পরমাণু যুদ্ধে নিশ্চিহ্ন হয়েছিল মঙ্গল গ্রহের জনপদ!

দীর্ঘরাত্রির পর সকালটা অদ্ভুত সুন্দর ছিল। সূর্যের আলো বায়ুমণ্ডল ভেদ করে সবে মাটিকে স্পর্শ করেছে। পাশের বাড়ির শিশুটিও ঘুম ভেঙে যাওয়ার পর মায়ের হাতের আঙুল ধরে অবাক তাকিয়ে ছিল সামনের উঠোনের দিকে। তখন উঠোনে আবার শিশুটির বড় দুই ভাই-বোন সবে খেলা শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছে। এমন এক সময় যখন চারিদিকে প্রকৃতি শান্তির জানান দিচ্ছে। ঠিক তখনই…বিকট শব্দ আর আগুনের চাদর ঢেকে ফেলে চারপাশ। মা-মাটি-শিশু-পাখি-শান্তি সব এক মুহূর্তে স্রেফ বিলীন হয়ে যায়। যতদূর দেখা যায়, কোথাও নেই কোনো প্রাণের চিহ্ন। পারমাণবিক বোমার আঘাতে কিছু সময়ের মধ্যে ধ্বংস হয়ে গেছে গোটা প্রাণীজগৎ।

পাঠক হয়তো ভাবছেন, এই দৃশ্য হলিউডের কোনো চলচ্চিত্রের। কিন্তু জানলে অবাক হবেন এটা কোনো চলচ্চিত্রের দৃশ্য নয়। বরং বিজ্ঞানীরা দাবি করছেন, আমাদের আপাত চেনা মঙ্গলগ্রহের আজকের পরিণতির কারণ পরমাণু যুদ্ধ। গ্রহের বিভিন্ন স্থানে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের চিহ্ন পাওয়া গেছে তাই নয়, কিছু কিছু স্থানে পাওয়া গেছে মানুষের চেহারাসদৃশ স্থাপত্যশৈলী।

সম্প্রতি মহাকাশ বিজ্ঞানীরা মঙ্গলগ্রহের কিছু ছবি গণমাধ্যমে প্রকাশ করেছেন। যে ছবিগুলো দিয়ে বিজ্ঞানীরা প্রমাণ করার চেষ্টা করছেন যে পরমাণু যুদ্ধের কারণেই মঙ্গলগ্রহ আজকের পরিণতি পেয়েছে। যদিও অনেকেই মহাকাশ বিজ্ঞানীদের এই দাবিকে নতুন ‘ষড়যন্ত্র তত্ত্ব’ বলে উড়িয়ে দিচ্ছেন।

কিন্তু ভারতীয় স্যাটেলাইট থেকে তোলা ছবিগুলো দেখলে আমরা প্রায় আড়াই হাজার মাইল দীর্ঘ একটি ক্যানিয়ন (খাদ) দেখতে পাই মঙ্গলগ্রহে। ভারতীয় গবেষকদের পাশাপাশি ফ্রান্সের ইউটিউব চ্যানেল ‘ইউএফও ডিসক্লোজার’ একটি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র তৈরি করেছে ‘ক্লাউড অব স্মোক’ নামে, যেখানে তারা জোরালো ভাবে মঙ্গলগ্রহে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের পক্ষে যুক্তি ও প্রমাণ তুলে ধরেছেন। পারমাণবিক বিস্ফোরণ পরবর্তী সময়ে বায়ুমণ্ডলে যে অতিরিক্ত মিথেন থাকে, তা বর্তমানে মঙ্গলে বর্তমান।
ANCIENTঅস্ট্রেলিয়ার সাউদার্ন কুইন্সল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. জন্টি হর্নার একটি গণমাধ্যমকে বলেন, ‘মজার বিষয় হলো মঙ্গলগ্রহে পারমাণবিক যুদ্ধ হয়েছিল বলে যে তথ্য উপাত্ত দেখানো হচ্ছে তার বিরুদ্ধে কথা বলার মতো উপাত্ত আমাদের হাতে নেই। স্যাটেলাইটে তোলা ছবিতে যে মেঘ দেখাচ্ছে তা ছবি তোলার কাজে ব্যবহৃত লেন্সের ভ্রমও হতে পারে।’

তবে গত বছর প্লাজমা বিশেষজ্ঞ ড. জন ব্রান্ডেনবার্গ বলেছিলেন, ‘আদিম মঙ্গলগ্রহবাসীরা মূলত সাইডোনিয়ান নামে পরিচিত ছিল। তারা বড়সড় কোনো আক্রমণে নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। তার কিছু প্রমাণও আমাদের কাছে ইতোমধ্যে চলে এসেছে। বাকিটা সময়েই পরিষ্কার হয়ে যাবে।’

ড. ব্রান্ডেনবার্গের কথা যদি সত্যি হয়, তাহলে সম্প্রতি পাওয়া ছবিগুলো তার গত বছরে তার বলা বক্তব্যের পক্ষে জোরালো প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপিত হবে। ২০০১ সালের দিকে সর্বপ্রথম বিজ্ঞানীরা মঙ্গলগ্রহে কৃত্রিম উপায়ে সংঘটিত বিস্ফোরণের কথা বলেন। মঙ্গলগ্রহের বায়ুমণ্ডলে যে পরিমাণ তেজস্ক্রিয় পদার্থ পাওয়া যাচ্ছে তাতে পরমাণু বিস্ফোরণকেই এগিয়ে রাখছেন বিজ্ঞানীরা। কারণ ইউরেনিয়াম, থোরিয়াম এবং তেজস্ক্রিয় পটাসিয়াম কেবল পরমাণু বিস্ফোরণের ফলেই বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে যেতে পারে।

১৬বিশ্বের নামকরা মহাকাশবিজ্ঞান সংস্থাগুলো সদ্যপ্রাপ্ত ছবি নিয়ে ইতোমধ্যেই গবেষণায় বসে গেছেন। সব তথ্য উপাত্ত পর্যালোচনা এবং বিশ্লেষণের মাধ্যমে তারা নিরেট প্রমাণের কাছাকাছি যেতে চেষ্টা করছেন।

মঙ্গলগ্রহে পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের বিষয়টি প্রমাণ হোক বা নাই হোক, পরমাণু বোমার কারণে যে আমাদের এই পৃথিবী নামক গ্রহ থেকে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে তা পরিষ্কার। পৃথিবীর ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর কাছে থাকা পরমাণু বোমাগুলোকে অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই। হিরোশিমা-নাগাসাকির বিস্ফোরণ পরবর্তী অবস্থা আমাদের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেয় মৃত্যু বিভীষিকাময় পরিস্থিতির। এই পৃথিবীর প্রতিটি শিশু জন্মায় পরমাণু বোমায় নিহত হওয়ার ঝুঁকি নিয়ে। আমরা কেউই জানি না, ঠিক কবে এই ঝুঁকি থেকে মানুষ মুক্তি পাবে।



মন্তব্য চালু নেই