খালেদার জিয়ার বাণী
পথে-ঘাটে শুধু লাশের মিছিল
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া বাণী দিয়েছেন। এতে তিনি দলের ইতিহাস তুলে ধরার পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন নির্যাতন ও নিপীড়নের চিত্রের কথা উল্লেখ করেছেন। সেই সঙ্গে প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী, শুভানুধ্যায়ী এবং দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানান।
বাণীতে বিএনপি চেয়ারপারসন বলেন, ‘আজকের দিনটি আমাদের সবার জন্য আনন্দ ও প্রেরণার। ১৯৭৮ সালের এই দিনে মহান স্বাধীনতার ঘোষক শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল বিএনপি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন। বাকশালী একদলীয় দুঃশাসনের জের ধরে সে সময় দেশে বিরাজমান চরম জাতীয় সঙ্কটের কারণে যে রাজনৈতিক শূন্যতা সৃষ্টি হয়েছিল তা পূরণ করতে বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনর্প্রবর্তন এবং এর ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাতে গড়া বিএনপি বিগত ৩৬ বছরে বার বার সকলের অংশগ্রহণমূলক জনগণের ভোটে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়েছে এবং দেশ ও জনগণের সমৃদ্ধি ও কল্যাণে কাজ করে গেছে। দেশের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্ব রক্ষায় আমাদের এই প্রিয় দল অতন্দ্র প্রহরীর ভূমিকা পালন করেছে।’
তিনি বলেন, ‘৯ বছরের স্বৈরাচার বিরোধী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের আন্দোলনেও বিএনপি রাজপথে আপোসহীন অগ্রণী ভূমিকা পালন করে স্বৈরাচারের পতন ঘটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে। বাংলাদেশে গণতন্ত্রকে শক্তিশালী ও প্রাতিষ্ঠানিক রুপ দেয়ার লক্ষ্যে বিএনপি ১৯৯১ সালে ক্ষমতায় থাকাকালে সাংবিধানিক সংশোধনীর মাধ্যমে সংসদীয় গণতন্ত্র পুনর্প্রবর্তন করেছে। সামগ্রিকভাবে বাংলাদেশে বহুদলীয় গণতন্ত্রের চর্চা ও বিকাশসহ দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় বিএনপির বলিষ্ঠ ভূমিকা জনগণ কর্তৃক সমাদৃত হয়েছে। এই কারণেই বিএনপি দেশবাসীর কাছে এখন সর্বাধিক জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। জনগণের আস্থা ও বিশ্বাস অক্ষুণ্ণ রেখে দেশ ও জনগণের সেবায় বিএনপি আগামী দিনগুলোতেও বলিষ্ঠ ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে ইনশাআল্লাহ।’
সরকারের সমালোচনা করে বেগম খালেদা জিয়া বলেন, ‘আজ দেশে স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে। ৫ জানুয়ারির তামাশার নির্বাচনের পর গণতন্ত্র এখন মৃতপ্রায়। দেশবিরোধী নানা চুক্তি ও কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে বর্তমান সরকার জাতীয় স্বার্থকে জলাঞ্জলি দিয়ে চলেছে। দেশে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভয়াবহ রুপ ধারণ করেছে। দেশব্যাপী পথে-ঘাটে শুধু লাশের মিছিল। বিদ্যুৎ-গ্যাস-পানি নিয়ে হাহাকার চারদিকে। দ্রব্যমূল্যের লাগামহীন ঊর্ধ্বগতিতে সাধারণ মানুষের নাভিশ্বাস উঠেছে। দেশজুড়ে গণহত্যা. গুম, গুপ্তহত্যা, সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, নিপীড়ন ও নির্যাতনের মহোৎসব চলছে। বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ভূলুণ্ঠিত করার জন্য নির্লজ্জ দলীয়করণের চূড়ান্ত রুপ দিতে বিচারকদের অভিশংসনের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের কছে ন্যস্ত করার আইন প্রণয়ন করা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রীকে রাষ্ট্রের সকল প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বে নিরঙ্কুশ ক্ষমতার অধিকারী করার জন্যই এই আইন পাসের তোড়জোড় চলছে। এটি পাস হলে নিপীড়িত মানুষের আইনি প্রতিকার পাওয়ার শেষ ভরসাটুকুও বন্ধ হয়ে যাবে।’
বেগম জিয়া বলেন, ‘জনপ্রশাসন আজ্ঞাবহ হওয়ার কারণেই স্থবির হয়ে পড়েছে। যাতে জনমতের প্রতিফলন না ঘটে সে জন্য গণমাধ্যমের কণ্ঠ রুদ্ধ করতে জাতীয় সম্প্রচার নীতি প্রণয়ন করা হচ্ছে। এটি হবে মূলত এই অবৈধ সরকার কর্তৃক মানুষের বাক, ব্যক্তি ও চিন্তার স্বাধীনতাকেই অপহরণ করা। এই গণবিরোধী নীতি প্রতিরোধ করার জন্য আমি দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মী এবং দেশবাসীকে আন্দোলন সংগ্রামের সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণের উদ্বাত্ত আহ্বান জানাচ্ছি। এই শ্বাসরুদ্ধকর পরিস্থিতিতে আমরা হাত গুটিয়ে বসে থাকতে পারি না।’
তিনি বলেন, ‘জনগণের অধিকার আদায়ে তাদের দুঃখ-কষ্ট লাঘবে এবং দেশের স্বাধীনতা সার্বভৌমত্ব রক্ষা ও বহুদলীয় গণতন্ত্রের ধারা আবারও পুনঃপ্রতিষ্ঠার জন্য বিএনপি জনগণকে সঙ্গে নিয়ে আন্দোলন সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে। তাই আমাদের আন্দোলন এখন জনগণের হারানো ভোটাধিকার ও তাদের মর্যাদা প্রতিষ্ঠার জন্য। এই আন্দোলনের মূল লক্ষ্যই হচ্ছে গায়ের জোরে বাতিল করা নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহাল করে সকলের অংশগ্রহণের মাধ্যমে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান নিশ্চিত করা।’
এদিকে অনুরুপভাবে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরও বিএনপির ৩৬তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন।
মন্তব্য চালু নেই