ তারা বাংলাদেশে আসার সব প্রস্তুতি নিয়েছেন। আমাদের সাহস হলো না বিদেশিদের উপস্থিতিতে এত বড় অনুষ্ঠান করার। এ সম্মেলন বাতিল করায় দেশের জন্য বড় রকমের একটি ধাক্কা আসল। সব নাগরিক সচেতন হয়ে না দাঁড়ালে এসব ঘটনা থেকে আমাদের রক্ষা নেই।

গত শুক্রবার রাতে রাজধানীর গুলশান-২ নম্বর সেকশনের স্প্যানিশ রেস্তোরাঁ হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। সেখানে তারা দেশি-বিদেশিদের জিম্মি করে রাখে। সন্ত্রাসীদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে রাতেই নিহত হন বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন খান এবং গোয়েন্দা বিভাগের সহকারী কমিশনার রবিউল করিম। এ ছাড়া এ সময় আহত হন অর্ধশতাধিক পুলিশ সদস্য।

পরদিন শনিবার সকালে জিম্মিদের উদ্ধারে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী। অভিযান শেষে ঢাকা সেনানিবাসে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, গুলশানের হলি আর্টিজান থেকে ২০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। তাঁদের সবাইকে গত শুক্রবার রাতেই ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয়। অভিযানে সাত সন্ত্রাসীর মধ্যে ছয়জন নিহত হয়।



মন্তব্য চালু নেই